somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাবলিক কা মাল আপনা ঝুড়ি মে ঢাল !!

১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশের জনগণের। জনগণের পক্ষে সরকার এটি পরিচালনা করে। সরকারের পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি দেখভাল করে।কিন্তু এত বড় ঘটনার পরও সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাৎক্ষণিক বিষয়টি রিজার্ভের মালিক দেশের জনগণকে জানায়নি। উল্টো বৈদেশিক সূত্রে জানাজানি হওয়ার পর দু‘জন একই সুরে বলেছে বাইরে থেকে হ্যাক করা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে হ্যাক হলো, কারা এর সাথে জড়িত, সুইফট কোড কিভাবে পেলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের বা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের কি দুর্বলতা ছিলো- এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই !!

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের নেটওয়ার্কের নিরাপত্তায় কোন ধরনের বিঘ্ন ঘটেনি। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আরও জানিয়েছে তাদের নেটওয়ার্কে হ্যাকারদের অবৈধ অনুপ্রবেশের কোন প্রমাণ তারা পায়নি এবং ৩৫ সুইফট কোডের মধ্যে ৫টি কার্যকর করা হয়েছে যার সব ক’টিই বৈধ উপায়ে করা হয়েছে। যারা এগুলো ব্যবহার করেছেন তাদের সাথে যে কনভার্সেশন হয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাথে সেগুলোও বৈধ। জোর গলায় বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সুইফট কোড ব্যবহার করেই টাকা সরানো হয়েছে, সুতরাং টাকার ট্রানজাকশন বৈধ। আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত সুইফট অধিক নিরাপদ। এখন পর্যন্ত এটি কোথাও হ্যাক হয়নি। এমনকি কোনো ধরনের জালিয়াতিও হয়নি। এ পদ্ধতি নানা ধাপে নিরাপত্তার জালে আবদ্ধ। সুইফটে যে বার্তা যায়, এটিও অনেক নিরাপদ। বার্তাটি যায় গার্বেজ আকারে। এটি যেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে এবং যেখানে যাচ্ছে- দুই স্থানেই একই সফটঅয়্যার থাকতে হবে। তা না হলে বার্তাটির ভাষা উদ্ধার করা যাবে না। ফলে ডলার চুরির নেপথ্যে ওই দুই স্থানের যে কোনো এক স্থানের পদ্ধতি সম্পর্কে হ্যাকারকে জানতে হবে, যা হ্যাক করে জানা সম্ভব নয়। এছাড়া সব কম্পিউটার থেকে সুইফট বার্তা পাঠানোও সম্ভব নয়। একমাত্র ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই সুইফটের সদস্য। যার ফলে চাইনিজ হ্যাকার, মঙ্গোলীয় হ্যাকার, এলিয়েন হ্যাকার ইত্যকার যত নাম এখন প্রচার করা হচ্ছে সেগুলো আর হালে পানি পাবে না।

আ্যপল, গুগল, ফেইসবুক সহ ও অন্যান্য আরও প্রতিষ্ঠান যেখানে হ্যাকিং রোধে মাল্টি লেয়ার সিকিউরিটিজ ব্যাবহার করে, সেখানে সারা বিশ্বের রিজার্ভ যে ব্যাংকে জমা থাকে- সেই 'ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক-নিউইয়র্ক' এর সিকিউরিটি কতটা স্ট্রং হতে পারে তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। সেই কঠিন সিকিউরিটি সিস্টেম ভেংগে একাউন্ট হ্যাক করে টাকা নিয়ে যাওয়া এত সহজ ব্যাপার না। এ ধরনের একটা ব্যাংকের নেটওয়ার্ক কম্প্রোমাইজড হলে সারাবিশ্বে হৈ চৈ পড়ে যেত। তাছাড়া যদি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাকই হত, তাহলে কেবল মাত্র একটা নির্দিষ্ট একাউন্ট থেকেই টাকা লোপাট হত না। অনেকগুলি একাউন্ট থেকেই টাকা লোপাট হত। কাজেই বুঝা যাচ্ছে সার্ভার হ্যাকের যে গল্প শুনানো হচ্ছে এটা পুরোটাই ঘুম পাড়ানি মাসিপিসির গান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে এই ৮০০ কোটি টাকা এবং পরবর্তিতে আরও ৬ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনায় সরকার ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের লুকোচুরি এবং একের পর এক মিথ্যা গল্প প্রচার করার বিষয়টি এখন হাতে নাতে ধরা পড়ছে। কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, লুট হওয়া টাকার একটা অংশ নাকি শ্রীলংকা থেকে উদ্ধার করে ফেলা হয়েছে! বাকি টাকা ফিলিপাইন থেকে শিগগিরই উদ্ধার হবে। অথচ বাংলাদেশ সরকারের এই ‘আংশিক টাকা উদ্ধারের’ গল্পকে সরাসরি অস্বীকার করেছেন শ্রীলংকা সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সে দেশের পত্রিকা ‘লংকা বিজনেস অনলাইন’ ১০ মার্চ “Sri Lanka investigating money allegedly laundered from NY Fed” শিরোনামের একটি খবর প্রকাশ করেছে।খবরটিতে শ্রীলংকা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা উদ্ধারের গল্প সম্পর্কে শ্রীলংকা সরকারের একজন উর্ধ্বতন কর্তা বলেছেন--

“We have been notified. We are investigating it,”
Twenty million dollars of 101 million dollars had been recovered from an account held in Sri Lanka, according to a Bangladeshi central bank official, leaving 81 million dollars unaccounted for.
“The money has not actually reached Sri Lanka, so we are trying to trace what happened to it.
I can’t reveal any details at this stage,”

অর্থাৎ,‘আমাদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়েছে এবং তদন্ত করে দেখছি।‘
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তার দাবি মতে, ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলংকায় একটি অ্যাকাউন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলারের কোনো সন্ধান মিলেনি।
“প্রকৃতপক্ষে শ্রীলংকায় এই টাকা আসেনি। আমরা বের করার চেষ্টা করছি কী ঘটেছিল। এই মুহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।”

যেখানে শ্রীলংকা সরকারই এখনো কিছু জানেনা যে,তাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো টাকা ঢুকেছে কিনা- সেখানে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তারা ‘হ্যাকড হওয়া টাকার একাংশ’উদ্ধার করলেন কার কাছ থেকে?!

ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। যদি সরকারি লোকজন জড়িতই না থাকবে তাহলে তারা এ ঘটনা নিয়ে প্রথমে লুকোচুরি এবং পরে মিথ্যাচার করবে কেন?! ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রির্জাভ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে অবগত করার পর ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের একটি সংবাদমাধ্যমের বরাতে খবর প্রকাশের আগে পর্যন্ত সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব ছিল কেন?! তার কি কোন উওর আছে?! আমাদের এক রাখাল রাজা গভর্নর আছেন । তিনি নাকি সেরা গভর্নর। অথচ তার সময়েই আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের একেবারে লেজে-গোবরে অবস্থা।দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শেয়ার বাজার কেলেংকারী,হলমার্ক কেলেংকারী,অশিক্ষিত রাজনৈতিক দুবৃর্ত্ত ও লোটেরাদের জাতীয় ব্যাংকগুলির পরিচালক হওয়া সহ ব্যাংকিং সেক্টরের সকল মেগা লুটপাট হয়েছে তার আমলেই। এমনকি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের মাত্রার রেকর্ডটিও আছে তার ঝুঁলিতেই। কিন্তু তজ্জন্যে পদত্যাগ তো দূরে থাক -কারো কাছে জবাবদিহিও তাকে করতে হচ্ছে না। লাইন ঘাট ঠিক থাকলে কি না হয়! প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রসংগীত শুনেন তো তিনিও রবীন্দ্রসংগীত শুনেন । রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা‘র জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানালে তিনিও শুভেচ্ছা জানান। বন্যা কখন কোন্ টিভিতে কোন্ অনুষ্ঠান করেন তার খবরাখবর যেমন প্রধানমন্ত্রী রাখেন , তেমনি গভর্ণর সাহেবও রাখেন । এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শ্রোতা হিসাবে টিভিতে সরাসরি প্রচারিত অনুষ্ঠানে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী যেমন দেশবাসীকে চমকে দেন,তিনিও চমকে দেন। প্রধানমন্ত্রী যেমন তার কার্যালয়ে রবীন্দ্রভারতী লোকজন দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন,তিনিও তেমনি তার কার্যালয়ে রবীন্দ্রভারতী লোকজন দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। বাংলাদেশে কিছু কিছু লোকের অর্থনীতিবিদ বা রাজনীতিবিদ হওয়ার চেয়ে মেরুদণ্ড সোজা রাখাল হওয়াই বেশি ভাল। তাহলে দেশ ও দশের উপকার হয়।

বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ এখন যাদের হাতে, তাদের প্রায় সবাই ‘পাবলিক কা মাল আপনা ঝুড়ি মে ঢাল‘ এই নীতিতে এগিয়ে চলেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক কর্তৃক হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেয়ার পর এখন দেশের অভ্যন্তরেই সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবীদেরও কেউ কেউ সরকারি লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলছেন। সরকারের এখন প্রয়োজন নতুন একটি ইস্যু যা দিয়ে এই স্পর্শকাতর ইস্যুটি ধামাচাপা দেয়া যাবে।

পুনশ্চ: বর্তমান অবৈধ সরকার থাকতে এত বড় রিজার্ভ লুটের কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হবে না, এমনকি জানাও যাবে না আসলে কত টাকা লোপাট হয়েছে। সরকার পরিবর্তন হলেই কেবল সঠিক তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি হতে পারে।কিন্তু সমস্যা হলো প্রায় ১ কোটি প্রবাসী ভাইয়ের রক্ত পানি করা ,হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের রিজার্ভে ভরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরা খালি করে দেশের জনগণের হাতে একটা করে হারিকেন ধরিয়ে দিলেও এ দেশের জনগণ তার প্রতিবাদ করবে না, রাস্তায় নামবে না।

শনিবার ,১২ মার্চ ২০১৬
লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×