ঘটনাক্রম ১: কয়েকবছর আগে দেশে এক "বড়লোক" আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেলে আলাপচারিতার মাঝখানা আমার প্রায় সমবয়সী, কিন্তু সম্পর্কে মুরব্বী, আত্মীয় হটাৎ করে সাধলেন, "বিয়ার খাবে অথবা স্কচ?" ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে শুধু এইটুকুই বলতে পারলাম, "সরি মামা, আমার এইসব বদভ্যাস নেই"।
ঘটনাক্রম ২: তারও বছর দুয়েক পর আবার যখন দেশে গিয়েছি তখন আমার আর্কির কিছু বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় একজন জানি দোস্ত রসিয়ে রসিয়ে তার টাকিলা খাবার বর্ণনা দিচ্ছিলো। গল্প শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "কিরে, আসার সময় ডিউটি ফ্রি থেকে আমার জন্য দুই বোতল আনতে পারলি না?" বললাম, "নারে, আমি ড্রিঙ্ক করি না।"। উত্তরে বললো, "কি তাইলে বালের (ভাষার জন্য দুঃখিত) বিদেশে থাকস, হালায়!!!"
ঘটনাক্রম ৩: ২০১০ সালে এমিরেটস এয়ারলাইন্স এ দেশ থেকে ফিরছি। ফিরতি পথে ফ্লাইট দুবাই হয়ে। আমার পাশে বসেছেন আমারই মত এক যুক্তরাজ্যগামী যাত্রী, সম্ভবত প্রথমবার এর জন্য। যখন লাঞ্চ দেয়া হচ্ছিলো, তখন বেভেরেজ হিসেবে আমি স্প্রাইট চাইতেই পাশে থেকে উনি বলে উঠলেন, "কি ভাই এইসব হাবিজাবি খেতে চান, বিয়ার খান বিয়ার, এইগুলান এইখানে মাগনা"। মুচকি হেসে আমি বললাম, "সরি ভাই, আমি মুসলমান।"
আমাদের প্রবাসীদের সম্বন্ধে কেনো যেনো দেশের মানুষের একটা বিরূপ ধারনা আছে, যেনো বিদেশে থেকে আমরা না জানি সবসময় মদের আসরে ডুবে থাকি। যেহেতু এই পশ্চিমা বিশ্বে এলকোহল মোড়ের দোকানেই কিনতে পাওয়া যায়, তাই আমাদের পক্ষে বিয়ার, স্কচ, হুইস্কি চেখে দেখা কোনো ব্যাপারই নয়।
কিন্তু আসলে তারা জানেন না, বেশীর ভাগ আমাদের মত প্রবাসীরা খুবই রক্ষণশীল হয়। এলকোহল চেখে দেখা তো দূরের কথা, এলকোহল পান করে কেউ আমাদের বাসার ত্রিসীমানায়ও ঢুকতে পারবেনা। আমাদের মাঝে কেউ কেউ হয়তো ঠিকঠাকমত নামাজও পড়ে না, কিন্তু এই ব্যাপারে আমরা খুবই রক্ষণশীল। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই রক্ষণশীলতা কিন্তু শুধুমাত্র মুসলমানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং অন্যান্য ধর্মালম্বীদের মধ্যেও আমি দেখেছি।
সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, গত পরশু বিবিসিকে দেয়া তার সাক্ষাতকারে বলেছে (ওটাকে বলেছেন বলতে রূচিতে বাধছে), "ভেবেছিলাম মুক্ত পরিবেশে এসে মুক্তভাবে কথা বলবো, কিতু এখানেই যে খালি কালো বিড়াল"। ওই বেটা নরাধম জানেও না যে এই "কালো বিড়ালরা" যে কতটা ভয়ঙ্কর। তুই ভেবেছিস যে তুই যেখানে সেখানে মদ-গাজা খেয়ে এসে আজেবাজে বকবি আর আমরা "কালো বিড়ালরা" তোকে বাহাবা বাহাবা দিবো!!!! প্রবাসীদের "কামলা" দেয়ার কথা বলার আগে এইসব নর্দমার কীট রাজনীতিকরা ভুলে যায় যে যখন সরকারের পালাবদলের সময় আসে তখন এরা এই আমাদের মত প্রবাসীদের কাছে এসেই কুকুরের মত আশ্রয় ভিক্ষা করে।
আমরা প্রবাসীরা আর যাই হই, দেশের যে কোনো প্রয়োজনে সবার আগে আমরাই সাড়া দেই। আর তাইতো বাংলাদেশে থাকা মানুষেরা(!!!) যখন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কিংবা ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী "প্রভুপ্রতীম রাষ্ট্রের" বিশিষ্ট বাইজীদের এনে আর্মি স্টেডিয়ামে উদাম নর্তন কূর্দন করেন, তখন আমরা এই প্রবাসী কালো বিড়ালরাই শুধু তার প্রতিবাদ করি। এফএম রেডিওতে যখন নির্লজ্জ বেহায়ার মতন হিন্দি গানের সাথে আপনারা থলথলে বিশাল বপু সহকারে পা নাচাতে থাকেন তখন আমরা প্রবাসী কালো বিড়ালরা স্টেশন বদল করে অন্য স্টেশন শোনার চেষ্ঠা করি যেখানে বাংলা অনুষ্ঠান চলছে।
জানি, আমার এই ভেজর ভেজর শুনে অনেকেই হয়তো বলবে, যেমন আগেও বলেছে, এতোই যদি দেশপ্রেম তাহলে দেশে না থেকে বিদেশে কেনো পড়ে আছো কিংবা "আছেন"??? তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, ভালো হয়েছে দেশ ছেড়েছি, নাহলে তোমাদের / আপনাদের মতোই পচে গলে যে "নষ্ট" হয়ে যেতাম!!!!
পরিশেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, এই জন্য যে এই বেটা জানোয়ারকে তিনি সবকিছু থেকে অব্যহতি দিয়েছেন। কিন্তু আমি সত্যিই আন্তরিক ধন্যবাদ দিতাম যদি আপনি এটাকে অব্যহতি না দিয়ে সরাসরি "বহিস্কার করতেন!!!!!