somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়ানমার নিয়ে কিছু মজার তথ্য

১৩ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাংলাদেশের সীমান্তের সাথে যুক্ত দুটি দেশের একটি ভারত, অন্যটি মায়ানমার – এই তথ্য আমরা সবাই-ই জানি। কিন্তু বাংলাদেশের কয়টি জেলার সাথে মায়ানমারের সীমান্ত রয়েছে সেই তথ্য কয়জন জানি? আসলে মায়ানমার আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হলেও তার সম্পর্কে আমরা সামান্যই জানি। বিশেষ করে, ২০১৭ সালে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা অধিবাসী সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার আগে মায়ানমার নিয়ে সাধারণ মানুষের জ্ঞান খুব বেশী ছিল না। আজকে এই দেশটি সম্পর্কে আমরা কিছু মজার তথ্য জানবো।

বার্মা নাকি মায়ানমার

মুরুব্বীরা বলেন বার্মা, পত্রিকায় লিখে মায়ানমার – আসলে দেশের নামটা কি? একই প্রশ্ন জাগে যখন কেউ বলে রেঙ্গুন, আবার কেউ বলে ইয়াঙ্গুন। শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাস পড়ে থাকলে বার্মা-রেঙ্গুন দুটো নামই পেয়ে থাকবে। তাহলে নামের ক্ষেত্রে এই পার্থক্যের রহস্যটা কি?

১৮২৪ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত প্রায় সোয়া একশ বছর ধরে মায়ানমার ছিল ব্রিটেনের কলোনী বা উপনিবেশ। তারা এই দেশকে বার্মা বলে ডাকতো। এই নামে ডাকার প্রধান কারণ হলো মায়ানমারের জনসংখ্যার প্রায় সত্তর ভাগ হলো বামার গোত্রের মানুষ। বার্মার রাজধানীকে বলা হতো রেঙ্গুন।

১৯৮৯ সালে মায়ানমারের সামরিক জান্তা দেশ ও বিভিন্ন জেলার ইংরেজি নাম সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। এভাবেই দেশটির ইংরেজি নাম ইউনিয়ন অব বার্মা থেকে পালটে প্রথমে ইউনিয়ন অব মায়ানমার এবং কিছুদিন পরে আবারও পালটে রিপাবলিক অব ইউনিয়ন অব মায়ানমার রাখা হয়। একইভাবে, রেঙ্গুনের নাম পালটে হয় ইয়াঙ্গুন। সেই থেকে দেশটির অফিসিয়াল নাম হলো মায়ানমার। তবে, পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ মায়ানমারের এই নাম পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে রাজি নয়, এ কারণে তারা এখনও দেশটিকে আগের নামেই ডাকে।

দেশটির নাম যেহেতু পরিবর্তন করা হয়েছে, তাই আমরা মায়ানমার নামেই ডাকবো। তবে, এর পুরাতন নামটি ভুলে গেলে চলবে না কারণ ইতিহাস পড়তে গেলে ঘুরে ফিরে বার্মার কথাই আসবে, মায়ানমারের নয়।

রাতারাতি গজিয়ে উঠা রাজধানী

মায়ানমারের রাজধানীর নাম কি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই ভুল করবে। এমনকি মায়ানমারের বাসিন্দারাও ভুল করলে অবাক হবার কিছু নেই, কারণ তারা একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখেন তাদের রাজধানী পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে।

নেপিদো (Naypyidaw) হলো মায়ানমারের রাজধানী। ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে পূর্বের রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে সরিয়ে নেপিদোকে রাজধানী করা হয়। তবে সাধারণ মানুষের কাছে এর নাম প্রকাশ করা হয় ২০০৬ সালের মার্চ মাসে।

এই রাজধানীকে গড়ে তোলার কাজটি করা হয়েছে খুব গোপনে। এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও জানতেন না রাজধানী পরিবর্তনের এই খবর। নেপিদো আগের রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে তিনশ কিলোমিটারের দূরত্বে অবস্থিত এবং সুপরিকল্পিত নগর। দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা থেকে এখানে রানওয়ের মত দীর্ঘ ও প্রশস্থ রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়েছে, বাড়িঘরকেও সেভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে নেপিদো মায়ানমারের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী যার জনসংখ্যার ঘনত্বও খুবই কম।

ইয়াঙ্গুন থেকে রাজধানী সরিয়ে নেয়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন রকম ধারণা প্রচলিত রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব এর মাধ্যমে সামরিক জান্তার ক্ষমতাকে আরও সংহত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করে। অন্যদিকে, সরকারি ব্যাখ্যা অনুযায়ী ইয়াঙ্গুন ছিল মায়ানমারের এক প্রান্তে অবস্থিত নগরী যেখানে ঘনবসতি এবং সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই কম। অন্যদিকে, বর্তমান রাজধানী মায়ানমারের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং আধুনিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার সকল সুযোগ এখানে বিদ্যমান। এ কারণেই ২০০২ হতে ২০১২ সালের মধ্যে এই রাজধানীটি তৈরি করা হয়

জনপ্রিয় পোশাক লুঙ্গি

আমাদের বাংলাদেশে লুঙ্গি পড়া হয় ঘরোয়া পোশাক হিসেবে। নিম্নবিত্তের পুরুষরা অবশ্য ঘরের বাহিরেও লুঙ্গি পড়েন। মায়ানমারের চিত্রটা ভিন্নরকম। সেখানে লুঙ্গি ঘরের এবং বাহিরের পোশাক। এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, যেমন বিয়ে, অতিথিরা লুঙ্গি পড়ে উপস্থিত হন।

বাংলাদেশের সাথে আরেকটি পার্থক্য হলো – আমাদের দেশে লুঙ্গি কেবল পুরুষদের পোশাক। অন্যদিকে মায়ানমারে মহিলারাও লুঙ্গি পড়েন। অবশ্য নারী ও পুরুষদের লুঙ্গির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সাধারণত রঙ ও নকশার ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের লুঙ্গিতে পার্থক্য করা হয়। এছাড়া, লুঙ্গি বাঁধার ক্ষেত্রেও পার্থক্য লক্ষণীয়।
পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ পদ্ধতির অনুসরণ

আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানের দূরত্ব হিসাব করি কিলোমিটারে। কিন্তু মায়ানমার এক্ষেত্রে পরিমাপ করে ইঞ্চি ও মাইল-এ।

আমরা জানি, পরিমাপের ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি সারা বিশ্বে প্রচলিত। আমরা অনুসরণ করি মেট্রিক পদ্ধতি। সারা বিশ্বে বেশিরভাগ দেশই মেট্রিক পদ্ধতিতে পরিমাপ করে। অন্য পদ্ধতিটি হলো ব্রিটিশ বা ইমপেরিয়াল পদ্ধতি। ব্রিটেন এবং অল্প কিছু দেশ যারা আগে ব্রিটেনের উপনিবেশিক রাষ্ট্র ছিল এখনও ব্রিটিশ পদ্ধতিতে পরিমাপ করে। মায়ানমার সেই অল্প কিছু দেশের একটি।

ওয়েটারকে ডাকার বিচিত্র পদ্ধতি

আমরা হোটেল-রেস্তরায় বসে কোন প্রয়োজনে ওয়েটারকে কিভাবে ডাকি? ‘এই যে ভাই’ কিংবা ইংরেজিতে ‘এক্সকিউজ মি?’। ওয়েটারও বুঝতে পারে তাকে ডাকা হচ্ছে এবং সে সাড়া দেয়। ওয়েটারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মায়ানমারে রয়েছে বিচিত্র এক পদ্ধতি। সেখানে মুখ দিয়ে অদ্ভুত এক রকম শব্দ করা হয় যা অনেকটা হাতের পিঠে চুমু খাওয়ার শব্দের মতো। যে ওয়েটারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে তার দিকে ফিরে দু থেকে তিনবার এরকম শব্দ করা হয়, ওয়েটারও বুঝতে পারে তাকে ডাকা হচ্ছে। মায়ানমার ছাড়া অন্য কোথাও এভাবে কাউকে ডাকা হলে তুলকালাম কান্ড ঘটে যেতে পারে, তবে মায়ানমারে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

বিভিন্ন সংস্কৃতির মিশেল

মায়ানমারে সর্বমোট ১৩৫ জাতের মানুষ বসবাস করে। এরা মায়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করে এবং প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। যদিও বামার গোত্রের মানুষরাই মায়ানমারের জনসংখ্যার প্রায় সত্তর শতাংশ, অন্যদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সর্বক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যায়। ফলে, মায়ানমারের কোন এলাকায় গেলে হয়তো এক-পায়ে চালিত নৌকার ব্যবহার দেখা যাবে, অন্য এলাকায় পাওয়া যাবে এমন মানুষ যারা খুব ভারী রিং পড়ে নিজেদের গলাকে লম্বা করে তুলছে। নানা সংস্কৃতির মিশেল ঘটায় মায়ানমারের বৈচিত্র‍্যই বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে মায়ানমার ভ্রমণের জন্য খুব আদর্শ দেশ নয়। দেশটির অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এর জন্য দায়ী। কোন কোন অঞ্চলে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই, মায়ানমার সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন প্রতিবেদনই ভরসা। তাতে অন্ততঃ দুধের সাধ ঘোলে হলেও মিটে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:১৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×