somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্পোরেটের মুঠোয় বন্দী ভবিষ্যৎ?

২৫ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডেইলি স্টার পত্রিকায় গুটিকয়েক বড় কোম্পানীর সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাধীন মুরগি খামারিরা বাধ্য হয়ে সেই কোম্পানীগুলোর চুক্তিভিত্তিক খামারিতে পরিণত হচ্ছেন তার একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ হলো এমন পদ্ধতি যেখানে কোম্পানীগুলো খামারিকে বাচ্চা, খাবার ইত্যাদি বিনামূল্যে সরবরাহ করবে এবং খামারি প্রতি কেজিতে নির্ধারিত লাভে কোম্পানীর কাছেই বিক্রয় করবে। বাজারে কি দামে বিক্রি হবে সেটা ঠিক করবে কোম্পানীগুলো, বিক্রয়ের দায়িত্বও তাদের।

কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ না গিয়ে আপনি যদি স্বাধীনভাবে মুরগির বাচ্চা-খাবার ইত্যাদি কিনে মুরগি পালন করেন তাহলে লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন কারণ সব কিছুই বাড়তি দামে কিনতে হবে বলে আপনার প্রতি কেজি উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক। বড় আকারের খামারের মালিক হলে হয়তো লোকসান কাটিয়ে উঠা যাবে কিন্তু লাভের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক হবার সম্ভাবনা কম। সেই বিবেচনায় খামারির কাছে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং লাভজনক না হলেও নিরাপদ।

কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর ধারণা নতুন নয়। নিত্য খাদ্যপণ্য নয় এমন অনেক শিল্পে আগে থেকেই এই পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। এর প্রভাব অনেকক্ষেত্রে ইতিবাচক কারণ এর মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কমে। তাছাড়া এমন পণ্যের নিয়মিত ভোক্তা না হওয়ায় খদ্দেরের গায়ে প্রভাব পড়ে না বললেই চলে।

খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও অনেক স্থানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং প্রচলিত আছে। বাংলাদেশে পোল্ট্রি সহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য উৎপাদনে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর গবেষণা চলছে বেশ অনেকদিন ধরে। পোল্ট্রি খাত ছাড়াও আরও কিছু খাদ্যপণ্যে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং চলছে কিন্তু সেগুলো আকারে এখনও ছোট।

প্রশ্ন হলো – কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ সমস্যাটা কোথায়? খালি চোখে সমস্যা নাই। কিন্তু আপনাকে প্রতিদিন কিনতে হয় এমন পণ্যের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন শিল্প ভয়ংকর, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে আইন ক্ষমতাবানদের হাতের মুঠোয় থাকে। ‘সিন্ডিকেট’ যেখানে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা, যেখানে প্রান্তিক ক্রেতার স্বার্থ রক্ষার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না এবং যেখানে সবাই ‘শক্তের ভক্ত কিন্তু নরমের যম’, সেখানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর উপকারভোগীর চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা অনেক বেশি হবে।

পোলট্রি ব্যবসায়ীরা যে কাজ শুরু করে দিয়েছে সেই একই পথে আরও ব্যবসায়ীরা হাঁটবে – এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন। নিয়মিত পত্রিকা পড়লে জেনে থাকবেন – বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো ইতোমধ্যেই চাল উৎপাদনের জন্য হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, চালের বাজারের প্রভাবক হয়ে উঠছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। নওগাঁ-দিনাজপুরের মতো জায়গাগুলোতে বিশাল বিশাল মিল স্থাপন করতেছে তারা। এই মিলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য তারাও কৃষকের সাথে চুক্তিতে যাবে। ধানচাষীরাও বাধ্য হবে – কারণ গত কয়েক দশকে কৃষি ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন ঘটে গেছে যে বীজ ধান থেকে শুরু করে সব উপকরণের জন্য তৃতীয় পক্ষের উপরই নির্ভর করতে হয়।

পাকিস্তান আমলে বাইশ পরিবার খুব বিখ্যাত ছিল। তারা ছিল ধনী ব্যবসায়ী গ্রুপ যারা পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো। এদের মধ্যে দুটি পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে সুপরিচিত – এ কে খান গ্রুপ এবং ইস্পাহানী গ্রুপ। আমার আশংকা – স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করবে পঞ্চাশ-ষাট বা একশটি গ্রুপ অব কোম্পানীজ। সারাদিনের খাদ্যতালিকায় দেশের বড় বড় গ্রুপগুলোর অবস্থান কোথায় সেটা একটু ভাবলেই স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। আশংকা সত্যি কিনা সেটা হয়তো আর দশ বছরের মধ্যেই টের পাওয়া যাবে।

আমাদের ভবিষ্যৎ গুটিকয়েক পরিবারের মুষ্টিতে আবদ্ধ হবার পেছনে প্রধান কারণ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ। দেশে প্রধান বিরোধী দল বলে কিছু নেই, যা আছে তারা কোনঠাসা। সরকারি দল একাধিক মেয়াদে ক্ষমতায় উপবিষ্ট থাকায় গণতন্ত্রকে বইয়ের পাতায় ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কে না জানে – রাজনীতি আর ব্যবসা হাত ধরাধরি করে চলে।

বড় গ্রুপগুলোকে আরও বড় করে তুলছে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা। দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যাংকগুলো ব্যক্তিস্বার্থে ব্যাংকিং নীতি ও প্রচলিত বিধি উপেক্ষা করে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ সুবিধা দেয়, অথচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের গলা টিপে ধরে। এমনকি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদেরকে উদ্দেশ্য করে দেয়া বিভিন্ন আর্থিক সুবিধাও বড় সকল প্রতিষ্ঠানগুলো আইন ও নীতিমালার নানা রকম ফাঁকফোকর দুর্বলতা ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে ভোগ করে। তেলা মাথায় তেল দেয়ার এই প্রথা চলতে থাকলে ভোক্তাদের ভবিষ্যতকে তারা হাতের মুঠোয় বন্দী করবে – এ আর অসম্ভব কি?

আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সংকটময়। এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোন রাস্তা আমি দেখি না।

ব্যক্তিগত ব্লগ
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:১৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×