গত এক দশক যাবৎ আমার হাতের লেখার অনেক অবনতি হয়েছে। কিন্ত গত বছর আমার হাতের লেখার উন্নতির জন্য গুরুত্তপুর্ন সময় ছিল। আগে আমি যেন ঠিক মত কলম ধরতে পারছিলাম না। আমি দেখলাম, আমার হাতের লেখা এত বাজে হয়েছে যে, আমি আমার লেখাতেই শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না আর লেখা ছিল একেবারে আপরিষ্কার। আমার অষ্টম শ্রেণীর লেখাগুলো এর চেয়ে ভালো ছিল।
যাইহোক!
বর্তমানে কম্পিউটার বাঁ স্মার্টফোন কি হাতের লেখাকে আপ্রয়োজনীয় করে দিয়েছে?
আমি কিন্ত সেটা মনে করি না। হাতের লেখা সুন্দর করা পরিক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার একটি কৌশল। আবার আরেকটি কথা প্রচলিত আছে যে, একবার লিখা দশবার পড়ার সমান। আমি এখন ও কোন কিছু মনে রাখার প্রয়োজন হলে সেটা লিখে ফেলি কিন্ত সেটা টাইপ করি না।
অনেক বড় বড় calligrapher বা হাতের লেখা বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, বৃদ্ধ বয়সে ও হাতের লেখা পরিবর্তন বা সুন্দর করা সম্ভব। বৃদ্ধ বয়স তো পরে, যারা যুবক বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হাতের লেখা সুন্দর করা খুব জরুরি।
এখন কথা হচ্ছে, কিভাবে আপনি হাতের লেখা পরিবর্তন করতে পারবেন?
আপনি যদি প্রতিদিন লেখা অনশীলন করেন তাহলে দেখবেন যে তৎখনাত আপনার হাতের লেখার একটা পরিবর্তন চলে এসেছে। আর পুরিপুরি ভালভাবে সুন্দর করে লিখতে চাইলে, নিচের টিপস গুলো নিয়মিত ফলো করুন, আশা করি, ভালো ফলাফল পাবেন।
১। কলম বাছাইঃ আপনি সুন্দর করে লিখাতে চাওয়ার আগে আপনার কলমটির কথা একটু চিন্তা করুন। আপনি ভালো ভাবে লিখতে চাইলে চিকন বল পেন দিয়ে লিখতে পারেন। কিন্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, যদি মোটা বল পেন দিয়ে আপনি প্র্যাকটিস করেন তাহলে আপনি কলমের উপর আধিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
তবে আমার মতে , আপনি চিকন বল পেন দিয়ে প্র্যাকটিস করেল সুবিধা বেশী পাবেন। এটা দিয়ে লিখলে আপনি আরামে লিখতে পারবেন আর আপনার মনে হবে যে, কলমটি যেন অক্ষরের উপর দিয়ে নদীর পানির মত প্রবাহিত হচ্ছে।
২। আপনার অঙ্গভঙ্গি যাচাই করুনঃ পিঠ সুজা করে বসুন আর মনে করুন যে আপনি সমান্তরাল জায়গায় বসে আসেন। আর পা গুলো হালকা বাকা রেখে বসুন। আপনার হাত এবং বাহু শিথিলায়ন করুন। লিখার আগে আপনার হাতটাকে কয়েকটা ঝাকুনি দিন যাতে মনে হয় আপনার হাত অলস হয়ে গেছে। আসলে, ঝাকুনি দিলে আপনার হাত অলস হবে না বরং আপনার লেখার স্পিড বেরে যাবে।
অনেক বাচ্চারা যখন লিখে তখন তাদের হাত পৃষ্ঠার চারদিকে হাত বাকা করে লিখে। কিন্ত , লিখা সুন্দর হয় আপনি যদি পিঠ সুজা করে টেবিলে বসে লিখেন যাতে করে আপনার আঙ্গুল বা হাত যে দিকে মনে চায় সে দিকেই ঘুরাতে পারেন।
৩। খাতা বাছাইঃ রেখা যুক্ত খাতা , যেমন- আমরা বলি, বাংলা খাতা , ইংরেজি খাতাঃ এগুলর উপর লেখা অনুশীলন করার চেষ্টা করুন। তবে, খাতাটির ঘর গুলো যেন বেশী চিকন বা বেশী মোটা না হয় সেটা নিশ্চত হয় নেন। কারণ একটু বড় কিন্ত নর্মাল ফাকা ঘর যুক্ত খাতায় অক্ষরগুল সঠিক ভাবে বসতে সাহায্য করে।
তবে আপনার লেখার যদি উন্নতি হয়ে থাকে তখন আপনি অন্য খাতায় অনুশীলন করে পারেন।
৪। লেখার অবনতিঃ আমি খুব দ্রুত লিখি সম্ভবত কারণ হচ্ছে, আমি যে টাইপ করি সে স্পিডটা ধরে রাখতে। এটা আমার লেখাকে বাজে করে দিয়েছে। আপনার যদি কোন পরীক্ষা বা তাড়াতাড়ি লেখার জন্য জোর জবরদস্তী করা হয়, তাহলে আপনার লেখার সৌন্দর্যের অবনতি ঘটতে পারে।
যদি এইরকম করার প্রয়োজন না পড়ে, তবে ধীরে ধীরে লিখে অক্ষর বিন্যাসের দিকে নজর দেয়া উচিত। এতে, অক্ষরগুলো সুন্দর করে বিন্যাস হবে এবং এর নিয়মিত অনুশীলনে আপনার লিখা দিন দিন সুন্দর হবে।
৫। স্টাইল নকল করাঃ হাতের লেখা সুন্দর এমন কয়েকজনের হাতের লেখা দেখে লেখার যে স্টাইলটা আপনার কাছে ভালো লাগে সেটা প্র্যাকটিস করুন এবং স্টাইল নকল করার চেষ্টা করুন। একটি খাতা নিয়ে সে স্টাইলটা নিয়মিত কয়েকদিন প্র্যাকটিস করতে পারেন।
যত বেশী একটি লেখার স্টাইলকে প্র্যাকটিস করবেন, ওই লেখার স্টাইলটা আয়ত্তে আনাটা তত বেশী সহজ হয়ে উঠবে। আরও বেশী ভালো হয়, ওই স্টাইলের লেখক, কিভাবে তার অক্ষরগুলিকে বিন্যাস করছেন, কিভাবে কলমটা ধরছেন অর্থাৎ তার লেখার সময় তার লিখার বিষয়ে যাবতীয় খুঁটিনাটি লক্ষ্য করা। তবে এটি করতে হবে, প্র্যাকটিস এর পাশাপাশি। মনে রাখবেন, পর্যাপ্ত প্র্যাকটিস এর বিকল্প নেই।
৬। হাতের লেখা পরিক্ষাঃ একটা রেখা যুক্ত শিট নিন এবং স্বরবর্নগুলো একসাথে লিখুন। এখন দেখুন কোন অক্ষরটা লিখতে আপনার সমস্যা হচ্ছে। আপনার কি ছ, ঋ, ইত্যাদি অক্ষরগোল লিখতে সমস্যা হচ্ছে? তাহলে, এ অক্ষর গুলো বার বার অনুশীলন করুন।
আপনি লিখার সময়, আপনার চোখের দিক এবং চিন্তা কেন্দ্রিভুত করে লিখার চেষ্টা করুন, আপনি প্রকৃতিপক্ষেই লেখার উন্নতি করতে পারবেন।
৭। অক্ষরের উচ্চতা পরিক্ষাঃ আপনার লিখার সময় অক্ষর গুলো অবশ্যই একটা অপরটার সমান উচ্চতায় থাকতে হবে। যদি আপনার লেখা অক্ষর গুলো পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত এবং সমান উচ্চতায় না থাকে তাহলে সে লেখা গুলো পড়তে সমস্যা হবে। ফলে আপনি পরীক্ষায় ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবেন না। কারণ শিক্ষক যদি আপনার পরিক্ষার খাতা পড়তেই না পারেন, তিনি নাম্বার দিবেন কিভাবে?
তাই , লেখা সুন্দর করতে চাইলে প্রত্যেকটি অক্ষর আলাদা আলাদা বার বার অনুশীলন করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না অক্ষর গুলো সমান সমান উচ্চতায় না আসে।
৮। সময় নষ্ট করাঃ আপনি আজেবাঝে লিখে আপনার সময় একটু নষ্ট করতে পারেন। একটা খাতা নিন এবং যা মনে আসে তাই ঐ খাতার উপর লিখুন।
লেখার সমায় আপনার চোখ এবং আপনার হাত কিভাবে কাজ করছে সেটা খেয়াল করতে পারেন। আশা করি আপনার লেখা উন্নত করতে এটা অনেক উপকারে দিবে।
৯। বই পড়ুনঃ হাতের লেখা উন্নত করার ওপরে অনেক ধরণের বই বাজারে পাওয়া যায়। ঐ বই গুলো সংগ্রহ করে প্রতিদিন একটু একটু পড়া চেষ্টা করুন। যদি পাঁচ মিনিট বিশ্রামের সময় ও পান তাহলে এ পাঁচ মিনিট আপনি দেখতে পারেন।
১০। উদ্যমঃ আপনার হাতের লেখাতে পরিবর্তন আসতে পারে। অর্থাৎ আপনি লেখা অনুশীলন করলে আপনার লেখা সুন্দর হতে পারে। কিন্ত এটা দেখতে পুর্বের চেয়ে খারাপ ও লাগতে পারে আবার ভালো ও লাগতে পারে। লেখা সুন্দর করা জন্য আপনার উৎসাহ এবং উদ্যমটাই আসল।
কোন কঠিন কাজই আর কঠিন থাকে না যখন যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে পর্যাপ্ত অনুশীলন করা হয়। সুতরাং, হাতের লেখা সুন্দর করার জন্যও আমাদের যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন করা বাঞ্ছনীয়। তবেই না হাতের লেখা হয়ে উঠবে সুন্দর ও আকর্ষণীয়। মনে হবে, খাতায় মুক্তা ফুটে আছে। খাতায় নিজের লেখনীর মাধ্যমে মুক্তার মালা গাঁথতে কেই বা আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে থাকে না!
================================================================
বাংলা বইয়ের সুবিশাল অনলাইন লাইব্রেরীঃ Bangla eBooks Download PDF
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৭