somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

পাখির নিরাপদ বাড়ী
বৃক্ষ সঙ্কটসহ অনুকূল আবহাওয়া আর মানুষের আন্তরিকতাবোধের অভাবে শ্যামল বাংলার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি যখন কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে, ঠিক তখন পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলার ব্যতিক্রমী দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার মামুন বিশ্বাস ও

ঝড়ে পড়া শতশত শিশুরা পেটের দায়ে ঝূঁকি নিয়ে করছে কাজ, ওদের পাশে দাড়ানোর কি কেউ নেই!

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উওরাঞ্চলের যমুনা নদীর তীরবর্তী দুর্গম পল্লী কাশিপুর গ্রামের শরিফুল(৭),মাসুদ (৬) ও মিলনের (৬) শরীরে হাঁতুড়ি দিয়ে ইট ভেঙ্গে খোঁয়া তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি না থাকলেও পেটের তাগিদে ওরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। পিতা হারিয়ে এই ছোট্ট বয়সেই এসব ভাগ্যবিড়ম্বিত চির অবহেলিত,চির পতিত,চির অপাংক্তেয়,যাদের বিচারের রায় নিরবে নিভৃতে কাঁদে-এসব শিশুদের বইখাতা আর কলমের পরিবর্তে হাতে তুলে নিয়েছে হাঁতুড়ি। হৎদরিদ্র পরিবারের এসব কোমলমতি শিশুরা শুধুই পেটের তাগিদে রোদ্রদাহে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ইট ভাঙ্গার কাজ করছে। এমন করুন চিত্র বড়ই পীড়াদায়ক ও অবিশ্বাস্য হলেও কাজ করলে এমনই এসব শিশুদের পেটে ভাত যায়,আর কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হয়।গরিবের ঘরে জন্ম ! এ জন্যই মাত্র ৫/৬ বছর বয়স থেকেই ওদেরকে জীবনযুদ্ধের মতো অমোঘ,নির্মম,নিষ্ঠুর,মর্মাহত,কঠিন বাস্তবতার সন্মুখীন হতে হয়েছে। ওদের পাশে দাড়ানোর কি কেউ নেই!
গতকাল সরেজমিন সিরাজগঞ্জ কয়েকটি উপজেলার যমুনা নদী তীরবর্তী পল্লী গ্রাম পরিদর্শন করে জানা গেছে,শাহজাদপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের একটি কারখানায় প্রায় ১ বছর ধরে কাশিপুর গ্রামের মৃত আকাব্বর শেখের পুত্র মাসুদ,মতলেবের পুত্র শরিফুল ও মিলন হাঁতুড়ি দিয়ে ইট ভাঙ্গার কাজ করছে। এক কড়াই খোয়া ভাঙ্গলে তারা মাত্র ৪ টাকা মজুরী পায়। শুধু এ তিন শিশুই নয়,একই এলাকার জাহাঙ্গীর,শাহীন,চয়ন,মোন্নাফসহ প্রায় ১০/১২ টি সমবয়সী শিশুরা ওই কারখানায় নিয়মিত ইট ভেঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করছে। হাঁতুড়ি উচু করতেই এসব শিশুদের চরম কষ্ট হলেও পরিবারে অর্থ উপার্জনকারী না থাকায় ৪/৫ জনের এসব শিশুদের সংসার তাদের আয়ের ওপরই চলছে। দেশে শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর ব্যপারে বিধিনিষেধ থাকলেও ওই কারখানার মালিক মানবতার প্রশ্নে এসব শিশুদের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। দিনভর হাড়ভাঙ্গা মেহনত,খাঁটুনি করে কঙ্কালসার এসব শিশুরা সন্ধ্যায় ৩০/৪০ টাকা আয় করে সেই অর্থ দিয়ে চাউল ও তরকারি কিনে বাড়িতে যায়। শিশু শরিফুল,মাসুদ ও মিলনকে লেখাপড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে এরা জানায়,লেহাপড়া করলি কি প্যাটে ভাত যাইবে। কাম করলি প্যাটে বাত জায় আর কাম না করলি মাও খাইব্যার দেয়না। শুধু ওইসব শিশুরা নয়,তাদের মতো শাহজাদপুরসহ পাবনা-সিরাজগঞ্জের শতশত কোমলমতি শিশুদের কাউকে রিক্সা চালাতে,কাউকে কাপড়ের গাইট(বান্ডিল) মাথায় নিয়ে আড়ৎ আড়তে পৌছানোর কাজে ,সুতার বান্ডিল মাথায় নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পৌছে দিতে,বিভিন্ন হোটেলসহ অনেক পেশায়ই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।হাটের দিন শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে এরূপ অসংখ্য ঝড়ে পড়া শিশু কিশোরদের আনাগোনা ঘটে।‘গাইটটা দ্যান না ভাই,যা দেন (টাকা) দিয়েন তাও গাইটটা দেন’-এমন চিৎকার,করুণ অনুনয় বিনয় করতে দেখা যায় অসংখ্য ঝড়ে পড়া শিশু কিশোরদেরকে শুধুই তাদের পেটের তাগিদে-বাবা মায়ের ভয়ে!
অনুসন্ধানে দেখা গেছে,পিতামাতার অবহেলা,চরম অজ্ঞতা আর ভরণপোষনে অক্ষমতাজনিত কারনে শাহজাদপুরসহ পাবনা-সিরাজগঞ্জের শরিফুল,মাসুদ,মিলন,ইদুল,রিপন,নাছিম ও খালেকের মতো ঝড়ে পড়া শত শত শিশুরা পেটের তাগিদে বিদ্যালয়ে না গিয়ে শিশুশ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে।নুন আনতে পান্তা ফুরানো অতি হৎদরিদ্র পরিবারে অভিশাপরূপে জন্ম নেওয়া(পিতামাতার ভাষায়) ওইসব ফুটফুটে শিশু কিশোরদেরকে পেটের তাগিদে অল্প বয়স থেকেই জীবন সংগ্রামে পতিত হতে হয়েছে।তাদের অনেকেরই হয়তো বাবা-মাও হয়তো জন্মের পর বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি তাদের দাদা-দাদীদের চরম দারিদ্রতা জনিত কারনে।আর সে জন্যই শুধূমাত্র সচেতনতার অভাবে বোধহয় তাদের কোমলমতি শিশু কিশোরদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে কাজে পাঠাচ্ছে অভাবগ্রস্থ পিতামাতারা।ফলে ‘শরীরে ওদের না কুলালেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে !বর্তমানে দেশে প্রচলিত বিনা খরচে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলেও ওদের মতো চির অবহেলিত,চির পতিত,চির অপাংক্তেয় হৎদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য নাকি লেখাপড়া নয়।আর লেখাপড়া করেই বা কি হবে ? জজ ব্যারিষ্টার তো আর হতে পারবেনা,কদিন পরে বাবার মতোই ঘানি টানতে হবে।তাই তাদের পিতামাতার ভাষ্যমতে,সময় নষ্ট না করে পরিবারের স্বার্থেই তাদের ছোটবেলা থেকে কাজে পাঠানো হচ্ছে।ফলে ওইসব ঝড়ে পড়া শিশু কিশোরদের বিচারের রায় নিরবে নিভৃতে কাঁদছে! ওইসব ফুটটুটে শিশু কিশোরদের লেখাপড়া কেন করানো হচ্ছেনা ? এমন প্রশ্নে পিতামাতার বক্তব্য,‘ট্যাহা ছ্যাড়া বই পত্তর পড়া যায়,কিন্তু মোগো ছেলেপেলে লিয়্যা মোরা না খাইয়্যা থাকলি কি আপনেরা ভাত কাপুর দিব্যাননি’-এমন প্রশ্নরও কোন সদুত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।ফলে ওদের মতো শত শত কঁচিকাঁচা কোমলমতি শিশু কিশোররা দারিদ্রতা ও বাবা মায়ের চরম অবহেলায় খুব ছোটবেলা থেকেই জীবন সংগ্রামে পতিত হয়ে ঝড়ে পড়লেও দেখার কেউ নেই।
মোঃ মামুন বিশ্বাস,শাহজাদপুর(সিরাজগঞ্জ)।
[email protected]
যোগাযোগ :০১৭১৬-৫৪৬৯৫০
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×