গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের বহর দেখে অবাক হইনি । দয়ামায়াবীহিন অযোগ্য লোকেরাই এখন সর্বত্র চেয়ার দখল করে বসে আছে। সাধারন মানুষের মাঝ থেকেও দয়া মায়া নামক জিনিষটা ধীরে ধিরে উবে যাচ্ছে। ফেসবুক/ ব্লগে কান্নাকাটি করা প্রার্থীদের ব্যপক সমালোচনা করা হচ্ছে । এমনকি তাদের নিয়ে তামাশা করা কিছু পোস্ট , কমেন্টও দেখলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে।
বিসিএস পরীক্ষার প্রিপারেসন যে, কি জিনিষ তা নিজ চোখে দেখেছি আমার স্টুডেন্ট লাইফে। আমার সহপাঠীদের অনেকেই বিসিএস পাশ করে বিভিন্ন ক্যডারে চাকুরি করছে। তাদেরকে দেখেছি বিসিএস এর প্রিপারেশন নেয়া শুরু করেছিল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া মাত্রই। ফার্স্ট ইয়ারেই এক সহপাঠীর হাতে বিসিএস গাইড দেখে চমকে গিয়েছিলাম। সে জানায় যে '' এখন থেকেই প্রিপারেশন নেয়া শুরু না করলে মাস্টার্সের পর খুব বেশি সময় হাতে থাকে না ''!! ইউনির কঠিন পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের চাকুরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম যে, এই পরীক্ষায় বসা আমার কম্ম নয়!!
দিন রাত এক করে প্রস্তুতি নেয় সরকারী চাকুরি প্রত্যাসী এই পরীক্ষার্থীরা। সরকারী চাকুরি মানেই একটা ধারনা আমাদের মনে পোক্ত হয়ে গেছে যে, এরা সবাই ঘুসখোর। এতটা জেনারেলাইজ না করে নিজের চারপাশে তাকালে টের পাবেন যে, সব সরকারী কর্মকর্তাই ঘুসখোর নয়। সবাই বিবেক , সততা টাকার কাছে বিক্রি করে দেয়নি। ঘুসখোর তারাই যাদের রাজনৈতিক উচ্চমহলের সাথে যোগাযোগ আছে। নেটওয়ার্কের আওতায় না থাকলে ঘুস খাওয়া এত সহজও নয়। এ কারনেই গনহারে সব সরকারী অফিসারদেই এক কাতারে ফেলে দেয়া কোন অবস্থাতেই সমীচিন নয়।
মাত্র কয়েক মিনিট লেট হবার কারনে পরীক্ষার্থীদের হলে ঢুকতে না দেয়াটা অমানবিকতার উদাহরন। যে দেশে আছি সেখানে বিসিএস পরীক্ষা বলে কিছু নাই। সরকারী চাকুরি ও প্রাইভেট চাকুরির মাঝে পার্থক্য বিশেষ নেই। সরকারী বা প্রাইভেট চাকুরি পেতে হয় এপ্লাই করে ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে।এখানে বোর্ড এক্সাম মুলত ও/ এ লেভেল পরীক্ষা। কোন কারনে কেউ যদি লেট হয় তবে সে ক্ষেত্রে কি ধরনের নিয়ম এখানে রয়েছে তা নীচে দেখুন -
What happens if you are late for Olevel exam?
What should you do? Don't panic because even if you are late, you are still allowed to take the exam. Call your school immediately and cab down. You can also head down to the nearest designated secondary school and take your exam there instead! প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি যে, সিঙ্গাপুর একটি ট্রাফিক জ্যাম মুক্ত শহর। গাড়ী, ট্যক্সি , বাস বা ট্রেন যেটাতেই চরুন, তা আপনাকে ঠিক সময়ে পৌছে দেবে কাংখিত গন্তব্যে। তারপরেও আমরা সবাই মানুষ। কঠিন ডিসিপ্লনের মাঝে থাকলেও মাঝে মাঝে ভুল ভ্রান্তি হতেই পারে । তার মানে এই নয় যে , নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞানের অভাব!!
মানুষের প্রতি যদি মানুষের সহমর্মিতা না থাকে, তবে কি আমাদের মানুষ বলা যায়? দরিদ্র এই দেশে পরিবারের একজনের স্থায়ী একটি চাকুরি মানে পুরো পরিবারের চেহারা পালটে যাওয়া। কঠিন জীবন সংগ্রামে লিপ্ত বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা তাই সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৩৫