somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ফরিদপুর ভ্রমণ

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফরিদপুর আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকা। গোপালগঞ্জ মুকসুদপুর শ্বশুরবাড়ি। ফরিদপুর তাদের একাধিক আত্মীয়স্বজন থাকে। এবার অফিসের শত ব্যস্ততার মাঝেও ছুটি নিয়ে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যেতে হলো ফরিদপুর। মূল শহরে নয়। শহর থেকে বাইরে যে রাস্তাটা মাগুরার দিকে গিয়েছে ওই জায়গাটার নাম মাঝকান্দি। মধুখালির ঠিক আগে। মাঝকান্দি হয়ে যে রাস্তা গোপালগঞ্জের দিকে গেল ওই রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলে বাগানের ভেতর বাড়িটা। খুব ছিমছাম। ঢাকা থেকে পরিবার পরিজন মানে শ্বাশুড়ি, বউ, শ্যালিকা, ভাইরা , আমার তিন কন্যাসহ সবাই একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে রওয়ানা করলাম। গাড়িতে ওঠার পর থেকেই সবাই যেন (আমি বাদে) বমির মহোৎসব শুরু করে দিল। আমার ছোটো দুই মেয়ে অবশ্য বাদ। দৌলতদিয়া ফেরিতে উঠে সেটা থামল। বাকি রাস্তা আল্লাহ আল্লাহ করে কাটিয়ে দিলাম।
নতুন শ্বশুরবাড়ি । তাই মিষ্টি কিনতে হবে। চলে এলাম মধুখালী বাজারে। বাগাটের মিষ্টি প্রায় পনের কেজি মতো কিনলাম। দোকানি ইয়া বড় রসগোল্লা খাওয়ালো। দুইটা খাওয়ার পর আমার দুপুরের ভাত খাওয়াই হলো না। রাতে খেলাম একবারে। ও হ্যাঁ, আসল কথা তো বলাই হয়নি। আমাদের বরণ করা হলো। কুলা, দুর্বা ঘাস, রঙিন হাড়ি এবং আরো কত কি যে ছিল। একটা বিষয় বুঝলাম, এই এলাকাতে প্রচুর খেজুর ও তাল গাছ। আছে বাগানের পর বাগান লিচু । এবং বাঁশঝাড়।
গ্রাম এলাকা। তবে ছিমছাম। মসজিদ একটু পরপর চোখে পড়ল দু একটা করে। যাই হোক পরদিন অনুষ্ঠান। যে কারণে ঢাকা থেকে যাওয়া।
বিনোদোন পর্ব: ঢাকা শহরেরর শত ব্যস্ততার মাঝে আমরা বিনোদন খুঁজতে টিভি রিমোট হাতড়ে মরি। কিন্তু বিজ্ঞাপনের অত্যাচারে সেখানেও অসহায়। কিন্তু গ্রামে যে বিজ্ঞাপন ছাড়াই এত বিনোদন জমা ছিল সেটা আপনারা কেউ না দেখলে বুঝবেন না। কয়েকটা উদাহরণ দিই। গিয়ে দেখি বিশাল ডেকসেট ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু কেউ গান বাজাচ্ছে না। আমি গিয়ে আমার অ্যান্ড্রুয়েড স্যামসাং মোবাইলে নতুন যতো হিন্দি গান আছে বাজানো শুরু করলাম। রাতে এল বিনোদনের ফেরিওয়ালারা। গ্রামের উঠতি তরুণ যুবকরা মিলে ব্রেকড্যান্স দিল। গানের তালে তালে। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরাও বাদ গেল না। এদের নাচের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। কিন্তু যে রিদমে পায়ে পা মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন নাচল, আমি সত্যি অভিভূত। মানিব্যাগ বের করে সবাইকে টাকা দিতে শুরু করলাম।
এরপর এল কৌতুকাভিনয়। ব্যাপারটা এমন: মোবাইলে মীরাক্কেল বা অন্য কোনো স্থানীয় অভিনেতাদের কৌতুকের খন্ডাংশ বাজাল ওরা। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেকাপ, গেটাপ তো আছেই। এবং ডাবিংয়ের মতো সংলাপ। এদের সৃষ্টিশীলতা দেখে আমি তো অবাক! আর ওদের অভিনয় দেখে সবাই হেসে গড়াগড়ি যাওয়ার জোগাড়। রাত ২টা পর্যন্ত গান, নাচ ও অভিনয় চলল।
পরদিন অনুষ্ঠান। একদিন পর শ্বশুরবাড়িতে বাজার করতে হবে। এটাই নাকি ওখানকার নিয়ম। নতুন শ্ব্বশুর বাড়ি বলে কথা। আসলে তো গেলাম বিয়ের ১০ বছর পর। সে যাই হোক ওখানে কাছাকাছি বাজারে নাকি মাছ নেই, এজন্য ঠিক হলো অনেক দূরে নকুলহাটি যেতে হবে। বোয়ালমারি, চাঁদপুর, সালথা (সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর পৈতৃক ভিটা), জয়কালী, এরপর নকুলহাটি। রাস্তা নির্জন। পিচঢালা পথ। স্কুলের মেয়েরা বাড়ির পথ ধরছে। অসাধারণ লাগছিল। এক পর্যায়ে হাটে পৌঁছালাম। মোটামুটি মানের থানা পর্যায়ের হাট হবে হয়তো । কিন্তু আমরা হাট শুরুর এত আগে পৌঁছে গেছি যে ওই দুপুরে খাঁ খাঁ রোদের মধ্যে বাজারে বসে থাকতে হল। আমি একটা সেলুনে ঢুকে সেভ করলাম ওই ফাঁকে। সেভ করার পর দিলাম লম্বা ঘুম। বাজারে সবার মুখে একটাই দেখি আলোচনা@ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা কেন এভাবে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারল। (আগেরদিন ছিল ওই সেমিফাইনাল)। কিভাবে কাঁদল মরনে মরকেল আর ডি ভিলিয়ার্সরা।
অবশেষে বেলা ৩টার দিকে ছাগল ও গরু আসা শুরু হলো। একজন ব্যাপারী ধরে আমার শ্বশুর এবং মামা শ্বশুর বেছে বেছে ছাগল একটা কিনল। ৬ হাজার ৪ শ দিয়ে। সিঙাড়া আর কলা কিনলাম দুই ফানা। পানির বোতল ছিলই। এরপর আসার পথে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে বাড়ির পথ ধরলাম। কাছাকাছি একটা বাজার নামটা সম্ভবত চাঁদপুর বাজার, বোয়ালমারির মধ্যে পড়েছে। বটগাছ আছে বাজারেরর পাশে। সেখান থেকে পানসুপারি কেনা হলো। ও হ্যাঁ। আমরা গিয়েছিলাম ব্যাটারি চালিত ভ্যানগাড়িতে। পথে সেটা একবার নষ্টও হলো। একপর্যায়ে ভালো হলো অটোমেটিক। এজন্যই বোধহয় স্থানীয় লোকে এই গাড়িকে অটো বলে!
বাজার শেষ করে যখন বাড়ি ফিরলাম সকালের সূর্য বিকেলে দূর দিগন্তে হেলে পড়েছে।
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×