somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষম চিন্তা-২।

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৪৫৫ কোটি বছরের বুড়ো পৃথিবীতে প্রানের সৃস্টি কখন হল , কিভাবে হল, এখনকার পৃথিবীর সমস্ত পশুপাখি, গাছপালা ইত্যাদিই বা কবে প্রথম জন্মালো? এ গুলোই হল আমার দ্বিতীয় বিষম চিন্তা।
পৃথিবীর গোড়ার ভূগোলঃ- সৃস্টির শুরুতে পৃথিবী ছিল আগুনের গোলক। জল স্থল কোনো কিছুই ছিল না, কোন দেশ ছিলনা, মহাদেশ ছিল না , সাগর মহাসাগর ছিল না। প্রতিমুহুর্তের বিস্ফোরন এবং উল্কাপিন্ডের আঘাতে পৃথিবীতে তখন তাপমাত্রা ছিল হাজার ডিগ্রীরও উপরে। এই তাপমাত্রায় প্রানের অস্তিত্ব ছিল প্রশ্নাতীত। ক্রমে ক্রমে ঠান্ডা হতে লাগল পৃথিবী। মাধ্যাকর্ষনের টানে ভারী পদার্থগুলো আশ্রয় নিল কেন্দ্রে যেটি হল Core। উপরের ঠান্ডা হওয়া অংশ পৃথিবীর চারদিক ঘিরে তৈরী করলো কঠিন পদার্থের বলয় যা হল কিনা Crust । Core এবং Crust এর মধ্যে রয়ে গেল গলন্ত লাভা যা আজও মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের আকারে। ফুটন্ত গলিত লাভা ঠান্ডা হয়ে তৈরী হল ভুখন্ডের। প্রথমে এই ভুখন্ডগুলো ছিল ছড়ানো ছিটানো দ্বীপের মত যা একটার সাথে আরেকটা জোড়া লেগে আরো বড় ভুখন্ড তৈরী হতে থাকলো। বিজ্ঞানীরা ধারনা করে থাকেন যে বর্তমানের প্রায় সমপরিমান ভুখন্ড তৈরী হয়েছিল ২৫০ কোটি বছর আগে। ত্রিশ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সমস্ত ভুখন্ড একত্রিত হয়ে তৈরী হয়েছিল Pangaea নামের বিশাল এক অখন্ড ভুখন্ড। এরাও কিন্তু এক সাথে রইলো না। প্রায় সাড়ে সাতার কোটি বছর আগে ভেঙ্গে টুকরো হতে থাকলো Pangaea । প্যনজিয়া ভেঙ্গে গিয়ে তৈরী হল উত্তর এবং দক্ষিনের অতিমহাদেশ বা সুপার কন্টিনেন্ট। এই যে পৃথিবীর ভুখন্ডের স্থান পরিবর্তন তা কিন্তু আজও চলছে। পৃথিবীর ভুখন্ডগুলো নয়টি প্লেট এর উপর বসানো যাদেরকে বলা হয় Tectonic plate । আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার পাশের নর্থ আমেরিকান প্লেট এবং প্যসিফিক প্লেট বছরে দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার করে পাশপাশি সরে যাচ্ছে। আফ্রিকান এবং এরাবিয়ান প্লেট পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন Rift valley ।
পৃথিবীতে প্রান কবে এল ?
প্রান কি? এ প্রশ্নের শতভাগ সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয় কারন হল ; যে সমস্ত গুনাবলীর ভিত্তিতে প্রানীকে প্রানী বলা হয় তার অনেক ব্যাতিক্রম বিদ্যমান। উদাহরনস্বরুপ প্রানী্র প্রজননের কথা ধরা যায়।প্রজননে সক্ষম মানুষ থেকে মানুষ বা হাতী থেকে হাতীর বাচ্চার জন্ম হয়। একই ভাবে এক ভাইরাস থেকে আরেক ভাইরাস জন্ম নেয় কিন্তু ভাইরাসে প্রানের অনেকগুন নেই। ভাইরাসের নিজস্ব পাচনপ্রক্রিয়া বা Metabolism নেই এবং অধিকাংশ বিজ্ঞানীর মতে ভাইরাস প্রানী নয়।
পৃথিবীতে প্রান কবে এল তার পক্ষে অনেক সাক্ষ্যপ্রমান ইতিমধ্যেই যোগাড় করেছেন বিজ্ঞানীরা , যদিও তা নতুন আবিস্কারের সাথে প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। কিন্তু কিভাবে প্রান সৃস্টি হল সে রহস্যের এখনো উত্তর মেলে নি।
অধিকাংশ বিজ্ঞানী একমত যে পৃথিবীতে প্রথম প্রানী হল পানিতে জন্ম নেওয়া এককোষী Prokaryote প্রানী। কিন্তু পানি এলো কবে ? অগ্নিকুন্ডের গোলক পৃথিবীতে ছিল বিভিন্ন ধরনের গ্যাস যেমন কার্বন-ডাই অক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি। পানি হল হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের যৌগ। বিজ্ঞানীদের মতে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন মিলে পৃথিবীতে পানির সৃস্টি হয় চারশ কোটি বছরেরও আগে।
কোষ হল প্রানের একক। একটার পর একটা ইট দিয়ে যেমনি দেওয়াল তৈরী হয় ঠিক তেমনি বহুকোষী প্রানী তৈরী হয় অনেক অনেক কোষ দিয়ে। কোষ কিন্তু খালি চোখে দেখা যায় না, অনুবীক্ষন যন্ত্রের দরকার পড়ে। এককোষী প্রানী আবার দুই প্রকার। কিছু এককোষী প্রানীর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস নেই – এরা হল Prokaryote। প্রকৃত নিউক্লিয়াস যাদের আছে এমন এক কোষী প্রানীরা হল Eukaryote । Prokaryote রা এক কোষী হলেও এরা কিন্তু Eukaryoteদের চেয়ে অনেক ছোট। কতটা ছোট? কোষের আকার মাপা হয় মাইক্রোমিটার দিয়ে , যা এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগের একভাগের সমান। এক কোষী Eukaryoteপ্রানী এমিবার কোষের ব্যাস সেখানে ১২-১৫ মাইক্রো মিটার সেখানে এক কোষী Prokaryote প্রানী bacteria ,র ব্যাস ্মাত্র ০.২ থেকে ২ মাইক্রোমিটার।
বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর আদিমতম প্রানীর সন্ধান খুজে পেয়েছেন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার শার্ক বে'র স্ট্রোমাটোলাইট পাথরের মধ্যে। একই ধরনের স্ট্রোমাটোলাইট পাথরে ব্যাক্টেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে গ্রীণল্যান্ডে। স্ট্রোমাটোলাইট পাথরে খুজে পাওয়া ৩৮০ কোটি বছরের পুরনো সালোকসংশ্লেষনে সক্ষম এক কোষী Cyanobacteria 'র জীবাশ্মকেই পৃথিবীর আদিমতম প্রানী হিসেবে বিবেচনা করছেন বিজ্ঞানীরা যদিও এর চেয়ে পুরনো জিরকন স্ফটিকের মধ্যে প্রানের উপযোগী কার্বনের সন্ধান পেয়েছেন তারা। বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী পৃথিবীর জন্মের পর পঁচাত্তর কোটী বছরে পৃথিবীতে কোনো প্রানী ছিল না। সালোকসংশ্লেষনের মাধ্যমে Cyanobacteria রা তৈরী করেছিল অক্সিজেন যা বায়ুমন্ডলের অক্সিজেনের যোগান দেয় এবং এটি ছিল পরবর্তীতে অন্যান্য প্রানী সৃস্টির জন্য অপরিহার্য্য।
পৃথিবীতে প্রথম বহুকোষী প্রানীর জন্ম হয় ষাটকোটি বছর আগে। সাতান্ন কোটি বছর আগে প্রথম দেখা যায় আর্থোপোডা বা জোড়া পায়ের প্রানী যেমন মাকড়শা বা চিংড়ি। প্রথম মেরুদন্ডী মাছের দেখা পাওয়া যায় ৫৩ কোটি বছর আগে এবং স্থলের গাছের জন্ম হয় সাড়ে সাতচল্লিশ কোটি বছর আগে।স্তন্যপায়ী প্রানীদের পৃথিবীতে প্রথম দেখা মেলে বিশ কোটি বছর আগে থেকে। প্রথম ডাইনোসরদের দেখা মেলে সাড়ে বাইশ কোটী বছর আগে এবং ৬৫ লক্ষ বছর আগে তারা পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেয়। প্রথম পাখীর দেখা মেলে ১৫ কোটি বছর আগে থেকে এবং দু পায়ে হাটা লেজবিহীন বানর বা Ape দের দেখা মেলে এক কোটী চল্লিশ লক্ষ বছর আগে থেকে। মনুষ্য সদৃশ্য প্রানী বা Hominoids দের দেখা মিলতে থাকে সাড়ে বাইশ লক্ষ বছর আগে থেকে.। আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্স( Homo sapiens) দের প্রথম দেখা মেলে দুই লক্ষ বছর আগে। পৃথিবীর বয়সের মাত্র ০.০০৪% ভাগ কাল জুড়ে পৃথিবীতে মানুষের বসবাস।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×