ঢাকার এলাকাগুলোর নামের সাথে কাজের কোন মিল নেই। ধানমণ্ডিতে ধান নেই, কলাবাগানে কলা নেই, মহাখালী খালি নেই।
বলছি ঢাকা মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে। এ এলাকার রাস্তার নামগুলো অনেক সুন্দর। বাবর রোড, হুমায়ূন রোড, তাজমহল রোড, নুরজাহান রোড। মনে হচ্ছে সব মোঘল-সম্রাটদের আস্তানা এখানে।
সত্যি সত্যি আমি এখানে এক সম্রাটের ঠিকানা পেয়েছি। মাহমুদ চৌধুরী নামের এ মানুষটি আল-হেরা কলেজের শিক্ষক। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের পাশে প্রিন্স বাজারটি যে ভবনে অবস্থিত সেই সাততলা ভবনটির মালিক তিনি। নিঃসন্তান একজন মানুষ।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রিন্স বাজার এলাকায় গেলে মনে হবে কোন অনুষ্ঠান চলছে। পুরো প্রিন্স বাজার ঘিরে প্রায় ৩শ গরীব দুঃস্থকে রাতের খাবার খাওয়ানোর আয়োজন হয়। নিজ উদ্যোগেই এ আয়োজনটি করেন মাহমুদ চৌধুরী।
এক মণ চালের গরুর গোশতের খিচুড়ি প্রতিদিনই রান্না হয় এখানে। ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ির মম ঘ্রাণে পুরো এলাকা ছড়িয়ে যায়। দূর দুরান্ত থেকে রিকশাওয়ালারা ছুটে আসে।
বর্তমান যুগে এক এলাকায় ৩শ দুঃস্থ মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এজন্য রিকশা চালকরাও এখানে বিনা পয়সায় খাওয়ার সুযোগ পায়।
এই কার্যক্রমে ভলান্টিয়ার হিসেবে নিয়োজিত আছে প্রায় ১৫ জন। তারা এই খাওয়ানোর ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। দরিদ্র বলে কখনো কারো সাথে মন্দ আচরণ করে না। দুঃস্থদের সাথে মেহমানের মতো আচরণ করা হয়। সুন্দরভাবে ছবি তোলার স্বার্থে আমি ভলান্টিয়ারদের অনুরোধ করলাম, যেন লোকগুলোকে একটু এদিক ওদিক করে সাজিয়ে বসায়। তারা বিনয়ের সাথে অপারগতা প্রকাশ করলো। বললো, খাওয়ার সময় তাদের ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। তাছাড়া এই কার্যক্রমের প্রচারের ব্যাপারেও তারা উৎসাহী নয়।
প্রাথমিক হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতিদিনের এ খাওয়া ও ভলান্টিয়ারদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি হলে এই এক লাখ টাকা দিয়ে প্রতি মাসে একবার বিদেশ ভ্রমণে যেতাম, লুতুপুতু ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করতাম। অর্থের গড়িমা দেখাতাম। অনেক মজা, অনেক আনন্দ করতাম। তবে মাহমদু চৌধুরী যে আনন্দটা করছেন, আমার মনে হয় পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে বেড়াতে গিয়ে এই আনন্দটা পাওয়া যাবে।
প্রতিদিন ৩শ মানুষকে খাওয়ানোর সামর্থ্য আমার নেই। তবে প্রতি মাসে অন্তত ৩ জনকে খাওয়ানোর সামর্থ্য আছে। আমিও তাঁর মতো আনন্দ পেতে চাই, তৃপ্তি পেতে চাই।
সেই মানুষটির ছবি দেখতে এখানে গুতান......... বহুত চেষ্টা করেও ছবি যুক্ত না করতে পেরে লিংক দিলাম ........ ছবি
--- প্রতিবেদক: S M Nahid Rahman
— with N B Sayed Sumon