somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ কেমন বর্ষবরণ!

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘শোনো, তোমার জন্য একটা পাঞ্জাবী পছন্দ করছি’–ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে বউয়ের আহ্লাদি গলা।
তুমি না বাবুকে আনতে স্কুলে গেছো? –এ পাশ থেকে রোমেলের উত্তর।
হ্যা, বাবুর স্কুল থেকে ফেরার পথে সান​জিদা ভাবী আমাকে মার্কেটে ধরে আনল।
‘ও আচ্ছা তাই বলো।’
আজ অফিসে জরুরী মিটিং ছিল। এজন্য আজ আর মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে পারেনি রোমেল। শুধু মোটরসাইকেলে করে বউকে নামিয়েই ছুটেছে অফিসের পথে।
এ এক অন্য রকম বিড়ম্বনা। যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সবাই জানেন কত রকম হ্যাপা থাকে এখানে। রোমেলের ছিল ডে–অফ (সাপ্তাহিক ছুটি)। কিন্তু ওই দিনই জরুরী মিটিং। কি আর করা, মেয়ে স্কুলে রেখেই চলে এসেছে। এরপর বউয়ের কাজ ​ছিল মেয়েকে স্কুল থেকে আনা। কিন্তু সেখান থেকেই
পাঞ্জাবী কিনতে মার্কেটের উদ্দেশ্যে গেল বউ।
এতক্ষণে রোমেলের মনে পড়েছে আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। এজন্যই রোমেলের জন্য উপহার। কিন্তু রোমেল তখনও জানে না ওর জন্য আরও কি ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছিল। অফিসের মিটিং শেষে আরও কয়েকটি কাজ শেষে যখন রোমেল বাড়িতে ঢুকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে বসেছে ওমনি এল ফোনটা, ‘ভাই আপনাকে কাল অফিস করতে হবে।’ প্রথমে ভেবেছিল মজা করছে অফিস থেকে। কারণ নববর্ষের দিনটা সাধারণত বন্ধ থাকে অফিস। এবার মাস ছয়েক আগে নতুন নিয়ম হয়েছে ছুটি–ছাটাতেও ডিউটি করতে হবে । (য​দিও ওভারটাইমের রেট একটু বেশি এ​দিন, কিন্তু টাকা দিয়ে কি সব হয়!)
আসলে কাজ কর্ক করতে বা টানা অমানুষিক পরিশ্রমের প্রতি কখনোই অনীহা নেই রোমেলের! এখন শুধু ভাবে রোমেল আহা, এমন করে পড়াশুনার প্রতিও যদি সামান্যতম আগ্রহ থাকতো তাহলে এমন পচা চাকরি করে জীবনটা তামা তামা করতে হতো না! অফিসের আদেশ শিরোধার্য–এমনটাই মেনে ভাবছে কথাটা বউয়ের কাছে কিভাবে উপস্থাপন করবে রোমেল। অনেকে ভাবতে পারেন রোমেল বউভীতু টাইপের ছেলে। আসলে ঘটনা তা না। শান্তি বজায় রাখতে সংসারে অনেক কিছুই স্যাক্রিফাইস করতে হয়। সমস্যা হলো– রোমেলের বউ অনেক কিছুই বুঝতে চায় না, যা তার পেশার সঙ্গে যায়। এমন বউকে রোমেলের মা কেন যে তার কাঁধে গছিয়ে দিয়েছিল তা আল্লা মালুম।
সে যাক। রাতে ব্যাপারটা বলি বলি করে বলার চেষ্টা করেও পারেনি। ক্লান্ত রোমেল দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সকাল বেলা আর পারেনি। বউ যখন ঘুম থেকে উঠেই বলল যে এই পাঞ্জাবি পরবা তুমি। আমি পরব শাড়ী। এরপর বিকেলে তুমি আর আমি টিএসসিতে ঘুরব। ঠিক তখনই ঘটল বিপত্তি। অতঃপর বলতেই হলো, ‘আজ আমার অফিসে যেতে হবে।’
এরপর যা ঘটল তা প্রায় সময়ই ঘটে থাকে রোমেলে জীবনে। প্রথমে নতুন কেনা সাধের পাঞ্জাবীটা ছেঁড়ার চেষ্টা চলল। কিন্তু নতুন বলেই কিনা বোতামের নিচের কিছু অংশ খুলে গেল। হাত থেকে পাঞ্জাবী কেড়ে নেওয়ার পরও রাগে ফুসতে লাগল বউ। পাঞ্জাবীটা দলামচলা হয়ে এক কোণে নিরীহ গোবেচারার মতো অসহায়ের চোখে এই দম্পতির ঝগড়ার দৃশ্য দেখল। ঝগড়ার ফাকে একবার তো বলেই দিল রোমেল, তাহলে আমি আজই রিজাইন করে ফেলি, কি বলো? এসব আর রোজ রোজ ভালো লাগে না। সত্যিই ভালো লাগে না রোমেলের। কথাগুলো কাউকে বলতেও চায় না সে। মাঝে মাঝে মনে হয় কেন যে মায়ের জোরাজুরিতে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল। যদি আজীবন ব্যাচেলর থাকা যেত!
একটা কথাই ভেবে আফসোস লাগে রোমেলের–––নিজের স্বামীর পেশার প্রতি এতটুকু সম্মান নেই বউয়ের।
অফিসে এসে যথারীতি কাজ শুরু করে দিল রোমেল। কাজের মাঝেই ভুলে থাকতে চাইল সব কিছু। কিন্তু চাইলেও কি ভোলা সম্ভব? এই জীবন আর ভালো লাগে না রোমেলের। মনে হয় তেলাপোকা, টিকটিকিও বোধ হয় তার চেয়ে অনেক সুখী !

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×