somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষম চিন্তা

২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাথায় আমার প্রশ্ন যত সদাই খুজি জবাব তার।
সবাই শুধু ধমকে বলে “অত জানার কি দরকার?”
এই পৃথিবীর বয়স কত, প্রান এলো তা'য় কোত্থেকে।
এমনি ধারার হাজার প্রশ্ন ভীড় করে মোর মস্তকে।
চতুর্থ শ্রেনীতে সুকুমার রায়ের “বিষম চিন্তা” কবিতা পড়ে লেখকের চিন্তাগুলো মাথায় ঠিকই ঢুকেছিলো কিন্তু বয়স হলে কিতাব খুলে সে গুলোর উত্তর খুজতে ইচ্ছে করে নি। আমার মস্তিস্কে নতুন ধরনের “বিষম চিন্তা” জন্ম নেয় গত পরশুদিন । ওন্টারিও সায়েন্স মিউজিয়ামের বারান্দায় রাখা ৩৯০ কোটি বছরের পুরোনো শিলাখন্ড দেখে এ চিন্তার জন্ম।
বিষম চিন্তা-১, পৃথিবীর বয়স
আমাদের গ্রামের কৈলাস ঠাকুরদা একশ' বছরেরও বেশী বেঁচেছিলেন। ঠাকুরদার বয়সের দিনক্ষনের রেকর্ড কোথাও ছিলো না । তখন বার্থ রেজিস্ট্রেশান প্রথা চালু হয়নি , ফলে ঠাকুরদার কোনো বার্থ সার্টিফকেট ছিল না। কৈলাস ঠাকুরদা বলতেন বৃটিশ আমলের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তার বয়স ছিল সাত/আট বছর। আমাদের পৃথিবীরও বার্থ সার্টিফিকেট নেই।
পৃথিবীর জন্ম নিয়ে দুটো মতবাদ চালু আছে। বিধাতায় বিশ্বাসী বা Creationist দের মতামত অবশ্যই ধর্ম অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন। বাইবেলে ছয়দিনে সৃস্ট পৃথিবীর বয়স বলা হয়েছে ৬,০০০ বছর। কুরান শরীফেও আল্লাহ কর্তৃক ছয় দিনে পৃথিবী সৃস্টির কথা বলা হয়েছে কিন্তু আল্লাহ'র একদিন পৃথিবীর ৫০,০০০ বছরের সমান বলা হয়েছে। অর্থাৎ কুরান শরীফ অনুযায়ী পৃথিবীর সর্বোচ্চ বয়স তিন লক্ষ বছর। হিন্দু ধর্মমতে ব্রহ্মা পৃথিবী সৃস্টি করেন একদিনে কিন্তু তার একদিন পৃথিবীর ৮৬০ কোটি বছরের সমান।
বিজ্ঞানীদের মধ্যে পৃথিবীর বয়স নিয়ে গবেষনা শুরু হয় অনেক আগে থেকে। এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর বয়স অনন্তকাল। গত চারশ' বছরে পৃথিবীর বয়স নির্ধারন করতে যে সমস্ত বিজ্ঞানী কাজ করেছেন তাদের মধ্যে আছেন স্যার আইজ্যাক নিউটন, জোহান কেপলার,উইলার্ড লিব্বি(Willard Libby) প্রমুখ।
পৃথিবীর বয়স নির্ধারনের পদ্ধতিঃ- ছোটবেলায় রুপকথায় পড়েছিলাম যে পাতালপুরের রাক্ষসী ঠাকুমা রাজপুত্রকে নিজের বয়সের হিসেব দিয়েছিলেন মাথার পাকা চুল দিয়ে। পৃথিবীর এমন পাকাচুল হয়ত নেই কিন্তু বয়স নির্ধারনের বেশ কিছু উপায় আছে। আমাদের পৃথিবী সৃস্টির শুরুতে ছিল গ্যাস এবং পরবর্তীতে ফুটন্ত তরল যা ক্রমে ক্রমে ঠান্ডা হয়ে বর্তমানের পৃথিবী্র জন্ম। লর্ড কেলভিন তাপ হারানোর মাত্রা দিয়ে পৃথিবীর বয়স নির্ধারন করেছিলেন ১০ কোটি বছর, যা পরে ভুল প্রমানিত হয়। স্থলভাগ থেকে লবন, নদী দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে অর্থাৎ ক্রমশঃ সমুদ্রের পানীর লবনাক্ততা বাড়তে থাকে। সমুদ্র পানীর লবনাক্ততা বৃদ্ধির হার দিয়ে পৃথিবীর বয়স নির্ধারনের চেস্টা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, কিন্তু কোন নির্ভরযোগ্য ফল পাননি। এর পর গাছের বয়স নির্ধারনের পদ্ধতির দিকে ঝোকেন তারা। গাছের কান্ডে স্তরে স্তরে জমা অংশ দিয়ে বয়স নির্ধারন করা হয়ে থাকে।একইভাবে পাথরের মধ্যে জমা স্তরগুলো দিয়ে পৃথিবীর বয়স নির্ধারনের চেস্টা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। বলাই বাহুল্য সে চেস্টাও খুব সফল হয় নি।
রেডিওমেট্রিক ডেটিংঃ- ফরাসী বৈজ্ঞানিক Henri Becquerel ১৮৯৬ সালে মৌলিক পদার্থের তেজক্রিয়তা বা রেডিওএকটিভিটি আবিস্কার করেন। ১৯০৪ সালে বিজ্ঞানী Rutherford এবং ১৯০৭ সালে বিজ্ঞানী Boltwood দেখান যে ইউরেনিয়াম তেজস্কৃয়তা হারিয়ে ক্রমে ক্রমে শীশায় পরিনত হয় এবং কোনো ইউরেনিয়াম আকরিকে ইউরেনিয়াম এবং শীশার অনুপাত বের করে পৃথিবীর বয়স নির্ধারন করা সম্ভব। ১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী Arthur Homes প্রথম পাথর খন্ডের মধ্যে ইউরেনিয়াম এবং শীশার অনুপাত হিসেব করে অর্থাৎ রেডীয়োমেট্রিক ডেটিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর বয়স নির্ধারন করেন ১৬০ কোটি বছর।
রেডিওকার্বন ডেটিংঃ- ১৯৪০ এর দশকে বিজ্ঞানী Willard Libby রেডিওকার্বন ট্রেসিং পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং ১৯৬০ সালে নোবেল প্রাইজ পান। আমাদের বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে কসমিক রশ্মির প্রভাবে নাইট্রোজেন পরিনত হয় অপর এক মৌলিক পদার্থ কার্বন -১৪ তে । এই কার্বন বায়ুমন্ডলের অক্সিজেনের সাথে মিশে তৈরী করে কার্বন-ডাই অক্সাইড। গাছপালা সালোকসংশ্লেষন কালে বায়ুমন্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেয়। ফলে গাছপালায় গিয়ে আশ্রয় নেয় রেডিওকার্বন বা কার্বন- ১৪। গাছ থেকে মাটি, পাথরে এবং পশুর মধ্যে ঢুকে যায় এই তেজসক্রিয় কার্বন যা ক্রমশঃ তেজসক্রিয়তা হারিয়ে পরিনত হয় কার্বন-১২ তে। কার্বন-১৪'এর হাফ লাইফ হলো ৫,৭০০ বছর। অর্থাৎ ৫,৭০০ বছরে রেডিওকার্বন অর্ধেক তেজসক্রিয়তা হারায়। রেডিওকার্বন ডেটিং এ সমস্ত রেডিয়োকার্বন-১৪, হাফ লাইফের দশগুন সময় অর্থাৎ ৫৭,০০০ বছরে কার্বন-১২ তে পরিনত হয়, ফলে এ পদ্ধতিতে এর চেয়ে পুরোনো পদার্থের বয়স নির্নয় সম্ভব হয় না। রেডিওকার্বন ডেটিং নির্ভরযোগ্য হলেও এ পদ্ধতি দিয়ে এক সময় জীবন্ত ছিল এমন পদার্থেরই বয়স নির্নয় করা সম্ভব, অথচ পৃথিবীতে এক উল্লেখযোগ্য সময় ধরে প্রানের অস্তিত্ব ছিলো না।
বর্তমানে আগের মতই পাথরের বয়স নির্ধারনে রেডিওএকটিভ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। কারন হল ইউরেনিয়ামের হাফ লাইফ অনেক বেশী; উদাহরনস্বরুপ - ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর হাফ লাইফ হলো ৪৫০ কোটী বছর। বিজ্ঞানী হোমসের পাওয়া সবচে' পুরোনো পাথর খন্ডের বয়স ছিলো ১৬০ কোটি বছর। কিন্তু হোমসের পর আরো পুরোনো পাথর খুজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, ফলে পৃথিবীর বয়সও বেড়ে গিয়েছে। এ পর্যন্ত খুজে পাওয়া সবচে' পুরোনো পাথরখন্ড খুজে পাওয়া গিয়েছে কানাডার গ্রেট স্লাভ লেকে, যার বয়স হলো ৪০৩ কোটি বছর। ৩৫০ কোটির বেশী বয়সের পাথর খন্ড পাওয়া গেছে অনেক দেশে। অস্ট্রেলিয়াতে খুজে পাওয়া ছোট একদানা জিরকোনিয়ামের বয়স নির্ধারিত হয়েছে ৪৩০ কোটি বছর যা এ যাবতকাল পাওয়া পৃথিবীর সবচে পুরোনো পদার্থ। পৃথিবীতে কিন্তু আরো পুরোনো পাথর খুজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে। আমেরিকার নেভাদায় খুজে পাওয়া উল্কা পিন্ড এ পর্যন্ত পাওয়া সবচে' পুরোনো পাথরখন্ড, যার বয়স হল ৪.৫৫ +/- ০.০৭ বিলিয়ন বছর। সে হিসেবে পৃথিবীর বয়স কমপক্ষে চারশ'পঞ্চান্ন কোটি বছর। ভবিষ্যতে যদি আরো পুরোনো পাথর খুজে পাওয়া যায় তাহলে পৃথিবীর বয়সও বাড়বে। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×