আবার ফিরে এলো পবিত্র মাহে রমজান। ১মাসের সিয়াম সাধনার ব্রত নিয়ে সবাই যে যার মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার ইউ কে তে সামারের সময় রোজা হচ্ছে। তার মানে হলো প্রত্যেকটি দিন মোটামুটি ১৮ ঘন্টার
রোজা রাখতে হবে। এটা কোনো সমস্যা নয়, সমস্যাটা হচ্ছে গিয়ে এবারের সামার। আজকে ব্রিস্টলে তাপমাত্রা ছিলো ২৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময় ড্রাইভটাইম বিবিসি ব্রিস্টলে বলছিলো
আগামী শনিবারে নাকি তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রীতে উঠবে। জানি বাংলাদেশে অনেকেই হয়তোবা ভাববেন এ আর এমন কি!!!! কিন্তু আমারা যারা প্রবাসীরা হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রায় মোটামুটি অভ্যস্ত হতে শুরু
করেছি তাদের কাছে ১৫-১৮ ডিগ্রী তাপমাত্রা অনেক গরম। তার উপর সূর্যের অবস্থান হোরাইজনের অনেক নীচে থাকাতে তার তাপও লাগে এক্কেবারে আগুনের লেলিহান শিখার মতন। তাইতো প্রায়ই ভাবি কতোই না ভালো হতো যদি এইবার দেশে রোজা করতে পারতাম!!! সেই কবে ২০০৭ সালে শেষবারের মত দেশে রোজা আর ঈদ করেছিলাম, আহ্ হা রে!!!!
এইরকম ভাবতে ভাবতে লাঞ্চব্রেকে জোহরের নামাজ শেষ করে, কলিগরা সবাই যখন লাঞ্চে ব্যস্ত, তখন আমি আল্লাহর রোজাদার(!!!) বান্দা অনলাইনে বাংলাদেশের পত্রিকা গুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম।
হটাৎ করে চোখ আটকে গেলো একটি খবরে, ঢাকার নামীদামী পাঁচতারা হোটেলে পুরানো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বড় বাপের পোলায় খায় বিক্রি হচ্ছে। সাথে সাথে ফিরে গেলাম আমার বুয়েট জীবনের সেই দিনগুলোতে যখন
বন্ধুরা সবাই মিলে ক্লাস শেষ করে, ইফতারের সময় চকবাজার চলে যেতাম শুধু ঐ "বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় কইরা লইয়া যায়" খেতে। মনে হত হয়তোবা বেহেস্তী খানা, আহা......!!!
কতই বা দাম ছিলো, ১৯৯৫-২০০১ সালের দিকে?? ৫০ টাকা?? ৬০ টাকা?? এক প্যাকেট ৫-৬ জন অনায়াসে খাওয়া যেতো।
ভাবতে ভাবতে হটাৎ করে ভিমরী খাবার জোগাড় হলো। এবার ঢাকার পাঁচ তারা হোটেলে এক প্লেট ইফতার বিক্রি হচ্ছে নাকি ২৫০০-৫০০০ টাকায়!!!!! বলে কি??? সেদিন শুনলাম ইদানিং নাকি সেহেরীতেই
নামীদামী রেস্তোঁরাগুলোতে বুফে সার্ভিস চালু হয়েছে,মাশাল্লাহ। মাত্র ৪০০-৫০০ টাকায় (জনপ্রতি) সেহেরী খাবার সুব্যাবস্থা!!!! কে বলে বাংলাদেশের মানুষ গরীব!!!
অনেকক্ষন তেনা পেচালাম, এবার আসল কথায় আসি। রমজান মাসে আল্লাহ্ তা'লা শুধু উপোষ(!!!) দেবার জন্যই দেননি, বরং এমাসে সংযম শিক্ষা দিয়েছেন যা কিনা বছরের বাকি ১১ মাসে নিজের জীবনে
পালন করার একটা ট্রেনিং পিরিয়ড এই রমজান মাস। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু পাবলিকরা মনে হয় রমজান মাসকে একটা ফাইজলামীর পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। ফাইজলামীরও একটা সীমা পরিসীমা থাকে। কিন্তু এ যেনো
সীমাহীন ফাইজলামীর এক প্রতিযোগীতা!!! কেউ কি একবারও চিন্তা করে দেখেছে এইসব অভিজাত হোটেল রেস্তোঁরায় একজনের ইফতার বা সেহেরীর খরচ দিয়ে কতজন এতিম শিশুর এক মাসের ভোরন পোষন
সম্ভব? এদের কাজকারবার মনে হয় আইয়ামে জাহীলিয়াতকেও হার মানাবে!!!
আমি এমন বলছিনা যে আপনারা ইফতার কিনবেন না, কিন্তু তারও তো একটা সীমাপরিসীমা আছে, তাই না? যারা একদিনের সেহেরী আর ইফতারে ৫০০০-৬০০০ টাকা নামিয়ে দিতে পারে, তা-ও জনপ্রতি,
তারা কি আসলেই রোজা রাখছেন নাকি খালি উপোষ দিচ্ছেন? তারা কতোজন নিয়মিত সঠিক আয়কর দেন? নিশ্চই এমন মানুষের চাহিদা আছে , না নইলে হোটেল-রেস্তোঁরা গুলোও এমন নির্লজ্জ বেহায়াপনার
ব্যবসা করার সাহস পেতো না।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশে থেকে রোজা পালন না করে অনেক ভালো আছি। অন্ততঃপক্ষে আল্লাহ ও তার রাসুলের দেখানো পথে তো রোজা করার চেষ্ঠা করতে পারছি। দেশে থাকলে হয়তো আমিও এমন বেহায়াপনার
গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতাম। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। যেতে যেতে বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যাক্তিদের কাছে একটা প্রস্থাব রাখতে চাই, আপনারা চাইলে এইসব আভিজাত স্থাপনার গেইটে
এন বি আুর এর এক একটি বুথ চালু করতে পারেন, যেখানে তাদের খদ্দের দের টি আই এন নাম্বার এন্ট্রি করে ঢুকতে হবে। আবার বের হবার আগেই তাদের সকল আয়করের হিসাব চলে আসবে এন বি আর এজেন্টদের
হাতে। এতে লাভ অনেকগুলো, একঃ সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, দুইঃ এন বি আর এজেন্ট ভাইজানদের "ঈদি" আগে ভাগেই আদায় হয়ে যাবে, তিনঃ উনাদের "ঈদি"র ঠেলায় নিরীহ জনগণ হয়রানী হবেন
না, ইত্যাদি ইত্যাদি......
পুনশচঃ রীতিমত ঝগড়া করে আফিসের আই টি ম্যানেজারকে দিয়ে আমার পিসিতে বাংলাদেশী অনলাইন রেডিও শুনার জন্য সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিলাম আজ। প্রথমেই শুনলাম রেডিও ফুর্তি নামক একটি এফ এম
রেডিও। ওমা!!!! এ দেখি হিন্দি গান শুনাচ্ছে!!!! এটা কি বাংলাদেশী কোনো রেডিও নাকি ভারতীয়। এটাই কি আজকলকার ট্রেন্ড??? রেডিও ডিজে ভাইজান যে সকল বাংলিশ স্টাইলে কথা বলছেন তা না বাংলার না ইংলিশ (ব্রিটিশ, আমেরিকান, অসি, জামাইকান) কোনোটারই শুদ্ধ উচ্চারনের ধারে কাছেও যাচ্ছে না। এটাই কি আসলে আধুনিকতা নাকি আমার মত গাধা প্রবাসীরা সবাই এখনো "ক্ষে্তের আইল" থেকে গেছে??? বাংলাদেশ কি বাংলাদেশ আছে নাকি তা আজ ভারতের তৃতীয় শ্রেনীর কোনো উপনিবেশে পরিণত হয়েছে???
দেশী ভাইজানেরা কেউ এই আধমকে এওটু আলোর পথ দেখাবেন কি???