গতকাল আমার এক ঘনিষ্ঠ পরিচিত (বন্ধু না) আমাকে বললো, কি ব্লগ লিখো তোমরা। ব্লগে তো শুনেছি সারাদিন গালাগালি, ঝগড়াঝাটি, ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে আজেবাজে কথাই লেখা হয়। আমার প্রচন্ড রাগ হলো। আমি বললাম, তুমি ব্লগ সম্পর্কে কি জানো? না জেনেই ফাজিলের মতো একটা কথা বলে দিলেই হলো!! এবারের বই মেলায় ব্লগারদের কতোগুলো বই বের হয়েছে সে সম্পর্কে কোন ধারনা আছে তোমার? তারপর তক্ষুনি মোবাইল বের করলাম তাকে দেখানোর জন্য। দুঃখের বিষয়, অল্প কয়েকটা বই-ই খুজে পেলাম। দেখে তার বাকা হাসি, তোমাদের লাখ লাখ ব্লগার, আর মাত্র এই কয়েকটা বই!!!
আমি জানি বই আরো অনেক অনেক বেশী, কিন্তু ব্যাটাকে দেখাতে পারলাম কই?
মহান একুশের বইমেলা একটি মিলনমেলা। লেখক, প্রকাশক এবং সর্বোপরি পাঠকরা সারা বছর তাকিয়ে থাকে এই মেলার দিকে। এই একটি মাসকে ঘিরে সবাই সারা বছর ধরে বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ঠিক যেমনিভাবে বছরে দুই ঈদকে উপলক্ষ্য করে মিডিয়াপাড়ায় সমস্ত বছর ধরেই একটা প্রস্তুতির আয়োজন থাকে।
বর্তমান যুগ হচ্ছে বানিজ্যের যুগ। বিজ্ঞাপন ছাড়া আজকাল কিছু বিক্রি হয় না। ব্লগারগন যদি টাকা-পয়সা খরচ করে তাদের প্রকাশিত বই বিক্রিই না করতে পারে তাহলে তারা নতুন কিছু লিখতে উৎসাহী কেন হবে? প্রকাশকরাই বা কোন যুক্তিতে তাদের বই প্রকাশ করবে?
বিভিন্ন সময়ে ছাড়া ছাড়া ভাবে ব্লগারদের বই এর পোষ্ট এসেছে। অন্যান্য পোষ্টের কারনে সেগুলো আস্তে আস্তে দৃষ্টির বাইরে চলেও গিয়েছে। একজন আগ্রহীর ক্ষেত্রে সেগুলো খুজে খুজে বের করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। এখন কেউ যদি মেলায় যাওয়ার আগে চিন্তা করে যে, মেলায় গিয়ে ব্লগারদের কিছু বই কিনবে; তাহলে সংরক্ষিত স্মৃতি থেকে সে কয়টা বই এর নাম বের করতে পারবে?
আমাদের এই ব্লগে পদচারণা শুধু ব্লগারদেরই না। প্রচুর ভিজিটরও আসেন এখানে। তারা বিভিন্ন ব্লগারদের লেখা পড়েন। তাদেরও পছন্দের ব্লগার আছে, নিশ্চয়ই আছে। নীরব ভোটারদের মতো তারা হলেন 'নীরব ব্লগার'। এখন কেউ যদি ভাবেন, মেলায় যেহেতু যাচ্ছি, দেখি তো ব্লগারদের কি কি বই এসেছে? এই ভাবনা থেকে ব্লগে এসে তারা কি পাবেন? সমূহ সম্ভাবনা আছে, কিছুই না পাওয়ার।
কাজেই এই পুরো ফেব্রুয়ারী মাসজুড়ে একটা স্টিকি পোষ্ট যদি থাকে যেটাতে ক্রমানুসারে প্রতিটা ব্লগারের বই, বই এর একটা সিনোপসিস এবং সম্ভব হলে ব্লগারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, কোন স্টলে বইটা পাওয়া যাবে, ইত্যাদি তথ্য থাকে, তাহলে আগ্রহীরা তাদের ক্রয়ের একটা তালিকা করতে পারে। এটা সময়ে সময়ে আপডেট হতে থাকবে। তাছাড়া, এইরকমের স্টিকি পোষ্ট যদি প্রতিবছরই একটা করে থাকে, তাহলে বছরওয়ারী একটা রেকর্ডও থাকে ব্লগারদের বই এর; যেটা যে কোনও সময়ে কাজে লাগবে।
প্রচার ছাড়া প্রসার সম্ভব না। ব্লগাররা কেউই প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ কিংবা ইমদাদুল হক মিলনের মতো প্রথিতযশা সাহিত্যিক না যে সারা দেশের মানুষ তাদেরকে এক নামে চিনবে বা মেলায় গিয়ে তাদের বই খুজে খুজে বের করে কিনবে। সব কিছুরই একটা শুরু থাকে। প্রথমতঃ আমরা, ব্লগাররা তাদেরকে চিনি। দ্বিতীয়তঃ ব্লগে যেসব অতিথি পাঠক আসেন, তারা তাদের চিনেন। এই দুই গ্রুপের মাধ্যমেই আস্তে আস্তে একদিন সারা দেশের মানুষ তাদেরকে চিনবে।
ব্লগ সম্পর্কে এখনও মানুষের অনেক ভূল ধারনা আছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের মানুষও জানবে ব্লগের, ব্লগারদের সাহিত্য মান সম্পর্কে। তারা জানবে, ব্লগ সম্পর্কে তাদের প্রচলিত ধারনা সত্যি নয়। এখানেও অনেক উচুমানের সাহিত্য রচিত হয়, দারুন দারুন সব কবি কিংবা গল্পকার এখানেও আছে। আর এদের মধ্য থেকেই একদিন বেরিয়ে আসবে ভবিষ্যতের হুমায়ুন আহমেদ, মহাদেব সাহা কিংবা সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো হীরার টুকরা।
তবেই না ব্লগের, সামুর সার্থকতা!!!
ছবিঃ ইন্টারনেট।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৪২