বিজয়ের জন্যে দিয়েছি আমি আমার প্রাণ,
বিজয়ের জন্যে দিয়েছে মা তাঁর সম্ভ্রম,
বিজয় আসবে নিশ্চিত জানি,
বিজয়ের জন্যে আমার ভাই দিয়েছে তার পৌরুষের সম্মান।
বিজয় দেখবে বলে আমার বাবা দিয়েছে তার চোখ,
বিজয় অনুভব করবে বলে পাশের বাড়ির অনিল কাকা দিয়েছে দু’হাত তার,
বিজয় আসবে নিশ্চিত জানি,
বিজয়, সে যে নয় শুধু আমার, তা সবার।
বিজয়ের জন্যে মালতী হয়েছে বাকরুদ্ধ,
বিজয়ের জন্যে সদ্য বিবাহিত পারুল পড়েছে বিধবা বরণ,
বিজয় আসবে নিশ্চিত জানি,
বিজয় হলে বাংলাদেশ, সবাইকে করবে স্মরণ।
বিজয়ের জন্যে টগবগে তরুণ ইলিয়াস, ওমর ঝাঁপ দিয়েছে যুদ্ধে,
বিজয়ের জন্যে শ্যামল দত্ত হয়েছে ভিটে হারা, হয়েছে দেশছাড়া,
বিজয় আসবে নিশ্চিত জানি,
বিজয়ের জন্যে জীবন নিয়ে ছোটাছুটি করা চট্টগ্রামের বিলপুর গ্রামবাসীর
এখন শুধুই অপেক্ষা করা।
বিজয়ের জন্যে ক্রন্দনরত শিশুর কান্না থামাতে গিয়ে মা হয়েছে সন্তানহারা,
বিজয়ের জন্যে আদিবাসী তাতিন্দ্রলাল চাকমা ছুটে গিয়েছে স্ত্রী-সন্তান ফেলে,
বিজয় আসবে নিশ্চিত জানি,
বিজয়ের জন্যে শান্তিকমিটিতে যোগদানকারী মতিন উদ্দিনের ছেলে-
আকরাম মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়, পালিয়ে ঘর-সংসার ফেলে।
বিজয়ের জন্যে মজু পাগলা বুকে নিয়েছে পাকিস্তানিদের গুলি,
বিজয়ের জন্যে সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলেছে সাগরিকা রায়,
বিজয়ের জন্যে সর্বস্ব হারিয়ে বিবাগী হয়েছে বৃদ্ধ কুন্তল সেন,
বিজয় আসবে নিশ্চিত জানি,
বিজয়ের জন্যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে হারিয়ে গিয়েছে বাদল, মুস্তাফিজ সহ
বিলপুর গ্রামের অন্ধ বয়োজ্যেষ্ঠ শচীন বাবুর ছেলে কালু সেন।
বিজয়, সে তো আসে না। তাকে আয়োজনে আমন্ত্রণ জানাতে হয়,
বিজয়ের জন্যে দেশের মেধাবী বুদ্ধিজীবীদেরও অকালে প্রাণ দিতে হয়।
এতো ত্যাগ-তিতিক্ষা, বিসর্জন, সংগ্রামের পরে, যে দেশের জন্যে এই বিজয়,
সে দেশ সোনার খনি, সবুজ-শস্য শ্যামলায় ঘেরা, নদীমাতৃক "বাংলাদেশ" ।।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩