গত ১২ মে শুক্রবার পলিথিনের বিকল্প পাট হতে পচনশীল পলিব্যাগ তৈরির প্রকল্প উদ্বোধন করল বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) তত্ত্ববধানে পাটের তৈরি পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমদ। দেশের প্রথম সারীর কয়েকটি দনৈক পত্রিকাসহ কিছু সংবাদ মাধ্যমে উদ্বোধনি অনুষ্ঠানের হালকা কিছু বিবরন সহ বেশ কিছু ভি আই পিদের ছবি দেখা যায় সংবাদের প্রচ্ছদ ছবিতে ।
তাই বিষয়টি সম্পর্কে সংবাদ ভাষ্যে বাদ পরা আরো কিছু প্রাসঙ্গীক তথ্য ও ছবি সংযোজন করে শেয়ার করা হল সামুর পাঠকদের সাথে ।
এখানে এর উদ্বাবক বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ মঞ্চে উপবিশস্ট আছেন বলেই মনে হচ্ছে । তবে সংবাদ বিবরণীতে উদ্ভাবিত পলিজুট ব্যাগ সহ এই বিজ্ঞানীর একটি এক্সক্লোসিভ ছবি সাথে তার একটি ছোট্ট বক্তব্য থাকাও সমিচীন ছিল । আমাদের সংবাদ মাধ্যম সমুহ বিশেযজ্ঞদের থেকে ক্ষমতাধরদেরকেই মনে হয় বেশী প্রাধান্য দেন । যাহোক অনেক চেষ্টা করেও এই স্বল্প সময়ে এই গুণী বিজ্ঞানীর কোন ভাল ছবি সংগ্রহ করতে পারিনি । তাই মঞ্চের ভিআইপিদের ছবির সর্ব বা দিকের ছবি হতে তাকে তুলে এনে নীচে তুলে ধরেছি ।
যদি কারো সংগ্রহে এই গুণী বিজ্ঞানীর কোন ভাল ছবি থাকে তবে দয়া করে এখানে দিলে কৃতজ্ঞ চিত্তে তা এ পোষ্টে সংযোজন করে নেয়া হবে । এই গুণী বিজ্ঞানী সম্পর্কে অনেক খুঁজাখোঁজি করে এই সামুর ব্লগেই আমাদের একজন ব্লগার লুব্দক এর ২০১২ সনের
জুটন হতে কিছুক্ষন শির্ষক ব্লগ হতে ড. মোবারক আহমদ এর কৃতি সম্পর্কে অনেক মুল্যবান তথ্য জানতে পেরেছি , তাই সেই সহ ব্লগারের সাথে সামুকেও এসাথে সাধুবাদ জানাচ্ছি ।
জানা যায় উদ্ভাবিত পলিব্যাগ পাইলট প্রকল্প পর্যায়ে উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি। রাজধানীর ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে শুক্রবার সকালে পলিব্যাগ তৈরির প্রাথমিক পাইলট প্ল্যান্ট উদ্বোধন কালে পাট মন্ত্রী বলেছেন, সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করতে পাট চাষিদের সোনালী স্বপ্নপূরণে জোরদার পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে , বেশ আশাপ্রদ কথা তাতে কোন সন্দেহ নাই । সারা দিগন্ত জুরে বিস্তৃত সবুজের সমারোহ নিয়ে পাট চাষ বিস্তার লাভ করুক এটা চাই কায়মনো বাক্যে ।
বর্তমান সরকার কাঁচা পাট ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ, পাটজাত পণ্য রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ এবং পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন বর্জন ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা যায় । জানা যায় পাটকে বিশ্ব বাজারে তুলে ধরতে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এ ১৩৫ প্রকার পাটপণ্যের স্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র চালু হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারকোল, ভিসকস, নতুন নতুন বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে জোর পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে , আমরাও এর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি ।
সংবাদ ভাষ্যে জানা যায় বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত এ পলিব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সুক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। পাটের তৈরি পলিথিন মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এই ব্যাগ দামে সাশ্রয়ী হবে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে কৃষক ন্যায্য দাম পাবেন এবং অতীতের মতো পাট দিয়েই বিশ্বে বাংলাদেশ সুপরিচিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে।
পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য হতে জানা যায় আগামীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাটের পলিথিন উৎপাদন শুরু করা হবে। তিন মাসের মধ্যে বিদেশ থেকে নাকি আনা হবে যন্ত্রপাতি। খেয়াল রাখতে হবে নতুন প্রযুক্তির নামে বিদেশ হতে যেন তিন চারগুন বেশী দামে কোন যন্ত্রপাতি না আসে । মনে রাখতে হবে এ ইন্টারনেটের যুগে এক খুঁচাতেই আসল বিষয়টা জানতে কারো কোন বেগ পেতে হবেনা । জানা যায় সবকিছুই নাকি করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব থোক বরাদ্ধ হতে । সরকারিভাবে উৎপাদনের পর বেসরকারিভাবেও এই ব্যাগ উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া হবে। তবে একথা বলা প্রয়োজন যে দেশের মেধাবী তরুনদেরকে এই ধরনের প্রকল্পের কাজে উৎসাহিত করার জন্য অতি সহজ শর্তে ব্যাংক লোনে বিনিয়োগে সহায়তা দিতে হবে ।
বলা হয়েছে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও নাকি এই ব্যাগ রফতানি হবে । বাজারে যে পলিথিন ব্যাগ আছে তার চেয়ে দেড়গুণ বেশি টেকসই এবং ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যাবে এই পাটের পলিথিনে। বেশ আশা জাগানিয়া বিষয় । এখন কথা হল এটাকে যেন একচেটিয়ামুলক কিছু না করে একে স্বচ্ছতার ভিতিত্তে করা হয় সকলের জন্য অবারিত । এর উৎপাদন কলা কৌশল , টেকনিকেল ও মার্কেটিং বিষয়াদি কিংবা ডিটেইল প্রজেক্ট ফিজিবিলিটি স্টাডি যেন সরকারী ওয়েবসাইট হতে আগ্রহী সকলেই ডাউন লোড করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে । অন্তর্জাল ঘাটা ঘাটি করে দেখা যায় প্লাস্টিক হতে বায়োডিগ্রেডিবল পলিব্যাগ তৈরীর জন্য চীনদেশে সস্তা মেশিনারী প্লান্ট পাওয়া যায় । একে নাকি একটু খাপ খাওয়ায়ে পাটের পলিব্যাগ তৈরীতে অনায়াসেই ব্যাবহার করা যেতে পারে, নীচে এ ধরনের মেশিনারীর কিছু সচিত্র তথ্য দেয়া হল ।
Biodegradable Plastic Shopping Carry Bag Making Machine দাম ৬০০০০ হতে ৭০০০০ ডলার মাত্র
Biodegradable Plastic Shopping Carry Bag Making Machine দাম ১৫০০০ হতে ৫০০০০ ডলার মাত্র
আরো কমদামের যন্ত্রপাতিও পাওয়া যায় চায়না হতে যা নীচে দেখানো হল ৫০০০ – ১০০০০ ডলার
সংবাদ ভাষ্যে জানা যায় বর্তমানে বিজেএমসির উদ্যোগে এই পচনশীল ব্যাগ তৈরির একটি সেমি অটোম্যাটিক পাইলট প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলছে। বৃহৎ পরিসরে নতুন উদ্ভাবিত এই পাট পলিব্যাগ তৈরিতে দেশে বা বিদেশে কোনো মেশিন তৈরি হয়নি বলে এ ধরনের মেশিন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানা যায় । তাই প্রাথমিকভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে কিছু ছোটখাটো মেশিন তৈরি র পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে বড় মেশিন তৈরির জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায় যা দিয়ে পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করে প্রতিদিন ৩-৪ হাজার পলিব্যাগ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্পটি সফলভাবে পরিচালন করা সম্ভব হলেই বাণিজ্যিকভাবে এই পলিব্যাগের উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখন কথা হল বানিজ্য়িকভাবে উৎপাদনটা যেন কারো কুক্ষিগত না হয়ে যায় । এখানে যেন সকলেই গনহারে বিনিয়োগ করতে পারে সে দিকটা খেয়াল রাখতে হবে ।
দেশের সকল গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবেশ দূষণের করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জলবদ্ধতা তৈরির একটি মূল কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার, তাই একে কঠীনভাবে করতে হবে নিয়ন্ত্রন তার কোন বিকল্প নাই ।
সস্তা ও অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় নানা সরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এসব ব্যবহৃত পলিথিন সুয়ারেজ পাইপ, ড্রেন, নদী, নালা ইত্যাদিতে পানি প্রবাহের বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করায় এই ব্যাগের দাম প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের কাছাকাছিই থাকবে বলে এর উদ্ভাবকদের দাবী । এই ধরনের বায়োডিগ্রেডিবল পলিব্যগের বিদেশেও চাহিদা রয়েছে ব্যপক তা অনুসন্ধানে জানা যায় । অনেক দেশেই ১০০ শত ভাগ বায়োডিগ্রেডিবল ব্যগ এখন শপিং ব্যাগ হিসাবে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে যা নীচের চিত্রে দেখা যায় ।
আরো জানা যায় গনহারে পাস্টিক পলি ব্যাগ ব্যবহারকে নিরোৎসাহিত করার জন্য পৃথিবীর অনেক দেশেই এটাকে এখন কাসটমারের কাছে কোন মতেই ফ্রিতে দিচ্ছেনা , উদাহরণ স্বরূপ ইউকেতে এখন প্রায় ৪/৫ কেজী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ব্যগের জন্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ হতে ১০ টাকা পরিশোধ করতে হয় বলে জানা যায় ।
তাই পাটের তৈরী বায়োডিগ্রেডেবল ব্যগের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে যদি বিক্রয়মুল্য ব্যগ প্রতি এক টাকায় রাখা যায় তাহলে বিশ্ববাজার ধরতে কোন বেগ পেতে হবেনা , এটা তখন দেশের পোশাক শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারনা করা যায় , কারণ প্রায় প্রতিটি চেইন সুপার স্টোরেই মাসেই শত শত কোটি শপিং ব্যগের প্রয়োজন পড়ে , ভারত পাটের গ্লীন ব্যগ নামে তাদের কর্মকান্ড নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্ববাজারে নেমে পড়েছে এবং ভাল সফলতাও পাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে , আর সেখানে তারা ভিআইপিদের ছবি দেখানের চাইতে পাটের ব্যগের ছবি , এর মিতব্যয়ী দাম ও গুনাগুনের কথাই তুলে ধরছে ।
তাই সংবাদ মাধ্যমগুলির প্রতি অনুরোধ থাকল এ ধরনের কোন সংবাদ পরিবেশনের সময় দ্রব্য সম্ভারের ছবি ও এর উদ্ভাবকদের ছবিটি যেন অধিক গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করেন সবার উপরে । বিজ্ঞানীদের যথাযোগ্য মর্যাদা না দিলে দিন বদলের সাথে ভিআইপিরা হারিয়ে গেলে মিডিয়া তখন কি করবে!!! নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবক দেশের বরেন্য বিজ্ঞানীরাই সকলের উপরে, কথাটা সকলের মনে রাখতে হবে । তাহলেই কেবল দেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়নের পথে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৪৬