প্রতিদিনের মত সকালে আমি আর আমার অবিচ্ছেদ্য অংশ আমার সাইকেল নিয়ে বের হয়ে ঘুরছি যদি শান্তার সাথে দেখা হয় এই লোভে । আনমনে কলোনিতে ঘুরাঘুরি করছি হটাত স্বর্ণার সাথে দেখা , আমার পথ আগলে বলল ভাইয়া শুনুন, আমি কাছে গেলাম একটু ঘাবড়ে কাপা কাপা গলায় বললাম কি ? স্বর্ণা বলল ভাইয়া শান্তা আপু আপনার সাইকেল চালাতে চাইছে , আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না, এমনকি জিজ্ঞাসা করা হল না কখন কিভাবে ? স্বর্ণা চলে গেল । এরপর দিনগুলো কেমন যেন বদলে গেল , অগোছালো চিন্তা ভাবনা ভর করতে লাগল , রাতের ঘুম গায়েব ! সকালে উঠে সবুর স্যারের বাসার পাশে গিয়ে সাইকেল নিয়ে বসে থাকা । শান্তা ওর বান্ধবীদের নিয়ে আসে যায় আর আমি অবাক নিলজ্জের মত হা করে দাড়িয়ে কাটাই । বন্ধুদের বলব কিনা চিন্তায় মাথার চুল ছেরা অবস্থা । অবশেষে শিধান্ত নিলাম রাকিবকে বলা যায় কারন অর পেটে বোমা মারলেও কাউকে বলবেনা । আর আমি এইসব করে বেড়াচ্ছি জানলে বাবা নিশ্চিত মেরেই ফেলবে , এই চিন্তায় বাবা ডাকলেই ভয়ে শরীর কেঁপে উঠে । নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগল আবার পর মুহূর্তে কেমন যেন ফুর্তি ফুর্তি লাগে । চোখের সামনে ভেসে আসে শান্তা আমার সাইকেল চালাচ্ছে ............।
সন্ধায় রাকিবকে ওর বাসা থেকে ডেকে বের করলাম , সিগারেট খেতে পারিনা তবে ছয়মাসে দু একবার ফুকানো হয় । এয়ারপোর্ট এর রাস্তায় যাওয়ার আগে দুইটা গোল্ডলীফ সিগারেট নিয়ে নিলাম । রাকিব বুঝতে পারছে কিছু একটা সমস্যা তাই চুপ করে হয়ত বুঝার চেষ্টা করছে কি ধরনের সমস্যা । রানওয়ের পাশে একটু ফাকা জায়গায় বসে রাকিবকে সব বুঝিয়ে বলতেই ও লাফাতে শুরু করল , আশ্বাস দিল কোনও সমস্যা নাই দোস্ত তোর সমস্যা আমার সমস্যা, তুই কথা বলার চেষ্টা কর না পারলে আমি দেখুম । এতে একতা কাজ হল তাহল নিজেকে অনেক হালকা হালকা লাগা শুরু করল কিন্তু অন্য দিকে আমার জগৎ যেন গিলে নিল শান্তা । দুঘণ্টা বইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝতে পারি আমি কিছুই পড়িনাই এতক্ষন । নিয়মিত রাকিবের সাথে পরামর্শ করি কি করা যায় কিন্তু দিন গেলে বুঝতেপারি প্লানটা ভাল ছিলনা । আজ জানুয়ারির সাত তারিখ ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখের দূরত্ব চিন্তা করে মাথা খারাপ । তবে প্লানটা ভাল ঐদিন ওর সাথে কথা বলতে হবে ।
এর মধ্যে একদিন স্কুলের বারান্দায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আর শান্তার দিকে চোখ রাখছিলাম, দেখি স্বর্ণা আসছে , কাছে এসে বলল ভাইয়া আপানার সাইকেলটা সুন্দর শান্তা আপুকে চালাইতে দিছেন ? বন্ধুরা এর মধ্যে আমার ডুবে জল খাওয়ার কাহিনী জেনেগেছে , সবাই চুপ করে মজা দেখছে যেন । আমি বীরের মত বললাম হুম চালায়নাই এখনও তবে কথা হইছে ভ্যালেন্টাইনএ আমার সাথে সাইকেলে ঘুরবে বলছে । স্বর্ণা বলল ভাইয়া আমিতো এই স্কুল ছেড়ে যাচ্ছি বাবার বদলি হয়ে গেছে , আপনারা যেদিন একসাথে সাইকেলে ঘুরবেন আমাকে চিঠি দিয়ে জানাবেন , এই আমাদের নুতন ঠিকানা । আমি পকেটে ঠিকানাটা পুরে কোনরকম মেয়েটাকে দূর করলাম , কারন শান্তার বান্ধবীরা যদি দেখে ফেলে আমি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছি তাহলে হয়ত শান্তা রাগ করবে ।
অনেক কষ্ট করে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতটা পারকরলাম । এর আগেও ওর বান্ধবীদের মাধ্যমে কথা বলার চেষ্টা করছি কাজ হয়নাই তাই এইবার নিজেই সাহস নিয়ে একটা চিরকুট লিখে ওর বান্ধবির মাধ্যমে পাঠিয়েছি , যেখানে কাল কোথায় দেখা করতে চাই লিখে পাঠিয়েছি । সকাল হওয়ার আগেই আমি ঘুম থেকে উঠে পরলাম । নিজেকে প্রস্তুত করে সাইকেলটা নিয়ে বের হলাম । যথাসময়ে শান্তা আসল , কিন্ত কেমন যেন মনে হল কথাও কোন সমস্যা আছে । আমি একটা মুখপোড়া বোধয় যাকিছু খারাপ চিন্তা করি তাই যেন ফলে যায় আমার সাথে ... । শান্তা এসে রাগমাখা গলায় বলল সিয়াম কি পেয়েছ তুমি ? রোজ রোজ ডিস্টার্ব কর কেন ? আমি অবাক হয়ে বললাম আর ডিস্টার্ব করবনা , এই নাও সাইকেল চালাও । শান্তা আরও রেগে বলল আমি তোমার সাইকেল চালাতে চাইছি কবে ? আমাদের জুনিয়র স্বর্ণা ছিলনা ও তোমার সাইকেল পছন্দ করত এবং বলত ইসস যদি সিয়াম ভাই এর মত ওনার সাইকেলটা চালাতে পারতাম । আমার কিছু বুঝতে বাকি রইল না ......... হুদাই একটা ছ্যাকা খেয়ে গেলাম যেন । সারাদিন অনেকগুলো সিগারেট ফুকালাম । রাতে বাসায় ফিরে কেন যেন স্বর্ণার জন্য খারাপ লাগতে শুরু করল , আজব মনের খেয়াল , আলমারিতে ঐদিন কোন প্যান্ট পরেছিলাম খুঁজতে লাগলাম । এলোমেলো প্যান্টগুলোর একপাশে ভাঁজ করা কয়েকটা প্যান্টের মাঝে ঐদিনের পরা প্যান্ট টা পেলাম কিন্ত পকেটে হাতদিতেই বুকে কেমন যেন কামড় দিল । শক্ত হয়ে আছে স্বর্ণার ঠিকানা লিখা কাগজটা । এতক্ষনে মনে হল আসল ছ্যাকা খেলাম , অনেক কষ্ট করেও কাগজের লিখা আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নাই । সমস্যার শুরু হল আবার নূতন করে যখন শান্তাকে ঘিরে কল্পনা গুলতে মন নিজের খেয়ালেই স্বর্ণাকে স্থান দিল ......