বিজ্ঞানঃ ওহে ধর্ম, কিছু লোকে বলে, তুমি নাকি আমায় “ভয়” পাও???
ধর্মঃ মনে কর “ভয়” পাই, অথবা নাইবা পাই, আমার “অনুভুতি” বোঝার ক্ষমতা কি তোমার আছে???
বিজ্ঞানঃ আরে তুমি জান না, "ট্যানজিবল" (যা ধরা ছোঁয়া যায় এমন) কোন কিছুর বাইরে আমার কর্তৃত্ব নেই, “ভয়” কি ট্যানজিবল? আমি বুঝব কি করে বল? তবে আমাকে যারা অনুসরণ করে, তাদের কেও কেও কিন্তু বোঝে যে তুমি আমাকে ভয় পাও!!!
ধর্মঃ তারা কিভাবে বোঝে? ওরা না তোমাকেই অনুসরণ করে? মানে, তোমাকে ছাড়া ওরা কিভাবে…!!!
বিজ্ঞানঃ সেটা তো আমি নিজেও বুঝি না যে ওরা কিভাবে বোঝে। তবে ওরা আমাকে ব্যাবহার করে অনেক অনেক ডিভাইস বানিয়েছে, আরও অনেক গুলি বানাচ্ছে, তারা বলেছে যেভাবেই হোক ডিভাইসগুলির মাধ্যমে সার্চ করে সব কিছুর রহস্য বের করে ফেলবে।
ধর্মঃ হুম। তো এই পর্যন্ত আবিষ্কৃত ডিভাইস গুলির মাধ্যমে তারা কি ইনট্যানজিবল (ধরা, ছোঁয়া, দেখা, শোনা যায় না, এমন) কোন কিছু ধরতে পেরেছে???
বিজ্ঞানঃ না, তাতো পারেনি। কিভাবে পারবে, বল। এটাতো আমার “স্বভাব” বৈশিষ্ট্য যে আমি নিজে ইনট্যানজিবল কিছু বুঝতে পারি না। সেক্ষেত্রে, আমার মাধ্যমে যত ডিভাইসই তারা তৈরি করুক না কেন, সবগুলির ক্ষেত্রেই তো একই “বৈশিষ্ট্য” প্রযোজ্য। তবে তারপরেও তারা অনেক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ধর্মঃ বুঝলাম। সেক্ষেত্রে তুমি তোমার অনুসারীদের তোমার এই সীমাবদ্ধতার কথাটি খুলে বললেই তো পার। ওরা ব্যাপারটা বুঝতে পারত যে “সৃষ্টিকর্তা”, “ধর্মের” সত্যতা বের করার ক্ষমতা তোমার নাই। বৃথা চেষ্টা বাদ দিয়ে বাস্তবতা মেনে নিত। তোমাকে মানব কল্যানে কাজে লাগিয়ে ধর্মের আদর্শ মেনে চলত।
বিজ্ঞানঃ আরে ওরা তো তা জানেই। এমনকি, আমার খুবই ঘনিষ্ট এক অনুসারি তো বলেইছিল যে, “ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান অন্ধের মত, আবার ধর্মও বিজ্ঞান ছাড়া অচল”। হ্যা, মনে পড়েছে, ওর নাম ছিল আইনস্টাইন। কিন্তু ঐযে, কিছু অনুসারী, তারা তো থামছে না।
ধর্মঃ হুম। যা বুঝলাম, তোমার অনুসারীদের ভেতর কিছু সুবিধাবাদী রয়েছে। “মুক্তচিন্তার” নামে তারা তোমার অপব্যবহার করছে।
বিজ্ঞানঃ আমারও তাই মনে হয়। তবে তারা অনেক কিছু বানাচ্ছে। নতুন নতুন ফোন, ট্যাব থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট, স্পেইস-ক্র্যাফট, আবার হেলথ কেয়ার থেকে শুরু করে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, নতুন নতুন অস্ত্র, আরও কত কি? এই গবেষনার ব্যাপারটা আমি খুব এনজয় করি। এতে মানব কল্যাণ সাধিত হয়, তাই এটা এক ধরনের "পবিত্র" কাজ। তবে কি, জানো, এতো গবেষণা, অগ্রগতির পরেও পৃথিবীতে অনেক অব্যবস্থাপনা, ক্ষুধা, দেশে দেশে মারামারি। এই যেমন “লিটল বয়” আর “ফ্যাট ম্যানের” যেই “স্ক্যান্ডাল”, তা কাটিয়ে উঠতে আমার বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। এতে আমারই বা কি দোষ বল?
ধর্মঃ ওই যে, ইতোপুর্বে বললাম। কিছু ব্যক্তি, যারা তোমার নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের কর্মোদ্ধার করছে। সেক্ষেত্রে তোমার কি মনে হয়, তুমি এটার সমাধানে কি করতে পার, যা ট্র্যান্সপারেন্সি সহ মানুষের “আদর্শ” বা “মোর্যালিটি” কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবেই না তোমার নামের অপব্যবহার কেও করতে পারবে না।
বিজ্ঞানঃ কিভাবে, বল? মোর্যালিটি তো “ইনট্যানজিবল”, ভুলে গেলে??? তবে কিছু ডিভাইস শুনেছি ট্র্যান্সপারেন্সিতে সাহায্য করে। তারপরেও এত সমস্যা পৃথিবীতে, উফ। এই যেমন, সেদিন লেটেস্ট আইফোন ৬ বাজারে বের হবার সঙ্গে সঙ্গে স্টক শেষ, কত মানুষ যে কিনল। অন্যদিকে, শুনেছি, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের একভাগ ঠিক মত খাবার পায় না। আবার ধনী দেশগুলি, যেখানে আমার কদর বেশি, তারা যুদ্ধের জন্য যেই পরিমান খরচ করে, তা দরিদ্র দেশের মোট এইড এর চাইতে ১২ গুন বেশি। আবার অক্সফাম নামের এক গবেষণা সংস্থা সেদিন বলল, যে, পৃথিবীতে ২০১৬ সালের ভেতর ৯৯ শতাংশ মানুষের সম্পদ বাকি এক শতাংশের সমান হয়ে যাবে। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের স্বার্থে বা টাকার জন্য গবেষণালব্ধ প্রকৃত ফলাফলও পরিবর্তন করে তাদের সুবিধামত ফলাফল আমার নামে চালিয়ে দেয়। আমি অবশ্য এই সবই খোজ রাখি, ওরা তো সব কিছু গুগল এর মাধ্যমে আমার সার্ভারেই রাখে । আমার খুব খারাপ লাগে, জানো!!! আমি সমাধান চিন্তা করি, মাঝে মাঝে আমার তোমার কথাও মনে পড়ে, তবে তোমার ব্যাপারে ওরা একেবারেই অনাগ্রহী। তোমার ব্যাপারে ওদের বলতে শুনেছি, "এটা বিজ্ঞানের যুগ, এখন ধর্ম-টর্মের দরকার নাই, সব কুসংস্কার"। এদিকে আমি তো একা আর পারছিও না। আচ্ছা, তুমিই বলত, কিভাবে এইসব থামানো যায়?
ধর্মঃ হুম। আমি তো আগেই তোমাকে বলেছিলাম, তোমার কিছু ধ্যুর্ত অনুসারী তোমার নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এমন সুবিধাবাদী কিছু মানুষ সর্বত্র থাকে। আমারও যে এমন নেই, তা নয়। সেজন্য আমার ব্যাপারেও অনেক ভুল তথ্য ছড়ায়। যাইহোক, তবে শোন। “আদর্শ” বা মোর্যালিটির জন্য সবাইকে আমার কাছেই আসতে হবে। কারন, যেই সৃষ্টিকর্তা আমাকে পাঠিয়েছেন, উনি মূলত সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। উনি উনার সৃষ্টি সম্পর্কে সবচাইতে ভাল জানেন। যেমন উনি বলেন, *তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। (Al-Jinn: 26)* তাইতো সব কিছু যেন ঠিক মত চলে, সেজন্য একটা নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। তুমি কি দেখ না, বনে জঙ্গলের পশু, পাখি, সমুদ্রতলের মাছের খাবারের যোগান তো তোমার অনুসারীদের “ক্লাব ডোনেশন” বা এইড থেকে আসে না, বরং, সৃষ্টিকর্তাই তো সব যোগান দেন। আর উনি প্রকৃতির সব কিছুরই তো একটা নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, *নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে। তিনি পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী। (Al-Hashr: 1)*। দেখ, মানুষ বাদে সবাই সেই নিয়ম মেনে চলে, তাই প্রকৃতিতে কোন সমস্যাই হয় না। তবে মানুষ তার নিজ স্বার্থের জন্য প্রকৃতি ধ্বংস করে।
বিজ্ঞানঃ হ্যা। আসলেই তো তাই। এই সময়ের উন্নত দেশের আমার অনুসারীরা অতিরিক্ত জ্বালানী পুড়িয়ে, লাভের আসায় বন ধংশ করে, যুদ্ধ বিগ্রহ করে প্রকৃতির অনেক ক্ষতি করেছে। এরা নিজেরাই অর্থ জমানোর প্রতিযোগীতায় যেভাবে দিশেহারা, আর “ক্লাব ডোনেশনে” প্রকৃতি চালাবে!!! হ্যাহ, ভালোই বলেছ। তবে, ঐযে, মানে সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারটা। আমি তো উনাকে কখনোও দেখি নাই।
ধর্মঃ কি হে, মনে হচ্ছে বিশ্বের সমস্যা নিয়ে এত বেশি চিন্তিত, নিজের অক্ষমতা টা আবার ভুলে গেলে??? সৃষ্টিকর্তা কি ট্যানজিবল, যে তুমি দেখেতে পাবে??? তবে তোমার সার্ভারে যেই পরিমান তথ্য আছে, একটু ঘাটাঘাটি করলে এমনিতেই বুঝতে পারবে, যে সমগ্র প্রকৃতি উনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। হ্যা, অবশ্যই তোমার সেই স্বার্থপর ক্লাব ডোনাররা নয়।
বিজ্ঞানঃ আরে, ভুলে গিয়েছিলাম একেবারেই। থাম, একটু চিন্তা করি... হুম, সার্ভারে সার্চ করে এটা পেলাম;
*নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে। (Al-Baqara: 164)* এটা মনেহয় তুমি যেই সৃষ্টিকর্তার কথা বল, উনারই কথা। বুঝতে পেরেছি। হ্যা, এইমাত্র একটা চিন্তা মাথায় খেলে গেল, তা হচ্ছে, এই প্রকৃতি যদি সৃষ্টিকর্তার “বেঁধে দেয়া নিয়মে” চলে, তবে এই রকম একটা বেঁধে দেয়া নিয়ম মানুষের জন্য থাকলেও তো সব কিছু খাপে খাপ, সমস্যা সল্ভ হয়ে যাবে।
ধর্মঃ হুম। যাক। বুঝেছ তাহলে। আসলেই তোমার সার্ভারে অনেক তথ্য আছে। এখন সার্ভার ঘাটাঘাটি করে তোমার অনুসারীরা বুঝলে হয়। বিজ্ঞান, একবার ভেবে দেখ, সৃষ্টিকর্তার “বেঁধে দেয়া নিয়মগুলি” অর্থাৎ আমি, এবং তোমার মানব কল্যানের চিন্তা ও ডিভাইস গুলিকে যদি একত্রে কাজে লাগানো যায়, তবে মানবজাতির প্রভুত কল্যাণ সাধিত হবে। সেই সাথে আমার নির্দেষণা মেনে চললে কেও তোমার অপব্যাবহারও করতে পারবে না। আমরা একটা শান্তিময় পৃথিবীর দিকে এগিয়ে যাব।
বিজ্ঞানঃ আরে, হ্যা!!! তাইতো!!! ধর্ম, তুমি হচ্ছে সেই সৃষ্টিকর্তার “বেঁধে দেয়া নিয়ম” আর আমি মানুষের চিন্তার প্রতিফলন, “বিজ্ঞান”। আমরা একত্রে সব সমস্যার সমাধান করবো। ঠিকআছে? এই ধর্ম, ভাই ধর্ম, কিছু বলছ না কেন??? কোথায় গেলে...??? আরে, গেল কই......??? নাহ, কেও কোথাও নাই তো!!! আচ্ছা, ধর্ম থাকবেও বা কিভাবে, ও তো ইনট্যানজিবল, আমি কিভাবে তাকে দেখবো, কথা বলবো। তবে... আমি কি এতক্ষন... নিজের সাথেই!!! যেটাই হোক, সমাধান তো পেয়েছি । তবে... চিন্তা আমাকে নিয়ে নয়, আমার সেই সুবিধাভোগী অনুসারীদের নিয়ে। তারা তো সুবিধাভোগী, সত্যকে তাদের স্বার্থের উপরে কতটুকুই বা প্রাধান্য দেবে??? দেখি, এদের নিয়ে "কিতাবে" কি বলে!!!
* আমি তোমাদের কাছে সত্যধর্ম পৌঁছিয়েছি; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই সত্যধর্মে নিস্পৃহ! (Az-Zukhruf: 78)*