নিয়ন আলতে হাটতে কেমন যেন অদ্ভুত ভাল লাগে অভির , সবকিছুর রং ভিন্ন রকম সুন্দর মনে হয়। ছোট বেলায় বাবা সাথে বেরুলে যখন সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরত সে কথা বার বার মনে পড়ে ,বড় রাস্তায় ওঠার পর নিজের গায়ের রং পর্যন্ত কতবার মিলিয়ে দেখে অবাক হয়েছে ! এসব ভাবতে ভাবতেই আবার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে , হাটার গতি বাড়িয়ে দেয় । রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আরেকবার দেখে নেয় রাস্তা সঠিক আছে কিনা ? কোন মোহ তাকে এভাবে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে তা বোঝা বড্ড কঠিন ।
রাস্তা থেকে একটু ভিতরে গলির রিক্সার গ্যারেজের কাছে আসার পর হট্টগোল শুনে নিজেকে আড়াল করে কিছু সময়ের জন্য । বুকের ভিতরের ধুক ধুক আওয়াজটা বাইরে থেকেও যেন শোনা যাচ্ছে । একটু পরে বুঝতে পারে একদল রিক্সা চালকেরা গাজা খেয়ে এখন গুলি খেলতে বসেছে আর তা নিয়েই হট্টগোলে মেতে উঠেছে কয়েকজন । সুবিধা মত সটকে পড়ে সামনে বাবুদের বাড়ি দেখে কিছুটা স্বস্তি পায় সে , তার রাস্তা ভুল হয়নি তবে। এইবাড়ির কয়েকটা বাড়ি পরে তৃণাদের বাড়ি । মস্ত বাড়ি এ বাড়িতে আগেও একবার এসেছে । তবে সেদিন ছিল অন্য রকম । অঝোর বৃষ্টির রাতে ভিজে কাক হয়ে তৃনার সাথে দেখা করতে এসেছিল , গভীর ঘুটঘুটে অন্ধকার আর বৃষ্টি এর ভিতরে কীভাবে সে এসেছিল কিছুই মনে করতে পারেনা শুধু মনে পড়ে একটা বৃষ্টিস্নাত উষ্ণ রাত । সবকিছু উপেক্ষা করে আজও অভি বাসার পিছনের দেয়াল বেয়ে তৃনার রুমের বারান্দায় গিয়ে উঠে । তৃনার ঘরের দরজা আলতো করে ভেড়ানো , রুমে ঢুকতে খুব বেশি বেগপেতে হয়না । তন্দ্রা বাতির আলোয় আজও তৃনাকে অপ্সরীর মত লাগছে । মায়া জড়ানো মুখ । অভি খুব করে গত পরশুদিনের কথা মনে করতে চায় আর মনে করতে চায় রিশানের নামের ছেলেটিকে । বারবার মনে ঘৃণার সঞ্চার করে রেল কলনির পাশের বস্তি থেকে পাঁচশত টাকায় ভাড়া করা পিস্তলটি বের করে , একটুও হাত কাঁপেনা তার , কিন্তু বুক ফেটে চীৎকার বেরিয়ে আসে অভির, সাথে গুমট কান্না । তৃনাও চীৎকার করে ওঠে ... হাত শক্ত করতে চেয়েও ব্যার্থ হয়ে অভি বুঝতে পারে নিজের শরীরের ওপর তার আর নিয়ন্ত্রন নেই এখন ।