গত কয়েকদিন ধরে ফেইসবুকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের 'সার্চ ইঞ্জিন'বিষয়ক বক্তব্য নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ,সমালোচনা, কৌতুক। গুগল প্রতিষ্ঠার আগেই বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সিলিকন ভ্যালিতে ইন্টারঅ্যাক্টিভ সার্চ ইঞ্জিন তৈরির জন্য একটি স্টার্টআপ দিয়েছিলেন। কিন্তু গুগল তাদের যাত্রা শুরু করলে জয়ের স্টার্টআপটি বন্ধ হয়ে যায়। রোববার সফটওয়্যার টেকনোলোজি পার্ক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্টার্টআপ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, “তো আমি কিন্তু সিলিকন ভ্যালিতে আমার প্রথম স্টার্টআপ আরম্ভ করি। আমার স্টার্টআপটি ছিল কিন্তু গুগল আবিস্কার,গুগল শুরু হওয়ার আগে আমাদের স্টার্টআপ ছিল। আর আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যে, তখন এই যে ইন্টারনেট ক্যাবল আবিস্কার হয়েছিল, এটা ছিল আপনার ৯৮ সালে। ক্যাবল ইন্টারনেট ইউজ শুরু হচ্ছিল, বেশি মানুষ আসছিল ইন্টারনেটে। তো, ইন্টারনেট সার্চ করাটা খুবই একটি কঠিন জটিল ব্যাপার ছিল। সার্চ করলে এত ভিন্ন রেজাল্ট আসতো যেটা কোনো সেন্স করা, ঠিক হচ্ছে কী ইনফরমেশন আমার প্রয়োজন এটা বের করতে অনেক সময় লাগতো। তখনও গুগল আবিস্কার হয়নি। তো, তখন আমরা এই সার্চের উপরেই কাজ শুরু করলাম। আমরা একটা সফটওয়ার ডেভেলপ করলাম যে, একটা ইন্টারেক্টিভ সার্চ। একটা সার্চ শুরু করলে তখন সফট সিস্টেমটা আমাকে উল্টো প্রশ্ন করবে যাতে আমি সার্চটাকে আরো ন্যারো করতে পারি। তারপরে অবশ্য গুগল আসলো, গুগল এসে আমাদেরকে মাইর দিয়ে দিল। তো, আমার প্রথম স্টার্টআপটা মার খেয়ে গেল।”
জয়ের গল্পটা অনেকটা এ রকম“একই গাছের আপেল আমার উপরেও পড়েছিল৷ নিউটনের চেয়ে দুই মিনিট আগেই পড়েছিল৷ আর আমিই আগে মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করেছিলাম ৷ কিন্তু দূর্ভাগ্য আমার ! নিউটন আমার চেয়ে লম্বা হওয়ার কারনে লম্বা লম্বা পা ফেলে আমার আগে অন্যদের কাছে গিয়ে মধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা বলে ফেলে ৷ পরে রাগে দু:খে আমি আমার আপেলটি খেতে খেতে বাসায় চলে আসি।”
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী তথ্য-প্রযুক্তিবিদ এবং মহামতি আইটি উপদেষ্টার আইটি জ্ঞান নিয়ে বরাবরই দ্বিধান্বিত ছিলাম,আজ তার ভাষণ শুনে সকল দ্বিধার অবসান হলো। তিনি অযথা বাহবা নিতে গিয়ে অথবা তার ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা (২০০,০০০ ইউ এস ডলার-যা বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে শক্তিধর ৬টি রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীর বেতন থেকেও বেশি ) বেতন জাস্টিফাই করতে গিয়ে নিজের জ্ঞানের গভীরতার ফাঁক ফোঁকড় তিনি নিজেই প্রকাশ করে দিয়েছেন। তার বক্তব্যের ফোকল পয়েন্টটা হচ্ছে, তিনি গুগলের কাছে হেরে গেলেন! সার্চের সাকসেসফুল রেজাল্ট না আসার প্রেক্ষিতে জয় সাকসেসফুল রেজাল্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন, এবং পরে সেই একই কাজ গুগল এসে জয়ের আগে করে ফেলে। ফলে জয়ের প্রথম স্টার্টআপটি তার ভাষায় ‘মাইর খেয়ে’ যায়। আম জনতা এই কথা শুনে বলে উঠবে, আহারে ! সরাসরি গুগলের কাছে ‘মাইর’! বিশ্বের সবচেয়ে বড় জায়ান্ট সার্চ ইঞ্জিন!! আমাদের জয় দা‘র সাথে এক সময় গুগলের ‘লড়াই‘ হয়েছিল! ওয়াও ! হোয়াট অ্যা জিনিয়াস !!” এই ইমপ্রেশন ক্রিয়েট করার উদ্দেশ্যে ছাড়া এখানে গুগলের কাছে ‘মাইর খাওয়ার ‘কথা বলার কোনো মানে নাই। কারণ, এই রকম হাজারো হাজারো আইটি এক্সপার্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গুগলের কাছে ‘মাইর‘ খাচ্ছেন।
সার্চ ইঞ্জিন মূলতঃ ইনফরমেশন রিট্রীভ্যাল এর লজিকে তৈরি। World Wide Web [www or W3] চালু হলে প্রথম সার্চ ইঞ্জিন ছিল W3Catalog; আর সেটা ছিল ১৯৯৩ সালে। সে বছরই আরো কয়েকটা ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন বের হয়েছিল - AliWeb, JumpStation এবং WWW Worm।১৯৯৪ সালে উদ্ভাবিত হয় Lycos, InfoSeek, Webcrawler ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন আর ওয়েব ব্রাউসার ছিল AirMosaic, যা পরে NetScape Corporation কিনে নিলে Netscape ব্রাউসারে পরিণত হয়। আজকের ফায়ারফক্স মূলতঃ ঐ Netscape ব্রাউসারের উত্তরসূরী। এরপর Yahoo,MetaCrawler সহ আরো কটি সার্চ ইঞ্জিন বাজারে আসে। এরপর আসে Google ।
সার্চ ইঞ্জিনের এই ক্রমোন্নতি বা বিবর্তনের কোন পর্যায়েই তথ্যবাবা ও জাতির নাতি জনাব এস. ডব্লিউ, জয়ের নাম নেই। তর্কের খাতিরে মহামতি তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার তথ্যকে সত্য হিসেবে ধরে নিলেও বোধগম্য হয়না ইয়াহু যা আগেই করে ফেলেছে তা তার অজ্ঞাত থাকে কিভাবে!! আর তাছাড়া গুগল আর তার জন্য তখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল-তো গুগল দেখে তিনি থেমে গেলেন কেন? কারণ একটাই- বিষয়গুলো সম্পর্কে তার নূন্যতম ধারণা নাই। এবং তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়েও সে সার্চ ইঞ্জিন ব্যাপারটাই বুঝেনা,এটাও জানেনা ইয়াহু, গো টু- এর অনেক পরে গুগলের আগমন। গুগল মোটেও প্রথম সার্চ ইঞ্জিন নয়। এগুলো আইটির এই ধারার প্রাথমিক তথ্য, এই তথ্যগুলো না জেনে বিকৃত তথ্য দেয়া ভুল নয়, ৫৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এখন কি জয়ের বিরোদ্বে ৫৭ ধারায় মামলা হবে নাকি গুগল বাংলাদেশে ব্যান করা হবে?? আর নাকি গুগল প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ এবং সের্গেই ব্রিনের ফাঁসী চাই বলে আন্দোলন হবে ?? কেউ বিরিয়ানীর আয়োজন করলে গুগলের ফাঁসী চাই বলে আন্দোলনে ঝাঁপায় পড়ুম । কথা দিলাম। জয় বাংলা।
বুধবার,২১ অক্টোবর ২০১৫
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড ।