দেলোয়ার নামে আমার এক বন্ধু ছিলো। পড়াশুনা করতো জগন্নাথে আর থাকতো কলাবাগান এলাকাতে। ঢাকায় আমার বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব ছিলো, কিন্তু আর কাউকে ভরসা করতে না পারলেও
দেলোয়ারকে খুব ভরসা করতাম । আমার ধারনা ছিলো কোন বন্ধু যদি উপকার করে তবে সেটা হবে আমাদের দেলোয়ার।
অনার্স পরীক্ষা দেওয়ার আগে কখনো ঢাকায় যাই নি। একটা চাকরীর ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য ঢাকায় যাওয়া খুবই প্রয়োজন ছিলো। যোগাযোগ করলাম দেলোয়ারের সাথে। বন্ধুকে বললাম দোস্ত জাস্ট একটা দিন তোর ওখানে থাকবো । দেন পরীক্ষা দিয়েই বাড়ি চলে আসবো ।
দেলোয়ার আমার কথা শুনে বলে আরে পাগলা আসবি তাতে সমস্যা কোথায় ??? শোন বাসে উঠবি দেন দৌলদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে এসে ফোন করে বলবি আমি ফেরী পার হচ্ছি ।
যাক বন্ধুর এমন কথা শুনে খুব ভরসা পেয়েছিলাম, তবুও দেলোয়ারকে বললাম আগামী কাল বাসে উঠবো। আর যেহেতু আমি ঢাকার কিছুই চিনি না তাই কোথায় নামবো ওর মেসে যাওয়ার জন্য তা জেনে নিলাম।
আমি যখন ফেরী পার হই তখন দেলোয়ারকে ফোন দিই। বুকের ভিতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো। ধামরাই, সাভার, গাবতলী পৌছে গেলাম তখন রাত সাড়ে এগারোটা। অথচ দেলোয়ারের ফোন বন্ধ।
বাস থেকে নামলাম পান্থ পথের মোড়ে মানে সেখানে ধানমন্ডি লেক। কোন উপায় না পেয়ে বাস কাউন্টারের সামনে দাড়িয়ে থাকলাম। বাসা থেকে মা ফোন দিলো মাকে আর কিছু বললাম না , মাকে টেনশন দিয়ে লাভ নেই।
আরেক বন্ধু ছিলো জীবন নাম করে। ও আসলে অনেক দূরের বন্ধু। খুব একটা মিশতাম না। বাধ্য হয়ে ওকে ফোন দিলাম। ও আমার ঢাকা আসার কথা শুনে সেই খুশি। আর ওখানে দাড়িয়ে আছি শুনে আমাকে আধা ঘন্টা দাড়াতে বললো। আধা ঘন্টাপড়ে দেখি হাফ প্যান্ট পড়ে রিক্সা করে চলে আসলো জীবন। আমাকে নিয়ে গেলো ওর মেসে। দেন সে কি জামাই আদর।
সারারাত দেলোয়ারের ফোন অফ। সকালে ফোন খোলা পেলাম। ফোন যখন ধরলো তখন দেলোয়ার বললো দোস্ত চাচা মারা গেছে তাই বরিশাল চলে এসেছি। ঢাকায় ফিরবে দিন ছয়েক পর ।
যাই হোক জীবনের ওখান থেকে পরীক্ষা দিলাম। জীবন তো আমাকে আসতেই দিবে না। বিভিন্ন জায়গা ঘোরালো তাও ওর পকেটের টাকা দিয়ে। দেন সন্ধ্যায় নিয়ে গেলো মোহাম্মাদ পুর মোস্তাকীম ভাইয়ের রেষ্টুরেন্টে।
ঘটে গেলো চরম ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ওখানে দেলোয়ার তার গার্ল ফ্রেন্ডকে নিয়ে মগজ ভাজি খাচ্ছে।
সামনা সামনি দেখা । কি এক বিব্রতকর অবস্থার ভিতরে পড়েছিলাম। দেলোয়ার লজ্জা পেয়েছিলো নাকি জানি না । তবে আমার এত লজ্জা লেগেছিলো যে মনে হচ্ছিলো যেনো মাটির ভিতর আমি পুতে গেছি।
এই হলো আমাদের কর্পোরেট সমাজের কর্পোরেট বন্ধু....... অথচ জীবন দূরের বন্ধু হয়েও অসময়ে পাশে দাড়ালো ।
আমি বর্তমানে খুব বিপদে....... প্লিজ আমার ঘটনা পড়ে একটু পরামর্শ দিন........ লিংকে গুতা দিয়ে পড়ুন