somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাথা বেচতে চাই

৩০ শে মে, ২০২১ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমি একবার রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম।
পথিমধ্যে ওবাড়ির ভাবীর সঙ্গে দেখা।
‘ও দেবর’ ভাবী শুধায়, ‘যাচ্ছো কোথা?’
আমি বললাম, ‘হাটে যাচ্ছি, বেচব আজ মাথা।’
ভাবী হাসলো, ‘সে কি, মাথা বেচবে মানে!’
‘ও কি বেচার মত জিনিস?’
আমি হাসলাম, কিছু বললাম না।
তাড়া বেশি, সময় ছয়টা তিরিশ।
‘ও কি দেবর, চললে কোথায়- দুয়েক কথা শোনো?’
‘অমন মেয়ে যে করলে বিয়ে, যুক্তি আছে কোনো?’
‘তাকায় দেখো আমার দিকে, আমার কেমন রুপ।’
‘তোমার বউ তো আচ্ছা কালো, মুখে আঁটা কুলুপ।’
‘গতর খালি, হালকা বুক, নিতম বড় নেই।’
‘এ বউ দিয়ে করবে কী তুমি যেমন যেই।’
‘বউ হতে হয় আমার মত যৌবনে ঢলঢলা।’
‘তোমার ভাই তো আমার মাঝে পায় না খুঁজে তলা।’
আমি মুচকি হেসে বললাম, ‘থামো ভাবী,
শোনো চুপটি করে।’
‘নারী হয়েও অপরজনায় নিন্দো কেমন তরে?’
‘মেয়েমানুষ যে পণ্য নয়, এইটি জানো নাকো?’
‘রুপের মত গুণকে তুমি একচোখেতেই দেখো।’
ভাবী একটু গোমড়া হলো, ‘যাও তো দেবর,
চুলের জ্ঞান ঝেড়ো না।’
‘তুমি একটা আস্ত গাধা, বুঝতে পারো না।’
‘রুপই নারীর আসল জিনিস, বাকি সবই মিছে।’
‘ঘরকন্না সবাই পারে, গুণ সবারই আছে।’
আমি বললাম, ‘যাকগে ভাবী, ছাড়ো এসব কথা।’
‘পয়সাকড়ি দাও তো কিছু, কিনো আমার মাথা।’
‘আমার মাথার বিষয়বস্তু তোমার মাঝে নাই।’
‘সমাজ সভ্য করে তুলতে মাথা বেচতে চাই।’
ভাবী এবার রেগে আগুন, মুখে বারুদবুলি।
বলল, ‘তোমার সঙ্গে আমি আর কথা বলবো না।’
‘অসভ্য বলতে আমায় তোমার একটু বাঁধলো না।’
‘যাও তো তুমি তোমার কাজে, বেচো তোমার মাথা।’
‘কিনবে যারা তারাই হবে চামড়াছিলা গাধা।’

এরপর যে কেটে গেল তিন-তিনটি বছর।
বউটি আমার গত হলো মেয়ে বিয়োবার পর।
আমি কিন্তু ভীষণ খুশি, সত্যি বলছি ভাই।
কারণ শুধোও বলছি তবে খুলে বলে যাই।
আমার অরুপসী বউকে নিয়ে যাদের ছিল চুলকানি।
হাত ডুবিয়ে তারাই খেলো আমার বউয়ের কুলখানি।
কৃষ্ণকন্যা ঘরে তুলে খুয়েছি যাদের সোনার মান।
এবার আমার সব পড়শীর চিন্তা হবে অবসান।
কিন্তু ওমা এ কী দেখি‚ চোখ উঠে যায় কপালে।
আমার ঘরে পড়শীর ভীড় সন্ধ্যা, সকাল, বিকালে।
সবার মুখে একই কথা- ‘মেয়েটি বড় ভালো ছিল।’
‘স্বামী-সংসার গুছিয়ে তুলে অসময়ে জীবন দিলো।’
‘লাখের মাঝে একটি হয় এমন গুণবতী।’
‘কালো হলেও মেয়েটি ছিল দুই নয়নের বাতি।’
আমি শুনে বড্ড অবাক‚ ও ভাই- ‘কথায় মনটা দিও।’
আমার অরুপসী বউটি কবে হলো সবার প্রিয়!
পড়শীর ভীড়ে তাকিয়ে দেখি সেই ভাবীটাও আছে।
তফাত করে গেলাম সরে সামনে পড়ি পাছে।
ভীড়টা যখন কমে এলো আসমানেতে চাঁদ।
পত্নীবিহীন আমার সেদিন দ্বাদশতম রাত।
ভাবী এলো আমার কাছে তার চোখেতে পানি।
বলল‚ ‘দেবর‚ ভুল ভেবেছি ক্ষমা চাইছি আমি।’
‘তোমার বউকে বলেছি কত নানানরকম কথা।’
‘কটু কথায় নানান ছুঁতোয় দিলাম কত ব্যথা।’
‘এমন মোটা চামড়ার মেয়ে কোথায় পেলে খুঁজে?’
‘এত ব্যথা‚ এত কথা‚ সয়ে গেলো মুখ বুজে।’
‘কালো হলেও বউটি তোমার শ্রেষ্ঠ গুণবতী।’
‘পিঁপড়ার মত শরীর তার‚ মনটা ছিলো হাতি।’
‘এইপাড়াতে তোমার বউটি সবার মাথার ওপরে।’
‘চামড়া সাদা হয়েও আমার মনটা ভরা গোবরে।’
‘বেচতে থাকো তোমার মাথা চাঁনখা দিঘীর হাটে।’
‘তোমার বউই আসল নারী স্বীকার করি বটে।’
আমি আবার অবাক হলাম বলবো কী রে ভাই?
যা পেয়েছি তারপরেও আর কী পেতে চাই?
বউকে ভালোবাসা যদি দুর্বলতা হয়‚
আমার নবীর চাইতে বড় দুর্বল তো কেউ নয়।
এই সমাজের সকল ঘরে সকল বউয়ের অপমান।
বন্ধ করো মূর্খ সমাজ দাও এবারে পরিত্রাণ।
এই পৃথিবীর সকল মানুষ আল্লাহপাকের তৈয়ারি।
সাদা-কালোর ফারাক খোঁজা খোদার সাথে মশকারি।
খোদা যারে যেমন বানায় কারো কিছু করার নাই।
মানবতার চাইতে বড় সত্য কিছু নাই।
যেই সমাজের সাম্য বন্দী বর্ণভেদের খাঁচায়।
কষে জোরে লাত্থি মারো সেই সমাজের পাছায়।
বর্ণবাদী‚ লিঙ্গবাদী তোদের দিলাম অভিশাপ।
এই সমাজের খানাখন্দে তোরাই হলি কেউটে সাপ।
আমার মাথার এসব বিষয় কিনবি কেউ কি ভাই?
তোদের সভ্য করে তুলতে মাথা বেচতে চাই।
বিনে পয়সায় দিচ্ছিরে ভাই‚ আমার মাথা কিনে নে।
মানুষ-মানুষ একসমান এইটা ভালো জেনে নে।
আমার মত সাম্যবাদী আছিস যারা শুনে রাখ।
তোদের মত করে তোরা মাথা বেচতে থাক।
প্রয়াণকালে বউ বলেছে ফিসফিসানি করে‚
‘তোমার মাথা বেচতে থাকো সারাজীবন ধরে।’

রচনাকালঃ- ৫/৬-এপ্রিল-২০২১
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০২১ রাত ১:২৫
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×