বান্দরের হাতে বন্দুক দিলে কি হয় বা হতে পারে, সেটা তো আমরা সবাই জানি। তেমনি কিছু চোর-বাটপার, আবাল, দেশপ্রেমহীন মানুষের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা গেলে কি হয়, সেটাও আমরা সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তবে, ডরায়েন না। আমি দেশের রাজনীতি নিয়ে সেই পুরানো বুলি কপচানোর জন্য পোষ্ট ফাদি নাই। এই বিষয়টা নিয়ে আমি এতোটাই হতাশ যে, পারতপক্ষে এটা নিয়ে কথা বলতে আমার রুচি হয় না। এই পোষ্ট ফেদে বসেছি বাংলাদেশের ক্রিকেট তথা বিসিবি নিয়ে দু'চারটা কথা বলার জন্য।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ দোড়গোড়ায়। বিসিবি'র কর্মকান্ডে সেটা অবশ্য টের পাওয়ার কোন উপায় নাই। তাদের ফোকাস ক্রিকেট খেলায় না, তাদের সব মনোযোগ হলো দেশের চিরাচরিত রাজনীতির খেলার সাথে মিল রেখে আঙ্গুল চালাচালির খেলায়। দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মতো বিসিবিতেও বহুবিধ দল। পাপন, পরিচালকবৃন্দ, নির্বাচকত্রয়, সাকিব, হাতুরু……...সবাই একেকটা দল। তাদের লক্ষ্য কিন্তু এক এবং অভিন্ন না; প্রত্যেকের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। তবে তার কোনটাই দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত না। অন্ততঃ তাদের কর্মকান্ড সেই ইঙ্গিত দেয়।
ক্রিকেট বিশ্বের চতুর্থ ধনী ক্রিকেট বোর্ড হলো বিসিবি। তবে, অব্যবস্থাপনা, দৃশ্য-অদৃশ্য বিভিন্ন তালেবরের উপস্থিতি আর সমন্বয়হীনতার দিক দিয়ে বরাবরের মতোই সম্ভবতঃ সমগ্র বিশ্বে উচ্চাসনে সমাসীন।
আজকাল একজন শিশুও জানে যে, বিশ্বকাপের মতো শীর্ষস্থানীয় টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় বহু আগে থেকে; আমার মতে, কমপক্ষে এক বছর আগে থেকে। কিন্তু আফসোস, এটা জানে না বিসিবি'র বুইড়া ছাগলগুলো (ছাগল বললাম, কারন বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কর্মকান্ড ছাগলের মতোই)। এই ক'দিন আগেও তাদের দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নাটক, সমন্বয়হীনতা, পাবলিকলি কথাবার্তা……….সবকিছুই না তাদের পোষ্ট পজিশানের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ, না তাদের পরিপক্কতার পরিচায়ক!!
বিসিবি'র উচিত ছিল, অন্ততঃ এক বছর আগে ৩৩ জনের (প্রতিটা পজিশানের জন্য ৩জন করে) একটা প্রাথমিক দল ঘোষণা করা, আর সেটা করা উচিত ছিল তাদের ওয়ানডে ফর্ম্যাটের ট্র্যাক রেকর্ড মাথায় রেখে। কিন্তু না, বিসিবি তার আশেপাশে দিয়েও হাটে নাই। এই নিয়ে যতো ধরনের নাটক করা সম্ভব, তারা করেছে। যতো ধরনের কনফিউশান আর তিক্ততা তৈরী করা সম্ভব, তারা করেছে। কোন কিছুরই কমতি রাখে নাই। কয়েকটা তথাকথিত দল আর তাদের ক্রিয়াকর্মের কিছু উদাহরন দেই।
প্রসঙ্গ রিয়াদঃ ব্যাটিংয়ে ৭ নং পজিশানে তার বিকল্প এখনও নাই। প্রয়োজনে কয়েক ওভার বলও সে করতে পারে। প্রথমে বলা হলো, তার বিশ্রামের কথা। তারপরে একবার ফিটনেসের ঘাটতির কথা তো আরেকবার বয়সের কথা; এসব বলে তাকে খেলানোই হলো না। আবার বলা হলো, সে খেলার মধ্যে নাই। বুঝেন অবস্থা। ছাগলগুলো তো তাকে গত ছয় মাস ধরে খেলাচ্ছেই না, সে খেলার মধ্যে থাকবে কিভাবে? শেষ পর্যন্ত সমালোচনার তোড়ে তাকে স্কোয়াডে রাখা হলো। এখন নিয়মিত আন্তর্জাতিক একদিনের খেলার মধ্যে না থাকার ফলে বিশ্বকাপে যদি সে ঠিকমতো পারফর্ম করতে না পারে, তাহলে দায় কার?
প্রসঙ্গ তামীমঃ বাংলাদেশের সেরা ওপেনার সে। কোন দ্বি-মত আছে? নাই। তার ফিটনেসের অভাব, সে সব ম্যাচ খেলতে চায় না, ওপেনিং পজিশান ছাড়া খেলতে চায় না ইত্যাদি ইত্যাদি যতো অং বং কথা। অথচ বিসিবি'র মেডিক্যাল টিমই বলেছে, সে খেলার জন্য ফিট। সাকিবের কাছে কেউ একজন কান কথা লাগিয়েছে, সে পাচ ম্যাচের বেশী খেলবে না। অথচ তামীম বলেছে, সে এই কথা বলে নাই। এখন সাকিব অধিনায়ক হিসাবে তৃতীয় পক্ষের কথা না শুনে সরাসরি তামীমের সাথে কি কথা বলতে পারতো না? সেইজন্যই সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেছেন, সাকিব একজন আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়, তার কাজ-কারবারও আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে তামীম তার রিটায়ারমেন্ট ভেঙ্গে বিশ্বকাপে খেলতে রাজি হয়েছিল। এখন কে সেই তৃতীয়পক্ষ, যে চক্রান্ত করে তামীমকে বিশ্বকাপ থেকে বাদ দিল? সে এতোটাই প্রভাবশালী যে, প্রধানমন্ত্রীর খেলাধুলার প্রতি যে কমিটমেন্ট, তাকে সন্মান দেখানোর প্রয়োজনও সে মনে করে নাই? তামীম যেই নোংরামীর কথা বলেছে, সেটা কে বা কারা করলো? তদন্ত হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটা অত্যন্ত প্রভাবশালী তৃতীয়পক্ষ আছে, যার কল্যানে মাশরাফী, রিয়াদ, মুশফিক, তামীম সবার সাথেই অবিচার হয়েছে। সেই তৃতীয়পক্ষের মুখোশ উন্মোচন জরুরী, বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই। কানে কানে বলি, আমার ধারনা ছাগল পালের সর্দার রাম ছাগলটাই যতো নষ্টামির সূত্রপাত করে!
প্রসঙ্গ নির্বাচক প্যানেলঃ অত্যন্ত সমালোচিত প্যানেল। যুক্তিহীন কথা বার্তা, প্রশ্নবিদ্ধ সিলেকশানসহ এদের সার্বিক কর্মকান্ড দেখলে আমার থ্রি স্টুজেস টিভি সিরিয়ালের তিন কমেডিয়ানের কথাই মনে হয়।
প্রসঙ্গ পাপনঃ সব বিতর্কিত কর্মকান্ডের নাটের গুরু। সে বোর্ডের সভাপতি কিন্তু অনেক বড় বড় সিদ্ধান্তের কথা তাকে নাকি জানানোই হয় না। কি আচানক কথা!! তাহলে সে বোর্ডে বসে ছিড়েটা কি? এর কথাবার্তাও নেশাখোরদের মতো অসংলগ্ন।
প্রসঙ্গ হাতুড়েঃ বিশাল ক্ষমতার অধিকারী। হাবে-ভাবে সে বোর্ড সভাপতির চাইতেও ক্ষমতাধর। এই ক্ষমতার উৎস কি? সে এতোটাই ক্ষমতাধর যে, তার বিতর্কিত কর্মকান্ডের জবাবদিহীতা পর্যন্ত নাই। অথচ সে একজন বেতনভুক কর্মচারী, নয় কি?
প্রসঙ্গ সাকিবঃ যতোই উল্টাপাল্টা করুক, মাঠে সে একজন পারফর্মার। কিন্তু তাকে মাথায় রাখতে হবে, সে একজন অধিনায়কও বটে। তার বিতর্কিত কাজ-কারবারের লাগাম টেনে ধরা বিসিবি'র দায়িত্ব, কিন্তু সমস্যা হলো, বিসিবি'র নিজেরই লাগাম নাই!! ভারতের ভিরাট-রোহিত তাদের মধ্যকার ব্যাক্তিগত সমস্যার প্রতিফলন খেলায় করে না, সেখান থেকে হলেও তো সাকিবের শেখা উচিত। পাড়ার ক্রিকেট খেলোয়াড়দের আচরণ তাকে কতোটা মানায়?
সম্প্রতি সে বলেছে, শতভাগ ফিট না হলে সে বিশ্বকাপে কাউকে খেলানোর পক্ষে না। সিরিয়াসলি? একজন অধিনায়ক যদি আবালের মতো কথা বলে, তাহলে কেমন শোনায়? তার আবার বিশাল ভাবসাব!! ''ছাল ওঠা কুত্তার বাঘা নাম'' বাগধারাটা ওর মতো মানুষের জন্যই এসেছে। ওর বোধহয় জানা নাই যে, কেইন উইলিয়ামসন, টিম সাউদি, ম্যাক্সওয়েলের মতো তারকা ক্রিকেটারও পুরোপুরি ফিট না হয়েই এই বিশ্বকাপ খেলতে নামছে।
ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটের মধ্যে ওয়ানডেতেই বাংলাদেশের ট্র্যাক রেকর্ড সবচাইতে ভালো। সেই কারনেই বিসিবি কর্তারা বহু বড় বড় কথা শুনিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের অপরিনামদর্শী কাজ-কারবারের কারনে ক্রমেই বাংলাদেশ দল যাচ্ছেতাই হয়ে যাচ্ছে/যাবে। বিগত আফঘানিস্থান সিরিজ, এশিয়া কাপ আর নিউজিল্যান্ড সিরিজ সেই বার্তাই দিচ্ছে। বিশ্ব ক্রিকেটের বড় দলগুলোর কথা বাদই দিলাম, নবাগত আফঘানিস্থানের সাথে খেলতে গেলেও তাদের চোখের পানি, নাকের পানি এক হয়ে যায়……..কোন কথা হলো এটা? ১৬ বছর পার হয়েছে ওডিআই স্ট্যাটাসের। এখনতো আমাদের বড় দলগুলোর সাথে সমানে সমানে টক্কর দেয়ার কথা, তাই না!!! আসলে বিসিবি হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের একটা মিনিয়েচার। ''যেমন খুশী সাজো''র একটা প্রদর্শনী। এদেরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও হাসাহাসি হচ্ছে। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া মন্তব্য করেছে, বিডি ক্রিকেট ইজ লাইক সোপ অপেরা।
শেষ কথা হলো, এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফ্যানদের স্মৃতিতে রয়ে যাবে বহুকাল। যে দলটা একটা সর্বজনস্বীকৃত দল হতে পারতো, সেই দলটাকে তালগোল পাকিয়ে একটা কিম্ভুতকিমাকার রুপ দেয়া বিসিবি'র বিশেষ কৃতিত্ব।
বিসিবি'র হর্তা-কর্তাদের অভিনন্দন। এ্যজ এক্সপেক্টেড, তারা তাদের লম্বা-চওড়া বাৎ-চিৎ অব্যাহত রেখেছে। আশাকরি, ভবিষ্যতেও রাখবে। অসংলগ্ন কর্মকান্ডের জ্বলন্ত উদাহরন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশানের সাথে তাদের হেড-টু-হেড টক্করের দিন ঘনিয়ে আসছে। ক'দিন আগে শুনলাম, ত্যক্ত-বিরক্ত সমর্থকেরা নান্নু আর পাপনের গাড়ির উপরে নাকি হামলা করেছে। এটা তাদের জন্য একটা সতর্কবার্তা যে, কাজ-কারবার যেন সীমা অতিক্রম না করে। তাদের কানের রিফ্লেক্টর খুলে রাখা উচিত; যাতে করে বিদগ্ধজনের গঠনমূলক সমালোচনা কান দিয়ে ঢুকে মগজ পর্যন্ত পৌছায়। নাহলে সামনে সমূহ বিপদ।
বিসিবি'র এইসব আবালীয় কর্মকান্ড খেলোয়াড়দের মোর্যাল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যথেষ্ট; আত্মবিশ্বাস একটু হলেও নড়বড়ে করে দেয়, তাই না? তারপরেও প্রত্যাশা থাকবে, বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে আমাদের হতাশ করবে না।
বাংলা টাইগারদের জন্য আন্তরিক শুভ কামনা।
ছবিসূত্র।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:২৪