সুচিকে এশিয়ার ‘নেলসন মেন্ডেলা’ বলতেন অনেকেই। এখন তাঁরই কুশপুতুল পুড়ছে রাস্তায়-রাস্তায়। সেনার অত্যাচারে দেশছাড়া প্রায় ৪ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিম। তবু সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করা, শান্তির নোবেলজয়ী আউং সান সু চি-র মুখে সেই কুলুপই। অস্বস্তি এড়াতে আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণসভার অধিবেশনেও যাচ্ছেন না তিনি ।
নোবেল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেছেন অনেকে। অন্য নোবেলজয়ীরা চিঠি লিখে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সু চি-কে সক্রিয় হতে অনুরোধ করেছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে গোটা দুনিয়ার কাছে আর্জি জানিয়েছে জাতিসংঘ । মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউসও। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি জাতিসংঘের অধিবেশনে তুলবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সু চির বিচারে আন্তর্জাতিক গণ–আদালতে শুনানি শুরু
মুসলিম রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে একটি আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে গতকাল সোমবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শনানী শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীই শুধু নয়, দেশটির প্রধান ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এবং এর আলোচিত নেত্রী অং সান সু চি যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইতিমধ্যে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এজাহারের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র গত মার্চে লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত রোমভিত্তিক পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের (পিপিটি) সূচনা অধিবেশনে গৃহীত হয়েছে।
এই গণ-আদালতের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম জেনারেলদের পাশাপাশি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কেউ নৈতিকভাবে দণ্ডিত ও দোষী সাব্যস্ত হতে চলেছেন।
পিটিটির অধিবেশনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল অংশগ্রহণ করেছে। প্যনেলের অধ্যাপক স্ট্যানটন তাঁর জবানবন্দিতে রোহিঙ্গা ও কাচিনদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ কীভাবে গণহত্যা চালিয়েছে, তার সাক্ষ্যপ্রমাণ তুলে ধরেন।
স্ট্যানটন তাঁর পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দির উপসংহারে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য বৌদ্ধ মিলিশিয়া এবং মিয়ানমারের বর্তমান বেসামরিক সরকারকেও অভিযুক্ত করেছেন।
স্ট্যানটন তার জবানবন্দিতে আরও বলৈন পশ্চিম মিয়ানমারে ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশু চলাচলের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা স্কুলে যেতে পারে না। ভবিষ্যতে তাদের বিয়ের অধিকার থাকবে না। স্ট্যানটন তাঁর লিখিত জবানবন্দিতে আরও বলেন প্রতিবছর শত শত রোহিঙ্গা নৌকাডুবিতে প্রাণ হারায়। আর অনেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক সীমান্তে পোঁতা মাইন বিস্ফোরণে প্রাণ দিচ্ছে। পলায়নরত রোহিঙ্গাদের সামরিক বাহিনী গুলি করে হত্যা করছে।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমারের মুসলিম নিপীড়ন বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে । বৃহস্পতিবার দিনভর বিচারকমণ্ডলীর সদস্যরা তাঁদের বক্তব্য পেশ করবেন।
আট সদস্যের এই বিচারক প্যানেলের সুনাম রয়েছে বিশ্বজুড়ে।পিপিটি মালয়েশীয় সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি চন্দ্র মোজাফফর বলেছেন, পাঁচ দিনের অধিবেশনে বিচারকেরা প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক বিশেষজ্ঞ সাক্ষীদের মতামত, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি বিচার-বিশ্লেষণ করবেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় তাঁরা রায় ঘোষণা করবেন। বিচারকদের এই রায় ও পর্যবেক্ষণ জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান ।
মিয়ানমার ও তার নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে প্রসিকিউশনের নেতৃত্বে রয়েছেন অস্ট্রেলীয় মানবাধিকার আইনজীবী দোরিন চেন। পাঁচ দিনের এই অধিবেশন খ্রিষ্টান, কাচিন ও বৌদ্ধ তারাংরাও তাদের জবানবন্দিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। ‘প্রসিকিউশন, ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট অ্যান্ড জেনোসাইড অব রোহিঙ্গা, কাচিন, শান, কারেন অ্যান্ড আদার মাইনরিটিস অব মিয়ানমার’ শীর্ষক জবানবন্দিতে গ্রেগরি স্ট্যানটন সাম্প্রতিক কয়েকটি রায়ের আলোকে বলেন, এথনিক ক্লিনজিং নয়, মিয়ানমারে যা ঘটেছে তা গণহত্যা।
মোদ্দা কথা হল সু চি পালাবে কোথায় ।
তথ্যসুত্র : বিভন্ন সংবাদপত্র মাধ্যম
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৩৫