আমাদের ব্লগে একজন আউলিয়া আছেন।
আমার কথায় আবার কেউ কেউ বিভ্রান্ত হয়ে ভাবতে পারেন, বাংলাদেশে যুগে যুগে অনেক আউলিয়া এসেছেন, একটা সময় পরে সবাই গত হয়েছেন। তারপরে অনেক বছর কেটে গিয়েছে, আর কোন আউলিয়া'র দেখা আমরা আর পাই নাই। সেখানে এটা কেমন ভূয়া কথা? দেশে এখন হুজুরদের যুগ চলছে। ''ব্লগে একজন হুজুর আছে'' বললে না হয় মানা যেত!! কিন্তু আউলিয়া…...নৈব নৈব চ!!
আপনারা যা ভাবছেন, বিষয়টা সে'রকম না। একটু ব্যাখ্যা করি। এই আউলিয়া অর্থ আল্লাহ'র পেয়ারা বান্দা না। এই আউলিয়া হলো সেই ব্যক্তি যে অন্যের মাথা আউলিয়ে দেয়, অর্থাৎ আউলা-ঝাউলা করে দেয়। যে অন্যের মাথা আউলায়, সে আউলিয়া; সোজা হিসাব। এটা একটা খাটি বাংলা শব্দ। এটাকে আরবী আউলিয়া'র সাথে গুলানো ঠিক হবে না। পার্থক্য অনেকটা বাংলা আর হিন্দীতে 'বাল' এর মতোন। ব্লগে এমন অনেকেই আছেন, যারা এই ব্যক্তির বক্তব্যে ''সহমত'' বলে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ঠিক বিপরীতধর্মী আরেকটা বক্তব্যে গিয়েও আচানক ''সহমত'' বলে বসেন। তারপর আউলানো মাথা নিয়ে তব্দা মেরে বসে থাকেন, আর ভাবেন.....ঘটনাটা কেমন হলো? আমি এমন অন্ততঃ দুইজনের নাম বলতে পারি, কিন্তু সঙ্গত কারনেই বলছি না।
আপনি এই আউলিয়াকে একটা প্রশ্ন যদি করেন, উত্তর অবশ্যই পাবেন। তবে সেই উত্তর পড়ে হয় আপনার মাথা পুরাই আউলায়ে যাবে; নয়তো ভাববেন, আমি জিগাইলাম কি…….আর আমার সারিন্দায় কইলো কি? একটা কেচোকে যদি আপনি একটা কাঠি দিয়ে খোচা দেন, সে ডাইনেও যাবে না, বায়েও যাবে না। জায়গায় মোচড়াইতে থাকবে। তেমনিভাবে, এনাকে আপনি কোন প্রশ্ন দিয়ে যদি খোচা দেন; উনিও ডাইনে-বামে কোথাও যাবেন না, খাড়ার উপরে মোচড়ানো শুরু করবেন। ফলাফল.….হয় আপনি আউলানো মাথা নিয়ে সরে যাবেন, নয়তো আপনিও বেদিশা হয়ে মোচড়া-মুচড়ি করবেন।
ইদানীং উনি যেখানেই প্যালেস্টাইন সংক্রান্ত কোন পোষ্ট দেখেন, সেখানে গিয়ে মোচড়াইতে থাকেন…..হামাস ক্যান রকেট মারে..…..হামাস ক্যান রকেট মারে!!! আরে বেকুব, হামাস ক্যান রকেট মারে আপনে জানেন না? আসমান থিকা দুইন্যায় কি মাত্র অবতীর্ণ হইলেন ? দুগ্ধপোষ্য শিশু? হাড়-হাড্ডি পাইকা তামা তামা হয়া গেল, আর এই সহজ বিষয়টা বুঝেন না!!!
উনি আরো বলবেন, হামাসের রকেটে ইজরায়েলের নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই হামাসের এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ঠিক না। সাথে যুক্ত করবেন, হামাসের রকেট হামলার জবাবে ইজরায়েল ফিলিস্তিন ভু-খন্ডে হামলা করতে বাধ্য হচ্ছে, ফলে সেখানেও নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে, এর দায় হামাস এড়াতে পারে না। এই ধরনের বক্তব্যকে বলে দু‘ধারী করাত, যেইটা আইতেও কাটে, যাইতেও কাটে।
এইবার তাহলে কিছু কথা বলি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিদের উপর হামলা করলে তারা প্রতিশোধস্বরুপ গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতো, নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে হত্যা করতো। এখন কেউ যদি যুক্তি দেখান যে, পাকিদের এই কর্মকান্ডের দায়ভার মুক্তিযোদ্ধাদের, কারন তাদের ক্রিয়াকর্মের কারনেই সাধারন মানুষের এই দুঃসহ পরিণতি…...তাহলে কেমন শোনায়? এই আউলিয়া নাকি আবার মুক্তিযোদ্ধাও ছিল। কোন কথা হলো এটা? এক সময়ে মহান আম্রিকা ভিয়েতনামে মাইলের পর মাইল নাপাম আর ক্লাস্টার বোমা মেরে মাটি পর্যন্ত জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিয়েছিল। মিথ্যা অজুহাতে ইরাক নামের একটা দেশ ধ্বংশ করে দিয়েছিল.......সেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কিন্তু টু শব্দও কখনও করতে দেখি না। টু শব্দ তো দুরের কথা, উনি আম্রিকাকে সন্ত্রাসী বলতেও নারাজ। সেইটারও মোক্ষম কোন যু্ক্তি তেনার কাছে নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু তিক্ত সত্য হলো, মহান আম্রিকা শুধু সন্ত্রাসী না, আধুনিক সন্ত্রাসবাদের জনক! প্রচুর উদাহরন আপনাদের চোখের সামনেই আছে; যে দেখতে পায় না, সে আন্ধা! এনার সাজেশান অনুযায়ী কেউ যদি আপনার বাড়ি দখল করে, আপনার নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত সেই দখলকারীকে কোলে বসিয়ে দোল দেয়া আর চুমু খাওয়া। চুুমু খাবেন আর বলবেন, না না, বাবুসোনা কান্না করে না। বাড়ি তো নিছো, আর কি চাই বলো…….চাইলে তোমার বাসায় এসে কামলা খাটি!! এহেন উপদেশদাতাকেও আপনার কোলে বসিয়ে চুম্বন করা উচিত, কি বলেন? আন্ধা-কানুন কিন্তু এরেই বলে!!
আচ্ছা, তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম যে আজ, এই মূহুর্ত থেকে প্যালেস্টাইনীরা সব ধরনের হামলা বন্ধ করে দিল। তাতে কি ঘটবে? ''অতঃপর তাহারা একত্রে সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল'' ঘটবে? না, তা ঘটবে না। বরং বর্বর ইজরায়েল পূর্ণ উদ্যোমে সুখে-শান্তিতে তাদের বসতি-স্থাপন কর্মসূচী চালিয়ে যাবে। সত্যি বলতে, তারা তাদের বসতি স্থাপন এবং সম্প্রসারনের কাজ কখনও বন্ধই করে নাই। বিভিন্ন সময়ে এর গতির হ্রাস-বৃদ্ধি করেছে মাত্র। হ্রাসের কথা যদি বলি; সেই হ্রাসের কারন ছিল প্যালেস্টাইনীদের ইন্তিফাদাসহ বিভিন্ন প্রতিরোধ আন্দোলন। নয়তো এতোদিনে সেখানে প্যালেস্টাইনীদের চিহ্নও থাকতো না।
মা কালীর মতোন এনারও বাহন আছে। ব্লগে উনি সাধারনতঃ পেচা নয়তো গাধার পিঠে চড়ে আগমন করেন। অত্যন্ত যুৎসই বাহনই বটে। একেবারে খাপে খাপ। তারপরেও ধারনা করি, এই বাহনদ্বয় আন্ধা অথবা বয়রা। নতুবা গা ঝাড়া দিয়ে এই আপদকে কবেই পিঠ থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতো! আরে! আরেকটা প্রাণীর কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম! বাদুর!! চরিত্রগত প্রচুর মিল দু'জনার, ঠিক যেন তামাক আর ফিল্টার!!! বাদুরের মতোন উল্টা ঝুলে থাকার কারনে উনি কিন্তু কোন কিছুই সোজাভাবে দেখেন না, উল্টাভাবে দেখেন। উল্টাভাবে দেখে উল্টা-পাল্টা মন্তব্য করে ব্লগারদের মাথা আউলান। আচ্ছা, তাহলে একটা উদাহরন দেই।
গতকাল এক ব্লগার একটা পোষ্ট দিয়েছিলেন…...ফিলিস্তিনীদেরকে অর্থ-সাহায্য প্রেরণ সংক্রান্ত। উনি সেখানে মন্তব্য করেন, ''আপনার টাকাগুলো শিবিরকে দেন, ওরা রগকাটার যন্ত্র কিনুক।'' এখন মনে করেন, এই মন্তব্য পড়ে আপনার মস্তিস্কে স্থাপিত প্রসেসর কাজ করা শুরু করলো। আপনি ভাবলেন, প্রচলিত ধারনায় রগ কাটা হয় ক্ষুর দিয়ে। এটা তো যন্ত্র বা মেশিনের সংজ্ঞাতে পরে না। তাহলে উনি কোন মেশিনের কথা বললেন? আপনার মাথা আউলানোর এটা সূত্রপাত। আপনি আরো ভাবলেন, শিবির একটা দেশী সংগঠন আর হামাস বিদেশী। শিবিরকে দিলে দেশের টাকা দেশেই থাকে, এটা একটা ভালো দিক। কিন্তু শিবিরতো এই টাকা দিয়ে দুই নাম্বারী করবে। ওদিকে আমার উদ্দেশ্য হলো, ফিলিস্তিন জনগনকে সাহায্য করা, শিবিরকে দিলে তো সেই উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না; তাহলে এখন করণীয় কি? এমনিভাবে সাত-পাচ ভাবতে ভাবতে এই পর্যায়ে দেখবেন, আপনার মাথা দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে……এর মানে হলো, আপনার প্রসেসর আর লোড নিতে পারছে না; সিস্টেম ক্র্যাশ করার সমূহ সম্ভাবনা!! কাজেই আপনি ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ভাবলেন, ধুরবাল! কাউরেই সাহায্য করনের দরকার নাই। আমার ট্যাকা আমার কাছেই থাক!!! আশা করি, পুরো বিষয়টা বোঝাতে পেরেছি।
এই আউলিয়ার একটা কৌশলগত সুবিধা হলো, অফুরন্ত সময়। সারাদিন ব্লগে পরে থেকে উনি প্যাচাপ্যাচি খেলতে পারেন। কিন্তু আর কার এতো সময় আছে? কাজেই এক পর্যায়ে রণে ভঙ্গ দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। আফসোস!!
যাই হোক, এতোক্ষণ ধরে যা বললাম, এক কান দিয়ে ঢুকায়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিবেন দয়া করে। মনে রাখবেন, উনি কিন্তু অত্যন্ত গন্যমান্য একজন ব্যক্তি এবং সম্পর্কে আমার বড়ভাই। আর কে না জানে, আমার বড়ভাইয়ের কোন বেইজ্জতি আমি একেবারেই সহ্য করতে পারি না। আমি ইদানীং খুবই ব্যস্ত আছি একটা গবেষণার কাজে। সেটা হলো, নিউইয়র্কে কিভাবে কাঠাল গাছের চাষ করা যায়। ফলে, ব্লগে বেশী সময় দিতে পারি না। আপনাদের কারো যদি উনার ইজ্জত নিয়ে টানাটানিরত কোন অর্বাচীণ নজরে আসে, দয়া করে আমাকে একটু খবর দিবেন। আমি তুরন্ত এসে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।

সম্পূর্ণ বিষয়টা অনুধাবন করার জন্য সবাইকে অগ্রীম এবং আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই। সবাই ভালো থাকবেন আর রকেট হামলা…...থুক্কু..…..করোনা হামলা থেকে সুরক্ষিত থাকবেন!!!!
ফটো ফ্রম ওয়ান এন্ড অনলি…….গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২১ দুপুর ১২:১৬