somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাইবারক্রাইমের বিশ্বরাজধানী ;) (রামনিকু ভেলসিয়া)

১২ ই অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
” রামনিকু ভেলসিয়া “


আমি আন্দাজ করলাম আপনি এই প্রথম নামটি শুনলেন। কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বড় বড় হ্যাকারদের কাছে এটি অতি পরিচিত নাম। সাইবারক্রাইমের বিশ্বরাজধানী বলে কথা। রুমানিয়ার এই শহরটি হচ্ছে ” এপিসেন্টার অব ডিজিটাল স্ক্যাম ” বা ডিজিটাল কেলেঙ্কারির নাভিকেন্দ্র। অনেকে বলে সাইবারক্রাইম গড়ে তুলেছে এই শহর। রুমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ত থেকে তিন ঘণ্টার পথ পারি দিলে আপনি পাবেন “কাউন্ট ড্রাকুলার” শহর ট্রান্সসাল্ভানিআন্স। পশুচারণের তৃণভূমির শহর বলা হয় একে। এ তৃণভূমির মাঝখান দিয়ে হাঁটতে থাকলে একসময় আপনি লক্ষ করবেন মার্সিডিজ গাড়ির দোকান। আর তখনই বুঝতে হবে এসে পড়েছি আসল জায়গাতে। ঘাসময় মাঠের মাঝখানে দেখবেন কাচের দোকানে সারি সারি থাকে সাজানো দামি দামি সব চকচকে গাড়ি যা দেখে আপনার মনে হবে যেন সম্পদের চকমকে জাদু।

রামুনিকু ভেলসিয়ার রাস্তাতে চলা দামি গাড়ির মাঝে বিএমডব্লিউ, অডিস, মার্সিডিজ, ল্যাম্বরগিনি হচ্ছে টপ অব দা লাইন। এই গাড়ির বেশিরভাগ মালিকের বয়স ২০-২৫ এর বেশি নয়। অবাক হচ্ছেন ?? আপনার মনে হতে পারে এরা মোটা বেতনের চাকরি করে বা এরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদশালী। কিন্তু আপনি কাওকে এদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে টাইপ করার ভঙ্গি করবে আর বলবে ” এরা ইন্টারনেট থেকে টাকা চুরি করে ” । সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা একে নাম দিয়েছেন “ হ্যাকারভিলি ” বা হ্যাকারদের আবাসস্থল। এরা সাধারনত অভিজ্ঞ বাণিজ্যিক অর্থ কেলেঙ্কারিতে। আর যে সকল ব্যাংক ইন্টারনেট এর আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থ আদান প্রদান করে, ম্যালওয়্যার এর মাধ্যমে তাদের অর্থ এদিক ওদিক বা নিজের অ্যাকাউন্ট এ আনতে এদের সমকক্ষ আর কোথাও পাবেন না। সোজা কথায় এরা “ পাকা ওস্তাদ ” অর্থ চুরিতে। এইসব ক্রিমিনালরা বিগত কয়েক দশকে শত শত কোটি ডলার নিয়ে গেছে রামুনিকু ভেলসিয়াতে। আর এই টাকা দিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন নাইট ক্লাব ও শপিং মল। এই রুমানিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে সাইবারক্রাইম।


১৯৯৮ সালে দেশটিতে শুরু হয় ইন্টারনেট বিপ্লব। ইন্টারনেট তখন সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে উঠে। তাইতো বর্তমানে সর্বাধিক ডাউনলোড স্পিড এ রুমানিয়া ২য়। সে সময় রামুনিকু ভেলসিয়া অর্থনৈতিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত ছিল। যুবক যুবতিরা কাজ পেত না। তাই বেকারত্তের অভিশাপ ও শর্টকাটে কোটিপতি হবার জন্য অনলাইন জালিয়াতির পথ বেছে নিতে শুরু করে এরা। ঠিক তখনই তাদের কপাল খুলে যায়। বিশ্বের বেশকিছু নামিদামি অনলাইন জালিয়াতরা এখানে এসে পরে ও তারা এখানকার কম্পিউটার জানা বেকার যুবকদের নিয়ে গড়ে তুলে তাদের নিজস্ব “ ফ্রড রিং ” বা প্রতারনা চক্র। খুব দ্রুত তারা ইন্টারনেট এ ডিজিটাল স্ক্যাম এ পটু হয়ে উঠে। এরা মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটি টিম হিসাবে কাজ করে। এই টিমে প্রোগ্রামার, দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার, দক্ষ মহিলা ফোনকর্মী, ইংলিশ জানা লোক, সহ আরও অনেকে থাকে যাদের সম্মিলিত চেষ্টা কাজটাকে অনেক সহজ করে দেয়। এখানে আরেকটি কাজ লক্ষণীয় ভাবে হচ্ছে। তা হচ্ছে নতুন নতুন মানি ট্রান্সফার অফিস। এই শহরে মাত্র ১০০০০০ লোকের বসবাস। কিন্তু এই শহরের ৪ টি ব্লকে কম করে ২ ডজনের বেশি মানি স্টোর ফ্রন্ট। আর মানিমেকিং গেম চলে এইগুলোর মাধ্যমেই। যেমন ধরুন প্রথমে ওয়েব ডিজাইনাররা বিখ্যাত এক গাড়ি বিক্রেতা কোম্পানির মত হুবুহু নকল একটি পেজ তৈরি করে। বলা হয়ে থাকে এরা ডিজাইনাররা এত ভাল কাজ করে যে দেখলে বুঝতেই পারবেননা যে এটা নকল। তখন এরা বিজ্ঞাপন দেয় যে এক আমেরিকান সৈনিক বদলি হবার কারনে তার দামি গাড়িটি শর্ট নোটিশে অবিশ্বাস কমদামে বিক্রি করতে চান। আপনি যদি গাড়িটি দেখতে চান তাহলে মাত্র সামান্য কিছু জাহাজ ভাড়া খরচ করে অর্ডার করলেই দেখানোর জন্য আপনাকে গাড়িটি পাঠিয়ে দেয়া হবে। তারপর ফোন নাম্বার যোগার করে যথাযথ ফোনকর্মী দ্বারা তাকে ইমপ্রেস করা হয়। আর সামান্য কিছু ডলার খরচা করানোর নামে তারা ভিকটিমের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সহ সমস্ত তথ্য হাতিয়ে নেয়। আর এই টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে তারা “ থার্ড পার্টি ” কে ব্যাবহার করত। এদেরও একটি ভুয়া ওয়েব আছে যা নামি দামি কোম্পানির সাথে মিল খায়। এরা নানা গল্প বলে ফাদ পেতে শিকারকে আটকাত। আর বিখ্যাত সব অনলাইন কেনাবেচার সাইটে এরা ভুয়া বিজ্ঞাপন ছেপে শিকার ধরত। আর ভিকতিমের হ্যাক করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিয়ে তারা ওই ব্যাংক এ ম্যালওয়্যার এর মাধ্যমে অর্থ এদিক ওইদিক করত। বড় বড় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কোম্পানিরাও বহুবার তাদের কাছে হার মেনেছে।

২০০৫ সালের দিকে যখন রামুনিকু ভেলসিয়া ইন্টারনেট কমার্স বিশ্বে এক “ Dirty Word ” হয়ে উঠে তখন থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা রুমানিয়াতে অনলাইনে অর্থ পাঠাতে সতর্ক হয়ে উঠে। কিন্তু এই “ হ্যাকারভিলির ” লোকেরা কি হার মানবার পাত্র। তারা আরও ভয়ঙ্কর পন্থা বেছে নেয়। তারা সবাই মিলে একটি ” গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব কনফেডারেটস ” গড়ে তুলে যেখানে তাদের অপকর্মের সহযোগীদের তারা তাদের ভুয়া এজেন্ট হিসাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। তারপর তারা ভিকটিমদের বলত ইউরোপিয় কোন দেশে তাদের এজেন্টের কাছে টাকা পাঠতে। ফলে ভিকটিম কোন সন্দেহ কর না। আর সেই এজেন্টরা টাকা এনে দিত রুমানিয়াতে তাদের নেটওয়ার্কে। আর মাঝখান থেকে তারা কমিশন কেটে রাখতো। আর ভুয়া আইডি এবং অনলাইনে নিজেদের লুকাতে এদের কোন জুড়ি নাই। তাছাড়া এরা নিজেদের প্রয়োজনে রামুনিকু ভেলসিয়াতে ইন্টারনেট ব্যাবসা গড়ে তুলে যেখানে তারা এমন ব্যাবস্থা করল যে তাদেরকে ধরা বা তাদের অবস্থান নির্ণয় অসম্ভব হয়ে উঠলো।

অনলাইনে অর্থ জালিয়াতে রুমানিয়ার বিরুদ্ধে যেখানে ২০০২ সালে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৭৫০০০, সেখানে ২০০৯ সালে তা দাড়ায় ৩৩৭০০০ এ। ২০০৫ সালে অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে রুমানিয়াতে ১০০০০০০০ মার্কিন ডলার নিয়ে আসে এরা। আর এ ধরনের জালিয়াতের মাধ্যমে অর্থ আনা হয়েছে সর্বমোট ৫৬০০০০০০০ মার্কিন ডলার। আপনি বলতে পারেন পুলিশের কাছে এদেরকে ধরা কি এতই কঠিন ? আসলে ধরা কঠিন না, এদের বিরুদ্ধে প্রমান পাওয়া কঠিন। ২০০৭ সালে রামুনিকু ভেলসিয়ার সেরা জালিয়াত “ চিতা ” কে পুলিশ ধরে আনে। কিন্তু তার কোন ই-মেইল নাই, বাসায় কোন কম্পিউটার নেই, এমনকি সে ইংলিশ ও জানে না। তাহলে তাকে কি যুক্তিতে আটকে রাখা যায় আপনি বলুন। আসলে সারা রামুনিকু ভেলসিয়াতে অসংখ্য সাইবার ক্যাফে ছড়িয়ে আছে। আর আগেই বলেছি ইন্টারনেট এ ডাউনলোড স্পিড এ এরা ২য় হবার কারনে অনায়াসে সব কাজ দ্রুত সেরে চলে যেতে পারে। তাছাড়া বর্তমানে তাদের এই জালিয়াতির ক্ষুদ্র শিল্প আন্তর্জাতিকভাবে রুপ নিয়েছে। অন্যদিকে অপরাধীরাও নিত্য নতুন জালিয়াতির কৌশল আবিস্কার করছে। ফলে কখন, কিভাবে যে এরা এদের কাজ সেরে সটকে পরে তা জানা নেই।



বর্তমানে রুমানিয়াতে রামুনিকু ভেলসিয়া আন্তর্জাতিক সাইবারফ্রড নগরী হিসাবে গড়ে উঠেছে, যেভাবে New York এর ফ্যাশন হাউসগুলো গড়ে উঠেছে একটি শিল্পকেন্দ্র হিসেবে। রুমানিয়া কবে এই কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে তা কেও জানে না। আপনি ১ জনকে আটকালে ১০ জন এসে সেই জায়গা দখল করবে। তাই রামুনিকু ভেলসিয়া ইতিমধ্যে যে ইন্টারনেট বিশ্বে একটি বিশেষ ” কুখ্যাত ” স্থান দখল করে নিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সুত্র :- রিডার’স ডাইজেস্ট
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×