somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষম চিন্তা - ৩। (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

০৪ ঠা মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আর,এন,এ প্রথম?
১৯৬০ এর দশকের পর থেকে বিজ্ঞানীরা প্রানের শুরু নিয়ে তিন শিবিরে বিভক্ত হলেও “RNA প্রথম” দলের পাল্লাই ভারী। RNA কে প্রান শুরুর প্রথম অনু হিসেবে বিবেচনা করার অনেক কারনই রয়েছে। RNA অনুর এমন কিছু বৈশিস্ট রয়েছে যা DNA অনুর নেই। প্রথমতঃ DNAএর আকৃতি মইয়ের মত হওয়ায় এটি বিভিন্নভাবে ভাজ হতে পারে না, কিন্তু RNA অনুর আকৃতি লম্বালম্বিভাবে চিরে ফেলা মইয়ের মত এক বাহুসম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন আকারে ভাজ হতে পারে। RNA অনুর বিভিন্ন আকার নেওয়ার সক্ষমতা প্রোটিন অনুর সাথে তূলনীয় কিন্ত এই দুই অনুর পার্থক্য হল যে প্রোটিনের চেইন তৈরী হয় একটার পর একটা এমাইনো এসিড জুড়ে দিয়ে কিন্তু আর এন এর ক্ষেত্রে থাকে নিউক্লিওটাইড। প্রোটিন এবং আর,এন,এ অনুর গঠন প্রনালী একই রকম হওয়ায় বিজ্ঞানী Francis Crick এবং Leslie Orgel ধারনা করেছিলেন যে আর এন এ থেকে প্রোটিন এনজাইম তৈরী হওয়া সম্ভব, কিন্তু তাদের হাতে কোনো প্রমান ছিল না। তাদের বক্তব্যের সমর্থনে সাক্ষ্য প্রমান উপস্থাপন করেন মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস চেক ( Thomas check)।
চেক এবং তার দল ১৯৮০ সালে কলোরাডো ইউনিভার্সিটিতে এক কোষী প্রানী Tetrahymena কে পরীক্ষা করার সময় দেখতে পান যে RNA অনুর অংশ বিশেষ কেটে আলাদা হয়ে যাচ্ছে আবার জোড়া লাগছে। চেক এর দল সেই কোষের সম্ভাব্য সমস্ত প্রোটিনএনজাইম অনুকে পৃথক করে ফেলার পরও RNA কেটে আলাদা হওয়া এবং জোড়া লাগা চলতেই থাকে। তারা আবিস্কার করলেন যে RNA অনুর অংশ বিশেষ প্রোটিনের মত এনজাইম হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। চেক তার গবেষনার ফল প্রকাশ করেন ১৯৮২ সালে, এবং একই বছর অন্য আরেকদল বিজ্ঞানী দ্বিতীয় RNA এনজাইম আবিস্কার করে নাম দেন Ribozyme। স্বল্প সময়ের মধ্যে দুই দুটো RNA এনজাইম আবিস্কার হওয়াতে বিজ্ঞানীদের ধারনা জন্মালো যে আরো আর,এন,এ এনজাইম থাকা সম্ভব।
হারভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বিজ্ঞানী Walter Gilbert নেচার পত্রিকায় ১৯৮৬ সালে “RNA প্রথম” তত্ব তুলে ধরে লেখেন “নিউক্লিওটাইড অনু সম্বৃধ উষ্ণ পানির স্যুপের মধ্যে উদ্ভব হয় প্রানের প্রথম অনু RNA। বিবর্তনের প্রথম ধাপের এই অনু এনজাইম হিসেবে কাজ করে নিজেদের অনুকরনে আরো অন্যান্য অনু তৈরী করে।তারপর তৈরী হয় প্রোটিন এবং প্রোটিন এনজাইম যা থেকে ক্রমে ক্রমে পূর্ন জীবনের জন্ম হয়”। Walter Gilbert মানুষের জীন বিশ্লেষন বা হিউম্যান জেনোম প্রকল্পের প্রথম দিকের বিজ্ঞানী। “আর,এন,এ প্রথম” তত্বের সুবিধাজনক দিক হল যে আর,এন,এ তত্ব দিয়ে শূন্য থেকে ক্রমে ক্রমে প্রানের উদ্ভবের জটিল অনুগুলো তৈরীর স্তরগুলো ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
২০০০ সালে “আর,এন,এ প্রথম" তত্বের সমর্থনে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করেন বিজ্ঞানী Thomas Steitz । বিজ্ঞানী Steitz প্রানের বিভিন্ন অনু নিয়ে ত্রিশ বছরেরও বেশী গবেষনা করেন এবং ১৯৯০ এর দশক থেকে রাইবোজোমের উপর কাজ করা শুরু করেন। কোষের রাইবোজোম প্রোটিন অনু তৈরী করার ফ্যাক্টরী। ২০০০ সালে বিজ্ঞানী Steitz এর দল রাইবোজোমের বিস্তারিত গঠন আবিস্কার করেন। তারা দেখতে পান যে রাইবোজোমের কেন্দ্র আর,এন,এ দিয়ে তৈরী যা অন্যান্য অনু যেমন প্রোটিন অনু তৈরীতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। Thomas Steitz একজন রসায়নে নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী।
রাইবোজোম সমস্ত প্রানী কোষের অন্যতম প্রাচীন মৌলিক উপাদান। রাইবোজোম ফ্যাক্টরী আর,এন,এ অনু দিয়ে তৈরী প্রমানিত হওয়ায় “আর,এন,এ প্রথম তত্ব” অধিকতর গুরুত্ব লাভ করে। যে দুটো মৌলিক প্রশ্নের আজও সমাধান হয় নি তা হল - আর, এন, এ থেকে প্রানের সমস্ত উপাদান তৈরী হওয়া সম্ভব কিনা এবং আর,এন,এ' ই প্রানের বিবর্তনের প্রথম অনু ছিল কিনা? Steitz তার আবিস্কারের জন্য ২০০৯ সালে রসায়নে নোবেল প্রাইজ লাভ করেন। তবে আর,এন,এ দিয়ে যদি প্রান শুরু হয় তবে এই আর,এন,এ গুলোর নিজেদের কপি তৈরী করার সক্ষমতা থাকা ছিল অপরিহার্য্য। কিন্তু Walter Gilbert আর,এন,এ প্রথম তত্ব উপস্থাপন করার ত্রিশ বছরের পরও নিজেদের কপি পুরোপুরি তৈরী করতে সক্ষম RNA বা DNA র সন্ধান মেলে নি। নিজেদের কপি তৈরী করতে RNA বা DNA উভয়েরই বহু সংখ্যক এনজাইমের দরকার পড়ে। নিজেদের কপি তৈরী করতে সক্ষম RNA খুজতে শুরু করেন হারভার্ড মেডিকেল স্কুলের বিজ্ঞানী Jack Szostak। জীন এর বয়স বৃদ্ধি রোধের রহস্য আবিস্কার করে ১৯৮০ সালে নোবেল প্রাইজ লাভ করেন বিজ্ঞানী Szostak। ১৯৮৮ সালে বিজ্ঞানী Check নিজেদের দৈর্ঘ ১০ নিউক্লিওটাইড বাড়াতে সক্ষম আর,এন,এ এনজাইম আবিস্কার করেন। এর পর Szostak এর দল এমন এক প্রকার আর,এন,এ এনজাইম আবিস্কার করেন যা আর, এন্‌ এ এর কপি তৈরী করাকে ৭০ লক্ষ গুন বাড়াতে সক্ষম। ২০০১ সালে Szostak এর প্রাক্তন ছাত্র এম,আইটি(MIT- Massachusets Institute of technology, Boston USA) 'র বিজ্ঞানী David Bartel এক ধরনের আর,এন,এ এনজাইম আবিস্কার করেন যা তার নিজের দৈর্ঘ্য বাড়াতে সক্ষম। তিনি তার আবিস্কৃত আর,এন,এ এনজাইমের নাম দেন R18 যা মূল আর,এন,এ এনজাইম অনুর অনুরুপ ১১টি নিউক্লিওটাইড তৈরী করতে সক্ষম যেটি মূল আর,এন,এর অনুর দৈর্ঘের ৬% ভাগ । এরপর ২০১১ সালে কেমব্রিজের বিজ্ঞানী Philipp Holliger তৈরী করেন অপর আর,এন,এ এনজাইম যা নিজে থেকেই নিজের দৈর্ঘের ৪৮% ভাগ অনুরুপ অনু তৈরী করতে সক্ষম। নিজেদের ১০০% অনুরুপ কপি তৈরী করতে সক্ষম আর এন এ এনজাইমের সন্ধান আজও মেলে নি।
“ আর,এন,এ এই প্রথম” তত্ব দিয়ে জীবনের আবির্ভাব পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। উপরন্ত রসায়নাগারে RNA অনু তৈরী করা খুবই দুরুহ ব্যাপার। কিছু কিছু বিজ্ঞানী বিকল্প অনুকে জীবনের প্রথম অনু হিসেবে বিবেচনা করা শুর করেন। ১৯৯১ সালে ডেনমার্কের বিজ্ঞানী Peter Nielson, DNA অনুর অনুরুপ PNA ( Polyamide nucleic Acid) অনু তৈরী করে তাকে DNA এবং RNA এর পূর্বসুরী অনু হিসেবে উপস্থাপন করেন। PNA অনু অনেকটা DNA অনুর মতই। উরি মিলার পরীক্ষার বিজ্ঞানী Stanley Miller ডেনিশ বিজ্ঞানী Nielson কে সমর্থন করেন। ২০০০ সালে কয়েকবার স্ট্রোকে আক্রান্ত মিলার, মিথেন, নাইট্রোজেন এমোনিয়া এবং পানি দিয়ে তার পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করে PNA ( Polyamide nucleic Acid) অনু তৈরী করতে সক্ষম হন। PNA ( Polyamide nucleic Acid) এর অনুরুপ অনু TNA (Threose Nucleic acid) ও প্রানের আদিতে তৈরী হওয়া অপর এক আদিম অনু যা থেকে তৈরী হয়েছিল RNA এবং DNA । (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×