somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এটম বোমা আবিস্কারের ইতিহাস ( পর্ব-৩)

১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দের শেষের দিকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগেই ফরাসী বিজ্ঞানীরা পারমানবিক বোমা ও শক্তি উৎপাদনের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন । যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে হিটলার ঘোষনা করেছিলেন যে জার্মানীর হাতে এমন এক ভয়ংকর গোপন অস্ত্র আছে যার গতি রোধ বা ধ্বংশ করার কৌশল কারোর জানা নেই । তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বিজ্ঞানী ছাদউইককে হিটলারের গোপন অস্ত্রের শক্তির উৎস অনুসন্ধান করার অনুরোধ করেন । ছাদউইক তার প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সরকারকে জানিয়েছিলেন যে ১ থেকে ৩০ টন ইউরিনিয়াম যোগার করতে পারলে এই ধরনের বোমা তৈরি করা সম্ভব । কিন্তু অটো ফ্রিস ও রুডলফ পিয়ারলস বিজ্ঞানীদ্বয় হিসাব করে দেখালেন যে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামের পরিবর্তে যদি খাঁটি ইউরেনিয়াম-২৩৫ মৌল ব্যবহার করা হয় তাহলে ১ থেকে ৩০ টন ইউরেনিয়ামের দরকার নেই বরং কয়েক পাউন্ড ইউরেনিয়াম হলেই বিষ্ফোরণ ঘটানো সম্ভব । কিন্তু সমস্যা হল ইউরেনিয়াম-২৩৫ আইসোটোপ পৃথক করার কৌশক তখনো বিজ্ঞানীদের জানাছিল না । তবুও ব্রিটিশ সরকার ছাদউইককে বোমা তৈরীর দায়িত্ব দেন । তাঁর সাথে আছেন অটো ফ্রিস ও রুডলফ পিয়ারলস ।যে সকল ইহুদি বিজ্ঞানীরা হিটলারের ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে জার্মান ত্যাগ করেছিলেন তাদের মধ্যে পিয়ারলস, আইনস্টাইন, ঝিলার্ড, বিগনার,টেলরের নাম উল্লেখযোগ্য । মজার ব্যপার হল দেশত্যাগী বিজ্ঞানীরাই ব্রিটিশ ও যুক্তরাষ্ট্রকে পারমানবিক বোমা তৈরির সম্ভাব্যতার কথা বুঝিয়েছিলেন । পরে ব্রিটিশ সরকার অলিফেন্ট, থমসন ও ব্লাকেট বিজ্ঞানীদেরকে নিয়ে গঠন করেন থমসন কমিটি । এই থমসন কমিটিই পরে মড কমিটিতে রূপ নেয় । এই কমিটি দ্ব্যার্থহীনভাবে সুপারিশ করেছিল “ এই কমিটির বিবেচনায় পারমানবিক বোমা তৈরীর পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত এবং যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফল অর্জনে এই বোমার উপযোগীতা অনস্বীকার্য । অপর দুই বাস্তুহারা হাঙ্গেরীয় বিজ্ঞানী ঝিলার্ড ও এডওয়ার্ড টেলর যুক্তরাষ্টকে পারমানবিক বোমা তৈরীর ব্যপারে উৎসাহিত করেন । তাদের কথায় যুক্তরাষ্ট সরকার কান না দেওয়ায় তারা দুই জন আইনস্টাইনের কাছে যান এবং তাকে অনুরোধ করেন তিনি যেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে চিঠি লিখে এ ব্যপারটি বুঝিয়ে বলেন । পরবর্তীতে আইনস্টাইন রুজভেল্টকে কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন । রুজভেল্ট ও বুজতে পারলেন হিটলার যদি এই বোমা তৈরী করতে পারেন তাহলে সব সর্বনাস হয়ে যাবে । তাই রুজভেল্ট এই ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তার সচিবকে নির্দেশ দেন । সচিব ওয়াটসন তিন সদস্য বিশিষ্ট ব্রিগস কমিটি গঠন করেন । এ দিকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ জোরে সোরে শুরু হয়েছে । তখনও আমেরিকা যুদ্ধে জড়ায়নি । এ সময়ের মধ্যে ব্রিটেন পারমানবিক বোমা তৈরী কর্মসূচীর একটা খসড়া সম্পুর্ণ করেছিল । এই খসড়া থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের মধ্যে সামরিক দিক থেকে উপযোগী অস্ত্র তৈরীর সম্ভাবনা উজ্জল । যুক্তরাষ্টের ব্রিগস কমিটি ও জাতীয় একাডেমির সুপারিশগুলি তখনও পর্যম্ত এতটা অগ্রসর হতে পারেনি । ব্রিটেনের মড কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই রুজভেল্টকে বোঝাতে পেরেছিলেন যে বায়বীয় ব্যাপনের সাহায্যে পৃথকীকৃত ইউরেনিয়াম-২৩৫ মৌলের সাহায়্যে পারমানবিক অস্ত্র তৈরী সম্ভব । পারমানবিক বোমা তৈরীর কলাকৌশল ব্রিটেন ও আমেরিকার মধ্যে আদানপ্রদান শুরু হয় । সাথে সাথে আমেরিকা ও ব্রিটেনের মিত্র দেশগুলোর সাথেও পারমানবিক বোমা তৈরির কলাকৌশল সংগ্রহের কাজ শুরু হয় । ব্রিটেনের প্রযুক্তির জ্ঞান সরবরাহের জন্য রুজভেল্ট চার্চিলকে একটি চিঠি লিখেছিলেন । যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মধ্যে পারমানবিক বোমা তৈরীর কাজে ব্রিটেনই সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী ছিল । কিন্তু এক বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র পারমানবিক বোমা তৈরীর ক্ষেত্রে ব্রিটেনকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছিল । কতটা পেছনে পরেছিল ব্রিটেন তা আমেরিকার বোমা তৈরির একটি বাজেট দেখলেই বুঝা যাবে। ইউরিনিয়াম -২৩৫ মৌল পৃথকীকরণ করার জন্য সেন্ট্রিফউজ প্লান্টের জন্য ৩৮ মিলিয়ন ডলার, বায়বীয় ব্যাপন প্লান্টের জন্য সীমাহীন ডলার, তড়িৎ চুম্বকীয় পৃথকীকরণের জন্য ১২ মিলিয়ন ডলার, প্লুটোনিয়াম গাদা তৈরির জন্য ২৫ মিলিয়ন ডলার এবং ভারী পানি উৎপাদনের জন্য ৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয় ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×