somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধাঁরের গল্প

০১ লা জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
স্যার বকছে রাফিকে, আজও সে পড়া শিখে আসেনি সে। এটা একধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তার। স্যার বকে যাচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। রাফি হারিয়ে যাচ্ছে তার ফেলে আসা অতীতে।
তার চোখে ছবির মত ভেসে উঠছে সোনালী অতীত।
ছাত্র হিসেবে রাফি তুখোড় মেধাবী। সবসময়ই প্রথম হতো সে। ছিলো স্বর্ণজয়ী বিতার্কিক। ক্লাসের মধ্যমণি।
মাহারা সন্তান রাফির বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা। রাফিকে দেবার জন্য রফিক সাহেবের সবই আছে, নেই শুধু সময়। রাফির কোন চাহিদাই অপূর্ণ রাখেননি রফিক সাহেব। কখনোই মুখ ফুটে কিছু চাইতে হয়নি রাফিকে। প্রয়োজনে ঠিকই পেয়েছে সব।
হঠাৎ এক থাপ্পরে নিজেকে আবিষ্কার করে রাফি।ক্লাস থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে। স্কুল মাঠে এসে বসে থাকে রাফি।
-কি হচ্ছে এসব? নিজেকেই প্রশ্ন করে রাফি। আবার হারিয়ে যাচ্ছে সে অতীতে।
রাফির বাবা, রফিক সাহেব একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত। গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ তিনি। কথা-বার্তা বলেন কম। রাফির সাথে তার দেখা হয় রাতে খাওয়ার টেবিলে।

(২)
রাহাত, সানি, রকি, সেতু সদ্য স্কুল বদলে ভর্তি হয়েছে রাফির স্কুলে, কানাঘুষা আছে আগের স্কুল তাদের বের করে দিয়েছে। চার জনের একজোট।নতুন স্কুলে এসেই সবার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে তারা। খেয়াল করলো একটা ছেলে সবসময়ই নীরবে বসে থাকে।
- কিরে দোস্ত, কেমন আছিস? রাফির পিঠ চাপড়ে জিজ্ঞেস করে রকি। কিছুটা বিরক্ত হয় রাফি। প্রথম দেখাতেই কেউ এমন করে?? তবুও ভদ্রতামূলক জবাব দিয়ে চলে যায় রাফি। কিন্তু ধীরেধীরে তাদের প্রতি দূর্বল হয়ে পরে রাফি। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাদের সাথে। প্রতিদিনই স্কুল শেষে আড্ডাবাজী। দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে আসে, প্রথমবারের মত ফেল করে রাফি। মন মেজাজ খারাপ, কিছুতেই রেজাল্ট মানতে পারছে না সে।
রাফির বিষন্নতা দেখে রাফিকে বেনসন অফার করে রাহাত।
- এটা কি?
- সিগারেট, দেখতেই ত পারছিস।
- You know, I don’t smoke.
- Yes, I know. I know very well. But try Once.
- মামা, টাইন্যা দেখ। সব টেনশানই খতম বলে ওঠে রকি।
একদিনই ত মনে মনে ভাবে রাফি, টান দেয় সিগারেটে। টান দিতেই অবস্থা খারাপ। কিন্তু স্ট্রেস ফ্রি ফিল করে সে।

(৩)
- মামা এইভাবে আর কত? সানি’র প্রশ্ন
- কি করবো? হাতে টাকা পয়সা নাই,- রাহাতের জবাব।
- পোলাটা মালদার, ম্যানেজ করতে পারলেই হয়, বলে ওঠে সেতু।
- হুম!! কিন্তু ব্যাটা সেয়ানা। এতো সহজে ধরা দেবে না। বলে রাহাত
- সেতুঃ প্ল্যানিং মামা, প্ল্যানিং লাগবো।
- সানিঃ যা করার তারাতারি কর। হাত ত খালি।
- রকিঃ এতো সোজা নারে, বেনসন ধরাতেই কত কি করতে হলো।
- রাহাতঃ দেখা যাক কি করা যায়।
- পরদিন স্কুল ছুটির পর আড্ডা দিচ্ছে সবাই।
- রাহাতঃ মামা, এটা টেস্ট কর, স্পেশাল।
- স্পেশাল! রাফির বিশ্ময় ভরা প্রশ্ন।
- রাহাতঃ আরেহ, ট্রাই কর। বেনসন আর কত?
রাহাতের চাপে পরে টানতে থাকে রাফি। অন্যরকম অনুভূতি। সিগারেট সে আগেও টেনেছে, তবে এটা ভিন্ন।
সেতুঃ কি মামা? কেমন?
রাফি; হুম, ভালোই। স্বাদও ভিন্ন। কি এটা?
সানিঃ এটা শুধু সিগারেট না।
রাফি- তো?
সানি- এটা গাঁজা।
রাফি- কি!! তোরা গাঁজাও টানিস? রাগান্বিত হয়ে যায় রাফি।
রকি- আরেহ! চেতস কেন? টেনে দেখ মজা পাবি।
রাগ হলেও স্বাদটা উপভোগ করে রাফি, তাই আর কথা না বাড়িয়ে টানতে থাকে।

(৪)
সেকেন্ড টার্মের রেজাল্ট দিসে। আবারো ফেল রাফি। মন মেজাজ খুবই খারাপ। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর গাঁজা টানা নিত্য রুটিন। সবটাকাই দেয় রাফি। ছেলের অধঃপতনের কারন খুজে পাননা রফিক সাহেব। ছেলের এ্যাকাডেমিক ধ্বস এর সাথে আচরনগত পরিবর্তনও খেয়াল করছেন তিনি। ঠিক করলেন ছেলের রুমে যাবেন, রুমে ঢুকেই তিনি অবাক। সাজানো-গোছানো ছেলেটা রুমটাকে মেস বানিয়ে ফেলেছে। টেবিলে ছড়ানো বই। হঠাৎ কি মনে করে ড্রয়ার খুললেন তিনি। বিশ্ময়ে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি। সিগারেটের প্যাকেট, স্লিপিং পিল। ড্রয়ার বন্ধ করে রুম থেকে বেড়িয়ে যান তিনি। রাতে খাবার টেবিলে পান রাফিকে।
একেতো রেজাল্ট খারাপ, তারওপর ড্রয়ারে ওসব দেখে খুবই রেগে গেছেন রফিক সাহেব। ছেলেকে সামনে পেয়ে সব রাগই ঝাড়লেন তিনি। তাতে অবশ্য রাফির কোন খেয়াল নেই। খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকতেই তার চোখ পরে তার মা’র ছবিতে। রাফির বয়স যখন সাড়ে তিন তখন তার মা মারা যান। এবার মনে মনে অনুতপ্ত হয় রাফি। আসলেই, তার বাবা তার কোন দাবীই অপূর্ণ রাখেন নি। এমনকি দ্বিতীয় বিয়ে পর্যন্ত করেন নি। আর সেই বাবা’কেই অপদস্ত হতে হচ্ছে তার জন্য। লোকে হাযার কথা বলছে, মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় ফিরে আসবে স্বরুপে। পড়ালেখায় মোনযোগ দেয়। কিন্তু আড্ডাটা চলতে থাকে। অনেককটা ইয়্যু টার্নের মত ঘুরে ধারায় সে। যায়গা করে নেয় টপ ফাইভে।

(৫)
রফিক সাহেবকে ডেকে পাঠিয়েছে স্কুল, নেশা করার সময় ধরা পরেছে রাফি ও তার বন্ধুরা। বাসা এলে রাফিকে বকা-ঝকার এক পর্যায়ে গায়ে হাত তোলেন রফিক সাহেব। হাত খরচের টাকাও বন্ধ করে দেন। রাহাতরা বুঝতে পারে রাফির কাছ থেকে আর তেমন সুবিধা পাওয়া যাবে না। তারা আবার নতুন শিকারের খোঁজে। এক সন্ধ্যায় সানির কাছে কি যেন একটা দেখতে পায় রাফি।
রাফি- এটা কি দোস্ত?
সানি- কোনটা?
রাফি- আরেহ! ওইটা।
সানি- এইডা বড় কাজের জিনিষ, চাকু বের করে দেখায় সে।
রাফি- কি করিস এটা দিয়ে?
রকি- মাল পানি আদায় করি।
রাফি- মানে?......।। ছিনতাই?
রাহাত- হ্যাঁ, বসে থাকলে ত আর টাকা আসবে না।
রাফি- ছি! তোরা এত খারাপ? নেশা করিস আবার ছিনতাইও। কিছুটা ঝগড়া করেই বেরিয়ে যায় আস্তানা থেকে।
হাত খালি তাই ধার-দেনা করে কোনমতে সিগারেট আর স্লিপিং পিল ম্যানেজ করে সে।

(৬) কিছুদিনপরঃ
সন্ধ্যা পর হাটতে বের হয় রাফি। আস্তানায় যায় সে। ইতস্ত ভঙ্গিতে বসে পরে সে।
রাহাতঃ ব্যাপার না, মামা। ফ্রেন্ডদের মাঝে আধ-একটু কথা কাটা-কাটি হয়ই।
রাফি- ওইটা দিবি?
রাহাত- কোনটা?
রাফি- চাকুটা।
রাহাত- ওইটা তোর কোন কাজের না।
রাফি- দে না ভাই, এত কথা বলিস কেন?
রাহাত- আচ্ছা নিস, আগে টান মার।
সিগারেটের টানে হারিয়ে যেতে থাকে রাফি, রাতে বের হয় সে। পাড়ার মসজিদের কাছেই পায় এক মাঝ বয়সী ভদ্রলোককে, লোকটা একটু দেরীতেই বের হয়েছিলো। কাছে গিয়েই পেছন থেকে বলে রাফি, “যা আছে সব বের করে দে, না হলে বসায় দেবো”। লোকটি পরে যান, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই পাঞ্জাবীর পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করে সড়ে পরে রাফি।

(৭)
মাঝ রাতের কিছু পর বাসায় ফিরছে রাফি, মসজিদের কাছে একটা অবয়ব দেখে তার রাতের কথা মনে পরে। দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে কাছে যায় সে। একটা লোক উপুড় হয়ে পরে আছে, লোকটিকে উল্টিয়ে দেখে সে। বিশ্ময়ে আর আতংকে সেখানেই স্থির হয়ে বসে পড়ে সে।

(৮)পরিশিষ্টঃ
মসজিদ থেকে আজান ভেসে আসছে ফজরের আজান, নামাজের উদ্দেশ্যে বের হতে শুরু করেছে লোকজন। পথে পাশা-পাশি দুটি লাশ পরে থাকে।



কিছু কথাঃ প্রায় নয় (০৯) বছর পর ব্লগে ফিরলাম। মাঝে ব্যক্তিগত বেশকিছু ঝামেলার মধ্য দিয়ে গেছি। সেসব আজ এখানে লিখতে চাই না। আশা করি আপনারা গল্পটি পড়বেন এবং আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন।
ধন্যবাদ।
--শওকত।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×