somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু জুরানার চলে যাওয়া ও কিছু কথা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৩ তারিখ ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে যখনই মোবাইল অন করলাম, দেখলাম ওসামা ভাইয়ের টেক্সট, " Zurana is in BRI & her oxygen level is very low. Doctors are saying she is in critical stage now........." অনিকে ডেকে বললাম খবরটা। সাথে সাথে এলো এক মর্মান্তিক টেক্সট, "Baby Zurana is no more. Innalillahe wa inna ilaihe rajeun......" দুটি টেক্সটই পাঠানো হয়েছিলো রাতে, কিন্তু মোবাইল বন্ধ থাকায় পেলাম সকালে। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।

ফুটফুটে ছোট্ট শিশু জুরানা, ফারহানা ভাবী আর মারুফ ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে। মাত্র ১০ মাস বয়স। দেখে মনেই হতো না ছোট্ট ওই শরীরে বাসা বেধেছিলো হার্টের এত্ত বড় এক অসুখ। ওকে প্রথম দেখেছিলাম ১লা রমজান ওসামা ভাইয়ের বাসায়, ইফতারে। পরে অনির কাছে জানলাম ওর অসুখের কথা। ডাক্তাররা নাকি আগেই বলে দিয়েছিলেন ওর সার্ভাইবালের কোনো আশা নেই। চিন্তা করা যায় বাবা-মায়ের মনের অবস্থা তখন কি হয়? তবুও উনারা চেষ্ঠার কোনো ত্রুটি রাখেননি।

অসুস্থ অবস্থায় অনেকেই ওকে BRI (Bristol Royal Infarmary) এর চিল্ড্রেন হাসপাতালে ওকে দেখতে গিয়েছেন। কিন্তু আমি যেতে পারিনি। সাহসে কুলোয়নি। এমনকি হাসপাতালের পার্কিং পর্যন্ত গিয়েও ফিরে এসেছি। কিভাবে যাবো????? একজন বয়স্ক মানুষকে মৃত্যুসহ্যায় হয়তোবা দেখতে যাওয়া যায়, কিন্তু ছোট্ট একটি শিশুকে এ অবস্থায় দেখবো তা কিভাবে মেনে নেয়া যায়!!!! হয়তোবা আমার দূর্বল মানসিকতা অথবা ঈমান হারানোর ভয়, তাইতো দেখতে যেতে পারিনি।

কিন্তু তার জানাজায় গেলাম, ব্রিস্টলের স্থানীয় শাহ্‌ জালাল মসজিদে। আমাদের কমিউনিটির সবাই সহ অন্যান্ন দেশেরও আরো শ খানেক মুসল্লি ছিলেন। এমন একটি মানুষকেও পাওয়া যাবে না যার চোখ ভেজা ছিলো না। মারুফ ভাইকে জড়িয়ে ধরতেই তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। আমি চুপ করে রইলাম, কি ভাবে সান্তনা দেবো??? আমার নিজেই যে কান্না আটকে রাখতে পারছি না। :(( :(( :((

কথা ছিলো জানাজা শেষে অফিসে ফেরত যাবো, কিন্তু আমার এম ডি আগেই বলে দিয়েছিলো আমি যদি চাই তবে যেনো দাফনে যেতে পারি, ওই দিনে আর অফিসে যেতে হবে না। দাফন শেষে মারুফ ভাই ছোট্ট কবরে পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিলেন। দেখে উপস্থিত সবার চোখ ভিজে এলো। চলে আসার সময় দেখলাম গাড়ীর পেছনে সিটে বসে মারুফ ভাই করুন চোখে ঘাড় ঘুরিয়ে কবরের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার মনে হয় যেতে মন চাইছিলো না। কিভাবে যাবেন বুকের মানিককে এভাবে রেখে ???? আমি আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনে হয় এই দৃশ্য ভুলতে পারবনা। যখনই চোখ বন্ধ করি তইখনই দৃশ্যটি চোখে ভেসে উঠে।

ঘরে ফেরার পথে সারা রাস্তা চোখ ভিজে ছিলো। বাসায় এসে আমার আরিশাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। আমিও যে একজন বাবা। সন্তান হারানোর বেদনা যা কি তা যে বাবা-মা না হারিয়েছেন তারা কোনো দিন বুঝতে পারবেন না। আল্লাহ্‌র কাছে কায়মনে দোয়া করি, আল্লাহ্‌পাক যেনো কোনো শত্রুকেও এ রকম কষ্টের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে না নেন।

আপনাদের যাদেরই সন্তান আছে তারা তাদের সন্তানদের যতটা প্রয়োজন নেই, তার চেয়ে অনেক বেশী অবশ্যই ভালোবাসেন, জানি, কিন্তু এই লেখাটা পড়ে তাদের একটু জড়িয়ে ধরে আদর করবেন। আর আমাদের মারুফ ভাই আর ফারহানা ভাবীর জন্য একটু দোয়া করবেন, যেনো আল্লাহ্‌ পাক তাদের এই শোক সহ্য করার শক্তি দেন।

এতো কষ্টের মধ্যেও এই তরুন স্বামী-স্ত্রী যে পরিমান মানসিক শক্তির পরিচয় দিয়েছেন, তা মনে হয় ওন্য কেউ পারবেনা। আল্লাহ্‌ আপনাদের মনকে শান্ত রাখুন, আমিন।

:((:((:((:((
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×