somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপোসের গল্প

২৩ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতুর ব্রত সবাই করতো। তাই দেখে আমি আর দিদিও উপোস করতাম।ভালই লাগত।সারাদিন পড়াশুনা করতে হতনা ।বিকেলের দিকে ঠাকুমা পিসীমা দোলো রাঁধতেন। যারা উপোস করতো তাদের পাথরের থালায় ভর্তি করে দোলো দেওয়া হত।

দোলো হল পায়েস জাতীয় একধরনের খাবার।একটা বিশেষ পদ্ধতিতে শুদ্ধ ভাবে রান্না করা হত।লাগত ২১টা তুলসীপাতা,২১টা চা্‌ল, ২১টা দূর্বা ।আতপচাল বেটে গোল বলের মত করে তারমধ্যে আতপচাল তুলসীপাতা দূর্বা সব একটা করে দিয়ে গোল বল তৈরী করাহত।যত জন উপোস করত প্রত্যেকের জন্য একটা করে বল হত।তারপর একটা বড় কড়াতে সের পাঁচেক দুধ বসানো হত উনানে।দুধ টগবগ করে ফুটলে তারমধ্যে বল গুলো ছেড়ে দেওয়া হত। বাকী আতপচালবাটা ছোট ছোট চ্যাপ্টা করে করে দুধে ছেড়ে দেওয়া হত।এগুলো দুধে সেদ্ধ হয়ে গেলে তারমধ্যে দেওয়া হত পাটালি।সুন্দর একটা গন্ধে চারিদিক ভরে যেত।

এইটা বেশী করে খাওয়া যাবে বলে প্রতিবারই উপোস করতাম।সেদিনতো পড়াশুনো কিছুইকরতে হতোনা আর দোলো খাওয়ার পর সেদিন আর কিছুই খাওয়া যাবেনা ।তাই দোলো খেয়েই সোজা চলে যেতাম লেপের তলে আর উঠতাম না । ঘুম ভাঙ্গতো পরদিন সক্কাল বেলায়।

. মায়েদের দেখে নীলের উপোস করতাম।সারাদিন উপোস করে থেকে সন্ধ্যেবেলায় বাতি আর নানারকম ফল গঙ্গাজল দুধ আর ডাব নিয়ে শিবমন্দিরে যেতাম শিবের মাথায় জল ঢালতে।প্রথমেই শিবের ঘরে বাতি জ্বালিয়ে দিতাম।তারপর শিবের মাথায় ডাবের জল গঙ্গাজল দুধ ঢেলে দিতাম । পাঁচটা ফল দিয়ে পুরুতমশায়ের মন্ত্র বলা শুনেশুনে মন্ত্র বলে পুজো শেষ হত।বাড়ীর ছেলেরা বাদে মা কাকিমা পিসীমা ঠাকুমা আর বাচ্চারা সবাই উপোস করতাম।মা আমাদের হাতে যবের ও ছোলার ছাতু চিনি দিয়ে মেখে খেতে দিতেন।তারপর পাওয়া যেত নানারকম মিষ্টি আর ফল । সবচেয়ে বেশী ভালো লাগতো যখন কাঁচা আমমাখা খেতে দিত । সত্যি বলতে কি এইকারণেই উপোস করার আগ্রহটা বেড়ে যেত দ্বিগুণ।

এইভাবে ভাল ভাল খাওয়া আর তার বদলে শক্ত শক্ত উপোস আমরা করতে লাগলাম।তবে শিবরাত্রির ব্রত করতে আমার বেশ ভয় লাগতো।আগের উপোস গুলো ছিল একদিনের ব্যাপার ।কিন্তু শিবরাত্রির ব্রত প্রায় তিনদিনের ধাককা।

খাবার ও ভীষণ ভালো।এই উপোসের আগের দিন সংযম করতে হত।সংযম মানে আলু কাঁচকলা ভাতে দিয়ে ঘি আর দুধ কলা দিয়ে খাওয়া।পরদিন উপোস ।সেদিন থাকতে হত একেবারে নির্জলা।তারপরদিন ব্রত কথা শুনে ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে তবে উপোস ভঙ্গ করতে হত।যারা উপোস করতো না তারা মাছভাত খেত প্রতিদিনই।আমি এই উপোস টা করতাম না।কিন্তু একবার দেখি ভীষণ ভালভাল খাবার দাবার উপোসীদের জন্য আসছে।দৈ রাবড়ী সন্দেশ নারকোল নানারকমের ফল সবার জন্য একটা করে ডাব । ডাব প্রতিবারই আগেরদিন এনে চৌবাচ্চার জলে ভিজিয়ে রাখা হত ঠান্ডা থাকবে বলে । তখন তো ফ্রিজ ছিল না তাই এই দিশী ব্যবস্হা।

খাবারের বহর দেখে আমি বল্লাম উপোস করবো।ছোটকাকা বল্লেন সংযম করিসনি ।ঠিকআছে তুই তাহলে ব্যাধের মতই উপোস কর।যে যা বলে বলুক আমি মরিয়া। সকাল থেকেই উপোস করে আছি।দাদা আমাকে গার্ড দিয়ে রেখেছে। দেখছে আমি কিছু খেয়ে ফেলি কিনা।ভালই কাটছিল ।গলা শুকিয়ে কাঠ হলে ও আমি জলের দিকে ফিরে চাইছিলাম না।এমন সময় কে যেন আমায় রান্নাঘর থেকে গুড় দিয়ে যেতে বললো ।আমি তাকে গুড় দিয়ে গুড়মাখা হাতটা মনের ভুলে মুখের কাছে তুলে চাখতে গেছি,আর যাবে কোথা্‌য় দাদা বাঘের মত এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল।চিৎকার করতে লাগল ও গুড় খেয়েছে ওর উপোস ভঙ্গ ।

এরপর আর কোনদিন শিবরাত্রির উপোস করতে চেষ্টাও করিনি।।


৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×