প্রতি বছর ঈদ আসে আর ঈদ চলে যায়, সাথে চলে লঞ্চডুবিতে নিয়ম মেনে শ'খানেক মানুষের চলে যাওয়ার মিছিল। ঈদে ঘরমুখো মানুষের মিছিল শুরু হবার আগে থেকেই গণমাধ্যমে প্রচারণা শুরু হয় লঞ্চে যেনো কেউ অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে না উঠেন, কিন্তু কে শোনে কার কথা!!!! বাংলাদেশের মত গণমাধ্যমের বিস্তৃতি আমি পৃথিবীর আর কোনো দেশে দেখি নি, কিন্তু তা-ও কারো শিক্ষা হয় না। প্রতি বছরই চলছে এই মৃত্যুর মিছিল।
যে বাবা তার তিন সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে লঞ্চে আজ সকালে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে উঠেছেন, তিনিই পরে লঞ্চডুবিতে যখন স্ত্রী-পুত্রকে হারিয়ে বিলাপ করেন তখন তাকে দোষ দিব নাকি করুণা করব? প্রথম লাশ হিসেবে শিকদার মেডিকেলের যে ভবিষ্যত ডাক্তার এর লাশ উদ্ধার হয়, তিনি কি জানতেন না, যে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে উঠতে হয় না? ৮৬জন মানুষের ধারণ ক্ষমতার লঞ্চে যখন ৩০০ যাত্রী উঠেন, তখন কি পূর্ববর্তী ঘাট থেকে ছেড়ে আসা অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের লোকজন নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন? দুটো বেশি পয়সার লোভ সামলাতে না পারা লঞ্চ মালিকের কিংবা সারেঙের কোনো আপনজন কি আজ এই মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছে? কিংবা BIWTA অথবা নৌ মন্ত্রনালয়ের কোনো কর্তাব্যক্তির পরিজন?
না, মৃত্যুর মিছিলে সারিসারি যে আজ সাধারণ মানুষ। যারা নিজের ভালো নিজেই বুঝে না। আর তাইতো বাবা হয়ে নিজের স্ত্রী-পুত্রের নির্ঘাত মৃত্যু জেনেও আসছে কোরবানির ঈদে আবার কোনো নির্বোধ উঠবে লঞ্চে, শুধু অতিরিক্তি নয় বরং মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী হয়ে। আবারও যখন কোনো মেডিক্যাল কিংবা প্রকৌশল পড়ুয়া মেধাবীর লাশ ভেসে উঠবে, তখন তাকে মেধাবী বলবো নাকি মহাবেকুব বলবো? প্রতিবছরের মত নিয়মে পরিণত হওয়া লঞ্চডুবিতে যে ছোট কচি প্রানগুলো ঝরে যায়, তার দোষ কি আমি কর্তৃপক্ষকে দিবো নাকি তার অভিভাবককে?
গতকালের মাওয়া ঘাটের লঞ্চডুবিতে নিহত সকলকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন, আর এখনো যারা বসে আছেন কালকেই কোনো একটি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে উঠবেন তাদের আল্লাহ সুমতি দিন।