#চিঠি_২
#অপেক্ষা_দাও_উপেক্ষা_নয়
হাই মেঘ,
হাউ আর ইউ, আম' ফাইন... আজ তো বলে দিতে হবে না কিংবা মন দুয়ারের কড়া নাড়তে হবে না যে ডাকবাক্সের নিকট যাও... তালা খুলে দেখো, চিঠি এসেছে। আমার মনে হয় কি জানো, চিঠি পেয়ে তুমি খুবই মুগ্ধ। ভাবছো আর গায়ে চিমটি কেটে দেখছো স্বপ্ন কি না!! হা হা হা... আর তোমার দিনটিও হয়ত খুব মুগ্ধতায় কেটেছে মনের মাঝে উচ্ছ্বল ঢেউ এসে বারে বারে তোমার কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দিয়েছে!
দেখেছো চিঠির যাদু মন্তর। আর শুনো, আমি কিন্তু চিঠিতে কি লিখতে হয় জানি না.. সেই ছোটবেলায় চিঠি লিখেছিলাম.. এইট, নাইন আর টেনে পড়তে.... অহহ কি ভাবছো হা হা হা নিশ্চয়ই ভাবছো প্রেম পত্তর হা হা... আচ্ছা জিনিসটা পজেটিভ ভাবতে পারো না! আজিব মন মানুষের প্রথমেই নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা। নারে বাবা... চিঠি দিয়েছি তবে.....
নেগেটিভ ভাবনা দূর করে দাও মন থেকে..... আচ্ছা বিশ্বাস হচ্ছে না! আরে আমার আব্বাজান ছিলেন কুয়েত এবং তারপর ছিলেন কাতার। তখন চিঠি লিখতাম বাবাকে কিন্তু তখন চিঠির কিভাবে কেমন করে সাজাতে হয় তাতো জানতামই না। অথচ বাবা লিখতেন আট থেকে দশ পৃষ্ঠা তাও হাতে লিখতেন আর আমি যখন উত্তর দিতাম তখন দেখা যেতো মাত্র আধা পৃষ্ঠা লেখায় ভরেছে হাহাহাহ। এ নিয়ে বাবার কত দুঃখ ছিল আর রাগও করতেন বেশ।
তার পরের বার চিঠি লিখতে বসলে মনে পড়তো আব্বার কথা এবং চিঠির কথা কম হওয়ার কথা। অনেক ভেবে চিন্তে কত কিছু লিখতাম আবোল তাবোল .....সারা গ্রামের খবর লিখতাম, দেশের কথা লিখতাম আর ছিল হাজারো বায়না । আব্বা এটা আনবেন সেটা আনবেন। আপনি যখন আসবেন তখন আমরা এয়ারপোর্টে যাবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
অথচ দেখো এখন লিখে যাচ্ছি অবিরত। কত কথা কত ভাষা, কত শব্দের বুনন আর কতো মধুমিশ্রিত বাক্যের সমাহার, চিঠির পাতায় রংধনু রঙে আঁকা স্বপ্ন কিন্তু সবই কোন বায়না ছাড়াই... কিছুই না চাওয়ার অভিলাষে ভরা কিন্তু লিখতে গিয়ে লেখা শেষ হয় না যেনো আরো কত কথা যে বাকি রয়ে গেলো আহারে....এখন ভাবলেই কষ্ট লাগে ..আগে কেনো এত ভাষা মনে ছিলো না। তখন আব্বাকে এমন করে অনেক পাতা চিঠি লিখলে আব্বা কত খুশি হতেন । আচ্ছা যাক সময়ের সাথে মনের পরিবর্তন হবেই তাই না মেঘ। এই, ছড়া শুনবা?
চিঠি লিখি চিঠি লিখি
লিখি মনের কথা
চিঠির সাথে বাঁধা আছে
এক বন্ধনের সূতা।
শুনো গো মেঘ চিঠি পড়ো
নিরব একা বসে
চিঠির পাতায় যেয়ো তুমি
আমার মনটি চষে।
কত কথা কত ভাষা
চিঠির পাতায় হাসে
চিঠির ভাষা মাতবে তোমার
দুঃখ সর্বনাশে।
ভালবাসায় স্বপ্ন আঁকা
হারাবে গো ঘোরে
কাছে আমি থাকব তবু
আছি বহুদূরে।
পাগলের মত হাসছো চিঠি পড়ে। মনে মনে ভাবছো কি পাগলীর পাল্লায় পড়লাম রে বাবা। এযে দেখছি চিঠির হেডমাস্টার। এত কথা পায় কোথায়? তাই তো ভাবছো। আরে বাবা সব তো তোমার কাছ থেকেই পাই। সেই অনুপ্রেরণা .....ভালোবাসা। ভালোবাসবে যদ্দিন চিঠি পাবে তদ্দিন। ভালোবাসা হারালো চিঠির কথাও ফুরালো হাহাহাহ এমনই হবে জেনে রেখো। তো কি করবা এখন ভালোবাসবা না মুখ ফিরিয়ে চলে যাবা কোন সে অচিনপুরে।
আচ্ছা ভালবাসা মানে কি? বুকের বামে যার কথা শুনলে ধুকপুকানি উঠে বা অস্থির লাগে সেটা কি? হৃদয় কম্পমান হয় যাকে ভাবলে সেকি ভালোবাসা। বুঝি না বাপু ভালোবাসার মানে। তবে ভালোবাসার কথা ভাবতে ভালো লাগে। কেমন যেনো একটা অনুভূতি জাগে। তবে সে অনুভূতি কোনো অশুদ্ধতা নয় বা কাছে পাবার জন্য ব্যাকুলতাও নয়।
ভালোবাসার মানে আমার কাছে এমন লাগে ধরো তুমি দূরে তবু্ও তোমাকে মনের কাছে পাই অথবা তোমার কথা ভাবলে কর্মস্পৃহা বাড়ে কিংবা মুহুর্তটা কেমন জানি ঘোরে কেটে যায়। ভালো লাগে তখন সবই ভালো লাগে... ঠোঁটে হাসি থাকে কোন কারণ ছাড়াই, মনে আনন্দ লাগে ।
ভালো লাগে ভাবতে খুবই ভালো লাগে। কি জানি এসব কি। ভালোবাসাতো আর খারাপ জিনিস না। তবে তুমি জানো কি আমি মানুষ খুব ভালোবাসি, মানুষের কথা ভাবতে ভালোবাসি। রাস্তায় যখন হাঁটি তখন জানো কি করি আমি মানুষ দেখি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। তাদের মুখের ভাষা পড়তে চেষ্টা করি। কত করুণ মুখ দেখেছি আর কত সুখি মুখ দেখেছি আর কত মুগ্ধতার মুখ দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই। আমি তাই মানুষ ভালবাসি। মানুষ আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির সেরা জীব তাই আমি মানুষ খুব ভালবাসি আর তোমাকেও হাহাহাহ অই যে ৯৯% মিছা কথার মধ্যে এটাও একটা হাহাহাহাহাহা
ভালোবাসি ভালোবাসি
মিছা বাসি সত্য বাসি
কানামাছি কানামাছি
ভালোবাসি ভালোবাসি।
লুকোচুরি মনের খেলা
ভাল লাগে ভালোবাসি
ভালোবাসার উবর ক্ষেতে
আমি হলাম প্রেমের চাষি।
অনুভবে ভালাওবাসা
ছুঁয়ে গেলো চোখের পাতা
ঘুমের ঘোরে খুলে বসি
প্রেম নামক এক কাব্যের খাতা।
চোখে বাসা ভালোবাসা
মুগ্ধ প্রহর কতো আশা
দুঃখ কষ্টের সবনাশা
মনে বাসা ভালবাসা।
মেঘ তুমি কি জানো আমি আকাশও বড্ড ভালোবাসি, আকাশের বিশালতা অনুভব করি মনের বিশালতায়। জানো আকাশ দেখলে সাহসী হওয়া যায়। আর সমুদ্র ...... কিন্তু সমুদ্র আমি দেখিনি এখনো। শুনেছি সমুদ্রের কিনারায় দাঁড়ালে নাকি মানুষের বুকে সাহস বাড়ে। ভালোবাসা বাড়ে। কত শখ আমার সমুদ্র দেখবো সূর্যাস্ত দেখব... আঁচল ভরে কুঁড়াবো শামুক ঝিনুক আর শঙ্খ... ছোট ছোট সুখ নুড়ি নাকি সেখানে পাওয়া যায়। ভালোবাসার চুরাবালিও নাকি সেখানে আছে? সে কে জানে আমি তো সমুদ্র দেখিনি কখনো। সমুদ্রের বজ্র নিনাদ শুনিনি কানে কখনো। এর নীল জলে নিজেকে ভিজাতে পারিনি কখনো... শাড়ির আঁচল উড়াতে পারিনি কখনো ......তুমিই বলো মেঘ কতটা ব্যথর্তা লুকিয়ে আছে মনে। শুনেছি শঙ্খে কান লাগালে নাকি সমুদ্রের গজর্ন শুনা যায়।
এই মেঘ তুমি আমাকে একটা শঙ্খ গিফট করবে...কাগজে মুড়িয়ে সাদা একটা ইয়া বড় শঙ্খ আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়ো....... আমার খুব শখ শঙ্খ ছুঁয়ে দেখবো এবং কানে লাগিয়ে সমুদ্রের গর্জনন শুনবো। হাহাহাহাহাহ সরি .... এমনি বলেছি পাঠাতে হবে না এর চেয়ে ভালোবাসা পাঠিয়ে দিয়ো গোলাপী খামে ভরে বুঝছো বদের বদ।
তুমি নাকি বদের হাড্ডি
হাত পা ঝাড়া বদের বদ
ভিতর তোমার সাগর নদী
বদের হাজার শত হ্রদ!
বদামি আজ ছুটামো গো
চিনছো নাতো আমি কে
দুষ্টু বড্ড আমিও কিন্তু
বদের উপর খুব বদ যে।
মেঘ, তুমি কারো জন্য অপেক্ষা করো, অপেক্ষা করতে কেমন লাগে? অপেক্ষার পর প্রাপ্তি তখন কেমন লাগে... আমার ত মাঝে মাঝে অপেক্ষা ভাল লাগে... কিন্তু যে পরিবেশে আছি এখানে অপেক্ষার শেষ নেই, নেই কোন প্রাপ্তি, শুধুই ধুসর শূন্যতা। জেরি বলে মা, মা কখনো প্রত্যাশা মনে রাখবা না তাহলে আর কষ্ট পাবা না। এমন বললেই কি হয়,,, কিছু পেতে অপেক্ষা তো মন থেকেই আসে এবং মন তো তখন ভেঙ্গে যাবেই... সেখানে আমার কিছু করার থাকে না। তুমিও যে আমাকে অপেক্ষায় রাখবে সে বুঝতে পারি... তবে প্রত্যাশা থাকবেই, সে ছাড়ছি নে বাপু।
বাপ্রে এত লম্বা চিঠি দৌঁড়ান দিবা নাতো... আজ তবে আসি বটে.... তুমি আমার পর নও মোটে, ভাল থেকো সুখে থেকো, মাঝে মাঝে মনে আমার ছবি এঁকো-চিঠির শেষে রোদ্দুর।
পুনশ্চঃ উত্তর দিয়ো, খবর নিয়ো... পারলে দিয়ো অনেক অপেক্ষা, তবে কিন্তু নয় উপেক্ষা, অকে-বাই, আল্লাহ হাফেজ!
৯/১২/২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৯