
আপনাদের আওয়ামী স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলগা মোমেনের সেই যুগান্তকারী বাণীর কথা মনে আছে? উহা বলেছিল, ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্কের মতো। আবার বলেছিল, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নাকি রক্তের সম্পর্ক। বলি, উহা কি হারাম-হালাল বোঝে না? স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্ক আবার রক্তের সম্পর্ক হয় কিভাবে? সে যাকগে, দুইটা দেশের তো আর এই ধরনের সম্পর্ক হইতে পারে না!!! কাজেই সে এই কথা দিয়ে কি বোঝাতে চেয়েছে, সেটা দুষ্টলোকেরা ঠিক ঠিক বুঝে ফেলেছিল তখন। তার বেশকয়েক বছর পর এই এখন সেই কথার মাজেজা আমরাও বুঝে গিয়েছি। একসময়ে ভাটি অঞ্চলের বধুরা ভরা বর্ষায় (ইংরেজি জুলাই-অগাষ্ট মাসে) বাপের বাড়িতে নাইওর যাইতো। যুগ পল্টি খাওয়ার ফলে এখন ঘটনা ঘটে উল্টা!!!
ওদিকে ভারতের স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান পলিটিশিয়ানদের অন্যতম তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কিছুদিন আগে একটা কৌতুক বলেছে। সেটা হলো, ''ভারত সবসময়েই তার প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।'' ভারতের বার্তা সংস্থা ইন্দো-এশীয় নিউজ সার্ভিসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তার এই বক্তব্য উঠে এসেছে। তা কোন কোন প্রতিবেশীর সাথে ভারতের এখন সুসম্পর্ক চলছে? ভাগ্যিস বলে নাই, তাদের প্রতিবেশী প্রতিটা দেশকেই ঠিক করতে হবে যে, তারা ভারতের সাথে কেমন সম্পর্ক চায়!!!!
এতো গেল স্ট্যান্ডআপ কমেডি করা পলিটিশিয়ানদের কথা; বাকীরাও কম যায় না। ভারতের গোদি মিডিয়া আর গোদি বুদ্ধিজীবীদের সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু গোদি ব্লগার। এদেরকে এই ব্লগ সাইটে এসে বাক-স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ তথা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা বিষোদগার করতে দেখা যায়। মনের অজান্তেই সম্ভবতঃ ব্লগ কর্তৃপক্ষ এদের প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে কিংবা ব্যবহৃত হচ্ছে; আর সাথে আছে কিছু এদেশি নব্য রাজাকার। এরা ক্রমাগত এতো এতো বিভিন্ন কমেডির জন্ম দিচ্ছে যে, বলে শেষ করা যাবে না। আমার গত পোষ্টেই তেমন কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম।
এখন এই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে যে কোন ফায়দা হাসিল হবে না, এটা বর্তমানের বিএনপি বুঝে গিয়েছে; স্ত্রী'র পদ বেদখল হয়ে যাওয়ার কারনে। কাজেই তাদের বর্তমান স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে এই দম্পতির সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন। সমস্যা হলো, যে কোনও সম্পর্ক স্থাপনে কিছু পূর্বশর্ত থাকে। কে কি শর্ত দিবে, আর কে কতোটা মানবে..........সেটা যার যার ইন্টারেস্টের বিষয়। তবে অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে বাংলাদেশের সাধারন জনগন যেহেতু এখন অন্য যে কোনও সময়ের চাইতে অধিকতর রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠেছে, তাই তাদের কাছে কোন কিছুই গোপন থাকছে না।
তাহলে চলেন আমরা দেখি, আমাদের আলোচিত দম্পতি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কি কি ধরনের পূর্বশর্ত রাখতে পারে!!!
মোটাদাগে সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বশর্তই হবে, ভারতীয় বদমাশদের আধিপত্যবাদের প্রায় হারিয়ে যাওয়া গৌরবকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারকে অকার্যকর করা আর আওয়ামী মাফিয়াবাদকে পূনর্বাসিত করা। আমরা লক্ষ্য করছি, খুবই নিষ্ঠার সাথে বিএনপি'র বর্তমান নেতৃত্ব এই ভূমিকা পালন করছে। সেজন্যেই তারা গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার বিপরীতে গিয়ে সরকারকে প্রতিপদে অসহযোগিতা করছে। অভ্যুত্থানোত্তর ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকারকে বিএনপি একেবারেই নিজস্ব সরকার মনে করতে পারছে না। তাই তাদের কার্যকলাপ মির্জা ফখরুলের গত ২৬শে জুলাই বলা, ''বিএনপি এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থাকার পরেও সরকার মিথ্যা অভিযোগে বিএনপি'র নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে'' বক্তব্যকেই প্রতিষ্ঠিত করছে। এটা সত্যি যে, জুলাই আন্দোলনে বিএনপি'র তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশের গৌরবময় অংশগ্রহণ ছিল, তবে সেটা বিএনপি'র হালুয়া-রুটির খাওয়ার জন্য ওৎ পেতে বসে থাকা শীর্ষনেতৃত্বের বাইরে। তাই এই সরকার অকার্যকর হলে সবচাইতে বড় লাভ ভারত-বিএনপি-আম্লীগ এই ট্রায়োর, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এই সরকারের চাইতেও তাদের বড় কমন শত্রু হয়ে দাড়িয়েছে ড.ইউনুস। উনার জন্যই ভারত আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারছে না। কাজেই তাদের কথাবার্তা, কাজ-কারবার আর দাবী-দাওয়া এক এবং অভিন্ন।
আরব আমিরাতের কারাদন্ড পাওয়া কর্মীদের মুক্তি, দিল্লির পরিবর্তে ঢাকাতে ইউরোপের ভিসা সেন্টার, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ও কথিত ইসলামী সন্ত্রাসবাদের প্রসার ইত্যাদি বিষয়গুলো সমাধান হয়ে যাচ্ছে অথবা হালে পানি পাচ্ছে না ড. ইউনুসের আন্তর্জাতিক কানেকশান, গ্রহনযোগ্যতা আর ক্লীন ইমেজের কারনে। উনার কারনেই এখন বিদেশ থেকে কৃতি বাংলাদেশীদের এনে দেশের কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে যার অন্যতম উদাহরন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী করা।
সেদিন টকশোতে দেখলাম বিএনপি'র এক নেত্রী বলছে, বিএনপি যদি একটা ধাওয়া দেয়, তাইলে আর মাঠে কাউরে খুইজা পাওয়া যাইবে না। ভাই রে ভাই.........হাসুম না কান্দুম বুঝি না, পুরাই কনফিউজড। তাইলে গত ষোল বছর ধাওয়া না দিয়া গর্তে লুকাইছিলি ক্যান? এক ধাওয়াতেই তো দেশের হাজার কোটি টাকা বাইচা যাইতো!! হাজার হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতার প্রাণ বাচতো বা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হইতো না। নাকি আম্লীগরে ধাওয়া দেওয়া যায় না, সম্পর্কে ভাসুর লাগে!!! এমন হাজার হাজার বালখিল্য মন্তব্য আর কাজ-কারবার দেখছি বিএনপির নেতা কর্মীদের। এদের উপরে ফ্যাসিবাদের আত্মা ভর করেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই এই অবস্থা, গেলে কি হবে? এরা ক্ষমতায় গেলে করবে সংস্কার? মির্যা আব্বাস যথার্থই বলেছে, ক্ষমতায় গেলে তারা এই সরকারের সংস্কারগুলোও বাতিল করতে পারে। বিএনপি'র ভারত-আওয়ামীপ্রেম আর ফ্যাসিবাদী চরিত্র পরিস্কার হওয়ার লক্ষণগুলো নিয়ে আমি এই লেখায় বিস্তারিত আলাপ করেছি। =বাংলাদেশে ভবিষ্যতের ফ্যাসিস্টঃ বিএনপি'র সম্ভাবনা এবং বাস্তবতা= আগ্রহীরা দেখতে পারেন।
হাসিনার পলায়নের পরেই যে বিএনপি'র দুই নম্বরী শুরু হয়েছিল, তা পরিস্কার ফুটে উঠেছে উপদেস্টা আসিফের প্রকাশিত বইতে। সেখানে বলা আছে, তারেক রহমানের কারনেই জাতীয় সরকার গঠন সম্ভব হয় নাই। এখন তারেক লন্ডনে বসে সুন্দর সুন্দর গেয়ানের কথা বলে। আমার এতোদিন ধারনা ছিল যে, বিএনপি'র দেশে থাকা শীর্ষ নেতৃত্ব কোন এক কারনে তারেকের চিন্তাধারার সাথে এলাইন করতে পারছে না। আমি ভেবেছিলাম, আওয়ামী নির্যাতনের শিকার আর দীর্ঘদিন দেশের বাইরে একটা উন্নত দেশে থাকার ফলে তারেক বদলে গিয়েছে, তার চিন্তা-ভাবনা অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু হা হতোস্মি!!! আসিফের বই থেকে পরিস্কার হয়েছে যে, এখন যতোই ভাব ধরুক, কমিশন বা খাম্বাবাবা তার চরিত্র বদলায় নাই। লন্ডনে বসে বসেই সে বাংলাদেশকে নিয়ে তার ভবিষ্যতের দুই নম্বরী পরিকল্পনার ছক কেটে চলেছে। বিষয়টা পরিস্কার করার জন্য আসিফকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই যে চাদাবাজি করে সব জায়গাতে অরাজকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, বহিস্কার কি কোন সমাধান? কিছুদিন পরে এদের আবার দলে নেয়া হবে। এদেরকে বিএনপির পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয় না কেন? তারেক রহমান একটা নিরপেক্ষ কমিটি করে না কেন এদের নিয়ন্ত্রণে, তাইলেই তো এসব নিয়ন্ত্রণ করা যায়; কারন সবাই জানে, চাদাবাজরা কোন না কোন ভাই বা নেতার ছত্রছায়ায় এসব করে। সেই মাথাদেরকে কিছু না করে লন্ডনে বসে হম্বিতম্বি করা পাবলিকের আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই না।
থ্রি স্টুজেস মির্জা ফখরুল-মির্জা আব্বাস-আমির খসরু ভারতের দালাল, এইটা সর্বজনবিদিত। আমি ভাবতাম, এরা বিএনপির সর্বনাশ করছে। কিন্তু আসল ক্রিমিনাল তো খাম্বাবাবা, সে সুকৌশলে সুন্দর সুন্দর কথা বলে জনগনের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে প্রায় সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু এখন এটা জানা গেল যে, আসল নাটের গুরু সেই-ই। কাজেই বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলে দেশের দূর্গতি যে কমবে না, সেটা বোঝা গিয়েছে। অবশেষে থলের বিড়াল মির্জা আব্বাস বের করে দিয়েছে এটা বলে যে, আমরা তাদের করা কোন সংস্কার মানবো না, যদি কিছু করেও, আমরা ক্ষমতায় গেলেই তার পরিবর্তন করবো। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই আমার মাতৃ বা মাতুল বংশ আওয়ামী সমর্থক। অন্যদিকে পিতৃ বা পিতুল বংশ প্রধানত বিএনপি'র সমর্থক। দুইটার পিছনেই বহুবিধ কারন আছে। আমি এই পিতুল অর্থাৎ আমাদের বংশের বেশীরভাগ সদস্যকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, বিএনপিকে ভোট দেয়া যাবে না। আমার প্রচারণা অব্যাহত থাকবে এবং ঈদের পর জোরদার হবে। এটা আস্তে ধীরে আমার মাতুল বংশ, শ্বশুর বাড়ী, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে সম্প্রসারিত হবে ইনশাআল্লাহ!!!!
আপনারাও আপনাদের পরিবার থেকেই এই ক্যাম্পেইন শুরু করেন, যদি দেশের ভালো চান। মনে রাখবেন, বিএনপির দেশের উন্নতির দিকে কোন মনোযোগ নাই। এরা আবার দেশটাকে ভারতের হাতে তুলে দিবে। জনগন আবার সেই পুরানো দিনের মতো ভারতের দালালদের খপ্পরে পড়ে দুষ্টচক্রে পতিত হবে। দেশে এবং বিদেশে মাথা উচু করে চলার যেই সুযোগ আমাদের ছাত্র-জনতা তাদের রক্ত দিয়ে আমাদেরকে দিয়েছে, সেই রক্তের ঋণের মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব থেকে যদি আমরা পিছু হটি, তাহলে আগামী ৫০ বছরেও সেখান থেকে আমরা আর বের হতে পারবো না।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!!!!!
Photo courtesyঃ Wasiul Bahar.
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


