somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নভেম্বর রেইন: গানস্ ন রোজেস এর দুর্দান্ত সৃষ্টি

০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১৯৯২ সালে বিশ্ব মিউজিকে যুক্ত হলো আরেকটি কালজয়ী গান, গানের নাম নভেম্বর রেইন, ব্যান্ডের নাম গানস 'ন রোজেস। হার্ড রক ধাঁচের এই গানটি ওই বছরের মধ্যেই সারা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অবশ্য এই জনপ্রিয়তার মূল কারন একক ভাবে লিরিক, কিংবা গায়কী সুরকে নির্দিষ্ট করা যায় না, বরং গান রিলিজের কিছু পরেই এর মিউজিক ভিডিওটি মুক্তি পায় এবং বিশ্ব মিউজিকের তালিকাসমূহের শীর্ষে অবস্থান করে নেয় এবং এখনও স্থান দখল করে আছে।

১৯৯২ সালের জুন মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ইউজ ইয়োর ইল্যুশন-১ (Use Your Illusion I) এর ১০ নম্বর ট্র্যাক নভেম্বর রেইন। গানটি লিখেছিল ব্যান্ডেরই সদস্য এক্সেল রস (Axl Rose)। পরবর্তীতে গানটির মিউজিক ভিডিওতে এক্সেল রস এবং ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরা অভিনয় করে। প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই মিউজিক ভিডিওটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও গুলোর মধ্যে নবম অবস্থানে রয়েছে। নান্দনিক চিত্রগহন এবং গল্প বলার ঢং ভিডিওটিকে ইতিহাসের অংশ করে রেখেছে।

যদিও নভেম্বর রেইন গানটি ১৯৯২ সালে প্রথম মুক্তি পায়, ব্যান্ডের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ট্র্যাসি গানস এর দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানা যায়, ১৯৮৩ সাল থেকেই এই গানটি লেখা শুরু করে এক্সল রস। বিশেষ করে পিয়ানোতে বিভিন্ন সময় বাজিয়ে প্রাকটিস করার সময় অন্যদের নজর কাড়ে কিন্তু পরিপূর্ন না হওয়ায় প্রায় ৯ বছর পর মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। এর আগে প্রায় পাচ মিনিটের জন্য এই গানটির জ্যামিং পাওয়া যায় কোন এক অ্যালবামে, যদিও এর দৈর্ঘ্য ৮ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড।

মিউজিক ভিডিওটি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে ঐ বছর এমটিভির সব্বোর্চ্চ অনুরোধপ্রাপ্ত ভিডিওতে পরিনত হয়েছিল। এছাড়াও শ্রেষ্ঠ সিনেমাগ্রাফির জন্য এমটিভির পুরস্কার জিতে নেয়। ভিডিওতে এক্সেল রস এর তৎকালীন প্রেমিকা স্টিফেনী সেম্যূর অভিনয় করেন যার বিয়ের পোশাকের জন্যই ৮০০০ মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছিল।



ভিডিওতে থিয়েটারে লাইভ পার্ফম্যান্সের পাশাপাশি এক্সেল রস আর তার প্রেমিকার সাথে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান দেখা যায়, যেখানে ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত থাকে। ভিডিওতে লিড গিটারিস্ট স্ল্যাশ (Slash) একটি গুরুত্বপুর্ণ রোল প্লে করে যা ভিডিওটিকে অমরত্ব লাভ করতে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে হেলিকপ্টার শটে গীর্জার বাইরে খোলা প্রান্তরে দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে গীটারে ঝড় তোলার দৃশ্য এবং পরবর্তীতে ক্রেন্ শটে রসের পিয়ানোতে দাড়িয়ে গীটারে আরেকটি ঝড় তোলা - গায়কী ভঙ্গি আর সিনেমাটোগ্রাফী সব মিলিয়ে দর্শকের হৃদয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

স্টিফেনী স্যেমুর তার অভিনয়েও যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিয়ে শেষে দৌড়ে গাড়িতে উঠার পর পরই মুখের ভঙ্গিতে যে তীব্র পরিবর্তন তা তার অভিনয়ে নিপুণতার পরিচয় দেয়। পিয়ানোতে বসে এলেক্স রসের আঙ্গুলগুলো যেনো উদ্দমতার সাথে নেচে বেড়াচ্ছিল।

ডেল জেমস এর ছোট গল্প "উইদ আউট ইউ" কে ভিত্তি করে মিউজিক ভিডিওটি তৈরী হয়েছে। ভিডিওর মাধ্যমে একটি গল্প বলা হয়েছে যার মধ্যে বেশ কিছু দৃশ্য দ্বারা সুরিয়্যেল ভাবনার প্রকাশ পায়। শুরুতে রস ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে যাবার পরেই কনসার্ট হলে বসে পিয়ানো বাজানোর দৃশ্য দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে, একই রকম দ্বন্দ্বের দেখা পাওয়া যায় বিরান প্রান্তরে বসে একাকী পিয়ানো বাজানোর পরের দৃশ্যেই লোক ভর্তি কনসার্ট হলের দৃশ্যে। আবার যীশুর চোখ দিয়ে রক্তাশ্রু গড়িয়ে পড়া যেন অনেকটা গভীর দু:খের পরিচয় প্রকাশ করে।

ভিডিওতে সামান্য কমেডি দৃশ্যও দেখা যায়, যখন স্ল্যাশ বিয়ের আংটি খুজে পায় না, কিন্তু পরেই আরেক সদস্যের কাছ থেকে পাওয়া আঙটি দিয়ে বিয়ের কাজ সমাধা হয়। আঙটি দিয়ে আসার পর টপ থেকে নেয়া চার্চ থেকে বেরিয়ে যাবার দৃশ্যে স্ল্যাশ যথার্থই দু:খী। তারপরই মরূভুমির বুকে তার গিটার রিফস্।

ভিডিওতে মিউজিকের পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। বাঁশীর চিকন সুর পাওয়া যায় মাঝে মাঝেই। শেষের দিকে কোরাসের মধ্য দিয়ে যেন হাহাকার উচ্চারিত হয়।

সব কিছু মিলেই যে নভেম্বর রেইন তৈরী হয়েছে তা বিশ্বের সেরা রক গানের অনেক তালিকায় প্রথম অবস্থান দখল করে রয়েছে, সবচে' ব্যয়বহুল ভিডিওর তালিকায় নবম স্থান তো রয়েছেই। সকল সদস্যের একনিষ্ঠ চেষ্টা আর সাধনায় একটি গান হয়ে উঠেছে অমর, অজেয় আর সেরা।

ভিডিওর অ্যানালাইসিস
ইউটিউবের লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৮:৫৩
২০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×