সফল ৫শ’মৌচাষীর মৌ চাষের ঘটনা সত্যি অবাক করার মত! বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে মৌ চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে সবাইকে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তারা। কিছুই ছিল এসব মৌচাষীদের।অল্প সময়ের ব্যবধানে মাত্র ৩/৪ হাজার টাকা দিয়ে ২ বাক্স মৌমাছি সংগ্রহ করে পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্বায় লাখপতি হয়ে গেছেন এমনও অভূতপূর্ব সাফল্যের উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছেন অনেকেই।এদের অনেকেই পথের ভিখারীর দুরবস্থা অতিক্রম করে বতসবাড়ীর জন্য জমি ক্রয়,ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠানোসহ আরও অনেক বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।গত ১ মাসে এমন কিছু মৌচাষী তাদের মৌমাছির খামার থেকে সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৭ মণ মধু যার বর্তমান বাজারমূল্য ৬১ হাজার ৬’শ টাকা।এর জন্য কোন খরচও হয়নি আবার তেমন বেগও পোহাতে হয়নি তাদের।শুধু মৌমাছির সঠিক পরিচর্যায় তারা তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন স্বল্প সময়ের ব্যবধানেই।দেশে প্রতি মাসে এমন আয়ের সুযোগের কথা রূপকথার গল্পের মতো মনে হলেও অনেক সময় রূপকথার কল্পকাহিনীকের রীতিমতো হার মানায় জোজ্ব্যলমান বাস্তবতা।সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পাড়কোলা,যুগনীদহ,টেটিয়ারকান্দা,উল্লাপাড়ার মোহনপুরসহ বৃহত্তর চলনবিলের অংশবিশেষ পরিদর্শন করে এরই সত্যতা পাওয়া গেল।
শাহজাদপুরের পাড়কোলা এলাকায় ভ্রাম্যমান মৌখামারের মৌ চাষী নজরুল মিয়া জানান, প্রতিদিন তার মৌমাছির খামারে যে পরিমান মধূ সংগৃহিত হচ্ছে তা বিক্রি করে তিনি বর্তমানে বেশ সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন। প্রতি সপ্তাহে তার এ মধুর খামারে এক থেকে দেড় মণ বা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এর চাইতেও বেশী পরিমান মধু উৎপাদিত ও আহরিত হচ্ছে ।গত ১ মাসে তার এ খামার থেকে প্রায় ৭ মণ মধু আহরিত হয়েছে।এ আহরিত মধু খুচরা দুইশত বিশ টাকা টাকা কেজি দরে তিনি বিক্রি করেছেন। মধু বিক্রির অর্থ দিয়ে তার পাঁচ সদস্যের সংসার বেশ ভাল ভাবেই চলছে।স্বচ্ছলতার সহিত সংসার চালানোর পাশাপাশি তিনি মাসে বেশ মোটা অংকের অর্থ সঞ্চয় করছেন।বর্তমানে সফল মৌচাষী নজরুলের মৌচাষের খামারে ৪৮টি মৌমাছির বাক্স রয়েছে।আবার প্রতি বছরই তিনি ৮/১০ টি মৌমাছির বাক্স বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা বাড়তি আয় করছেন।একইভাবে মৌচাষী নজরুলের মতো সিরাজগঞ্জে প্রায় ৫০ জন,পাবনা জেলায় প্রায় ৬০/৭০ জন,দিনাজপুরে প্রায় ৫০ জন,লালমনিরহাটে প্রায় ১০/১২ জন,যশোর-নড়াইল এলাকায় প্রায় ১শ’জন,শ্যামনগরসহ সাতক্ষীরায় প্রায় ১শ’ জন,খুলনা-বাগেরহাট এলাকায় প্রায় ২০/২৫ জন,গাজীপুর-টাঙ্গাইল এলাকায় প্রায় ৭০/৮০ জনসহ দেশের প্রায় ৫শ’ সফল মৌচাষী আনুনিক পদ্ধতিতে মৌচাষ করে রীতিমতো ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে আর্থসামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বেকার শিক্ষিত যুবকেরা তার এ পেশা অনুকরণ করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেকারত্বের অভিশাপ থেকে নিজেদের মুক্ত করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন বলে এসব মৌচাষীরা আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।শাহজাদপুরের বাজিয়ারপাড়া গ্রামের দ্বেরাজ প্রামানিকের ছেলে সাইদুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে মাত্র ৩ হাজার ২শ’ টাকা পূঁজি বিনিয়োগ করে ২ বাক্স ‘সেরেনা, প্রজাতির মৌমাছি ক্রয় করে মৌখামার গড়ে তোলেন।বর্তমানে তার খামারে ৩৮টি মৌমাছির রয়েছে।এতে ওই খামারীর পূঁজি বেড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকায় দাড়িয়েছে এবং প্রতি বছরে তিনি মধু বিক্রি করে আরও প্রচুর অর্থ আয় করছেন।নজরুল,সাইদুলসহ দেশের প্রায় ৫শ’ মৌচাষী আধুনিক পদ্ধতিতে মৌচাষ করে তাদের ভাগ্যের চাকা সচল করে আয়ের পথ সুগম করেছেন।
গতকাল কয়েকজন মৌচাষীর সাথে আলাপকরে জানা যায়,গত ১৯৯৩ সাল থেকে দু’একজন মৌচাষী প্রশিকা এনজিও সহায়তায় দেশীয় প্রজাতির ’সেরেনা’ মৌমাছি চাষের ওপর প্রশিক্ষন গ্রহন করে মৌচাষ শুরু করেন।সহায় সম্বলহীন ও হতদরিদ্র অনেক মৌচাষী শুরুতে অতিকষ্টে ৩/৪ হাজার থেকে ৩০/৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে প্রশিকা থেকে উন্নতজাতের কয়েক ফ্রেম এলিট মেলিফিয়া জাতের মৌমাছি সংগ্রহ করে মৌচাষ শুরু করেছিলেন।মাত্র এক বছরের মাথায় ওইসব মৌমাছির ফ্রেম তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। যার বর্তমান বাজারমূল্য লাখ লাখ টাকা।এই স্বল্প পুঁজি খাটিয়ে স্বল্প সময়ে অনেক মৌচাষী লাখপতি বনে গিয়ে রীতিমত সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।এসব মৌখামারে সংগৃহিত মধু তারা স্কয়ার ও এপিসহ বিভিন্ন কোম্পানীতে সরবরাহ করছেন।দিন দিন এসব মৌচাষীর মৌখামারে মধু সংগ্রহের ফ্রেম ও মৌমাছি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের আয়ও ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।মৌচাষীরা মৌমাছি পরিচর্যায় বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মধু আহরণ করছেন।ডিম ও বাচ্চা মৌমাছি পরিচর্যায় মৌচাষীরা মিথানল ও ফরমিক প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করছেন। সদিচ্ছা ও একনিষ্ঠ পরিশ্রমের মাধ্যমে অতি স্বল্প সময়ে এসব প্রায় ৫শ’ মৌচাষী তাদের ভাগ্যের অচল চাকা সচলে সক্ষম হয়েছেন। দেশের বেকার যুবকেরা এসব ৫শ’ মৌচাষীর পেশা অণূসরন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন।আতœপ্রত্যয়ী মৌচাষী নজরুল ইসলাম,নাজিম উদ্দিন,মজিবর রহমান,সিরাজুল ইসলাম,রেদোয়ানসহ প্রায় ৫শ’ মৌচাষীর সাফল্যগাথা মৌচাষ দেখে দেশের বেকার যুবকেরা উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের ভাগ্য বদলাবেন এটাই সফল মৌচাষীদের প্রত্যাশা।
মোঃ মামুন বিশ্বাস,শাহজাদপুর(সিরাজগঞ্জ)।
[email protected]
যোগাযোগ :০১৭১--৬-৫৪৬৯৫০
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪১