somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমু ও হিমুলীগ

০৭ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘নোটটা বদলায়ে দেন আফা। ছেড়া নোট।’
রূপার ভেতরে ভেতরে ‘নিউজ’ হয়ে গেল। মানে খবর হয়ে গেল। পঞ্চাশ টাকার একটা নোটই আছে তার কাছে। ছেড়া নোট বদলাবে কোত্থেকে? রূপা গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করে বললো, ‘কই দেখি নোটটা?’ রিকশাওয়ালার মুখে অহংকার মেশানো বিজয়ের হাসি। ছেড়া নোটটা আবিস্কার করে সে খুব খুশি। যেন সে মুসা ইব্রাহীম। হিমালয় জয় করে ফেলেছে।
রূপা বললো, কই আমি তো ছেড়া দেখছি না।
রিকশাওয়ালা তাচ্ছিল্যের ভঙি করে বললো, নজর দিয়া দেহেন।
রূপা ‘নজর’ দিয়ে দেখল। হ্যাঁ, ছেড়া। ছিড়ে দুই টুকরা করা। স্কচ টেপ দিয়ে এত সাবধানে জোড়া লাগানো যে খুব সহজে কারো বোঝার উপায় নেই।
‘-কি আফা বিশ্বাস হইলো?’
রূপা সরু গলায় বললো, শোন, আমার কাছে আর কোনো টাকা নাই। এই একটাই নোট। তুমি এক কাজ করো পুরোটাই নিয়ে যাও।
‘-ছিড়া নোট নিয়া ফায়দা কি?’
‘-ফায়দা আছে। গুলিস্তানে ছেড়া নোট বদলে দেয়। পাঁচ টাকা কেটে রাখবে। পঞ্চাশ টাকার বদলে তুমি পাবে পয়তাল্লিশ টাকা। ভাড়ার পঁচিশ টাকা বাদেও তোমার কুড়ি টাকা লাভ থাকবে।’
‘-আমার লাভের দরকার নাই।’
‘-এখন আমি টাকা পাব কোথায়? বলেছি না আমার কাছে একটাই নোট।’
‘টাকা পয়সা না নিয়া রিকশায় উঠেন কেন?’
‘-ভুল করে উঠি। তুমি ভুল করো না? মাঝে মাঝে বৃষ্টির দিনে পর্দা ছাড়া চলে আসো না?’
যুক্তি রিকশাওয়ালাকে কাবু করল না। এরা যুক্তি বোঝে না। সে রাগি রাগি চোখে রূপার দিকে তাকিয়ে রইলো। রূপা বললো, আচ্ছা ঠিকাছে তুমি মিনিট দশেক অপেক্ষা করো। তোমাকে ভালো নোট দেব। রিকশার সিটে বসে আরাম করে চা খাও।

দশ মিনিটের কথা বললেও রূপা জানে হিমুদের কোনো টাইমটেবিল থাকে না। হিমুর কাছে দশ মিনিট যা দশ দিনও তা। কিচ্ছু করার নেই, অপো তাকে করতেই হবে। দুই ঘণ্টা দেরি করলেও সে এই ব্যাপারে হিমুকে কিছুই বলতে পারবে না।
একুশ বাইশ বছরের একটা মেয়ের জন্য একা একা অপো করা যে কি যন্ত্রনা, অনেকেই সেটা বিশ্বাস করবে না। সেজেগুজে একা দাড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের দিকে সবাই খানিকটা কৌতূহল, খানিকটা করুণা এবং খানিকটা তাচ্ছিল্য নিয়ে তাকায়। বুড়োরা এমন ভঙ্গি করে যেন দেশ রসাতলে যাচ্ছে। রমনা পার্কের পাশের এই রাস্তাটা এখন বলতে গেলে বুড়োদের দখলে। সকাল বিকাল এদের দেখা যায় হাটাহাটি করছে। স্বাস্থ্য রা। যে করেই হোক আরো কিছুদিন বাঁচতে হবে। সমাজের অনাচার দেখে নাক সিটকাতে হবে। কিছুতেই মরা চলবে না।

প্রচণ্ড হুইসেলের শব্দে ঘাড় ঘুরে তাকালো রূপা। হঠাৎ করে রূপা দেখল পুরো রাস্তা ফাকা হয়ে যাচ্ছে। ফাকা রাস্তায় সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে কয়েকটি দানব আকৃতির গাড়ি। হয়ত মন্ত্রীর গাড়ি যাচ্ছে। রূপার ইচ্ছা করছে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। গাড়িতে যদি অর্থমন্ত্রী থাকে তাহলে বেশ ভালো হয়। ‘ভাত দে’ ছবির শাবানার মতো ভঙ্গি করে গাড়ির সামনে গিয়ে পড়বে সে। এবং প্রমিত বাংলায় শুদ্ধ উচারণে বলবে, 'জনাব আবুল মাল, আপনার ভান্ডার থেকে আমাকে কিছু ‘মাল’ দিন। খুব বেশি না পঞ্চাশ টাকার একটা কড়কড়ে নোট হলেই চলবে।'

দেশীয় পুলিশ এক আজব ‘চিজ’। এই রকম মন্ত্রীর গাড়ি দেখলেই তাদের কর্তব্যের কথা মনে পড়ে যায়। হুইসেল আর ডাণ্ডা হাতে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ডাণ্ডা নাচিয়ে পথচারীদের রাস্তাছাড়া করে ভিআইপিদের চলাচল উপযোগী করে দেয়। মন্ত্রী সাহেবরা তখন পুলিশের দায়িত্বের প্রতি সততা দেখে সন্তুষ্টচিত্তে বাড়ি ফেরেন। এই রকম একজন কর্তব্যপরায়ণ পুলিশের ডাণ্ডার সামনে পড়ে যায় রূপা। রাস্তার পাশ থেকে আবারো পার্কের ভেতরে ঢুকে পড়ে সে।

রিকশাওয়ালা চা খেতে খেতে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রূপাকে দেখছে। এও এক যন্ত্রনা। একজন কেউ তাকিয়ে থাকলে কিছুতেই স্বাভাবিক হওয়া যায় না। রূপা আবার ঘড়ি দেখল, মাত্র পাঁচ মিনিট পার হয়েছে। রূপা ভাবছে অন্য কথা। হিমুর কোনো ভরসা নাই। শেষ পর্যন্ত যদি সে না-ই আসে তাহলে কী করবে?



আজকের দিনটা ভালোভাবে শুরু হয়েছে হিমুর, এটা বলা যেতেই পারে। দিনের প্রথম চায়ের কাপে একটা মরা মাছি পাওয়া গেছে। মৃত মাছির চায়ে ভেসে থাকার কথা ছিল, এই মাছিটা আর্কিমিডিসের সূত্র অগ্রাহ্য করে ডুবে ছিল। চা শেষ করার পর স্বাস্থ্যবান মাছিটাকে আবিস্কার করে হিমু। চায়ের কাপে মৃত মাছি ইঙ্গিতবহ। চায়নিজ গুপ্তবিদ্যায় কাপের তলানির চা পাতার নকশা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তলানিতে জমে থাকা চায়ের পাতা যদি কোনো কীটপতঙ্গের আকার ধারণ করে তাহলে বুঝতে হবে আজ বিশেষ কোনো ঘটনা ঘটবে। হিমুর চায়ের কাপের তলানিতে কোনো কীট পতঙ্গের নকশা না, সরাসরি মাছি!
আজ নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটবে।



হিমু এখন দাঁড়িয়ে আছে বসুন্ধরা সিটির সামনে।
আজকালকার ঢাকা শহরে বড় ধরনের একটা পরিবর্তন এসেছে। আগে রূপবতী তরুণীদের একা একা হাটতে দেখা যেত। এখন আর সেটা দেখা যায় না। সব সময় রূপবতীদের সাথে একটা করে চ্যাংড়া ছেলে থাকে।

হিমু একটা চ্যাংড়া ছেলে আর একটা রূপবতী মেয়েকে ফলো করছে। এরা এতক্ষণ মার্কেটের ভেতরে হাত ধরাধরি হেটেছে। এখন মার্কেট থেকে বেরিয়ে একটা বাইকে উঠেছে। বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে দেখা গেলো মেয়েটা পেছন থেকে শক্ত করে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরলো। হিমুর অবাক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হলো না। এটাই হয়ত প্রকৃতির নিয়ম। প্রকৃতি সবার জিনে লিখে রেখেছে, ‘তুমি যখন তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাইকে উঠবে তখন তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে। নিজেদের জন্য এটা করবে না। করবে আমার নিয়ম মানার জন্য। আমি নিয়ম বানিয়ে দিয়েছি। এই নিয়ম তোমাকে মানতেই হবে।’
এই ব্যাপারে হিমুর বাবার একটা বানী ছিল। বানীটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। হিমু মনে করার চেষ্টা করল। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন ডাক দিলো।

-এই হিমু!
হিমু ঘুরে তাকালো। চোখ পিট পিট করে চারপাশে দেখছে সে। কেউ নেই আশে পাশে। একটু দূরে গাড়িতে বসে আছে বোরকা পরা একজন মহিলা। নেকাবে মুখ ঢাকা। হাত ইশারায় হিমুকে ডাকছে। হিমু কাছে গেল। কাছে যেতেই হিমুর চোখে পড়লো মহিলার দাঁত আর চশমার ডাঁট, কালো নেকাবের ভেতর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই দুইটা বস্তু। তবুও চিনতে পারল না সে।

-কি রে! চিনতে পারছিস না! আমি তোর সাহারা খালা। সাহারা খাতুন। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছি। দাঁড়া, নেকাব খুলি। নেকাব খুললে চিনতে পারবি।
সাহারা খাতুন নেকাব খুলে হিমুর দিকে তাকিয়ে ভুবনজয়ী হাসি উপহার দিলেন। হাসি দেখে হিমু আনন্দে প্রায় চিৎকার করে উঠল।
-ওয়াও! সাহারা খালা! হাউ সুইট! কতদিন পর দেখা।
আসল কথা হচ্ছে, হিমু এই মহিলাকে চিনতে পারেনি। কেবলই মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছে সে। সে যে মহিলাকে চিনতে পারেনি, এটা সে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না। নিজেকে আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে পরিচয় দিচ্ছে। বিষয়টা সন্দেহজনক। সন্দেহজনক হলে হোক তাতে তার কিছু যায় আসে না। বিগলিত হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো-
-আছো কেমন খালা?
-ভালো নাই রে! অনেক সমস্যায় আছি। একের পর এক সমস্যা। তোকে আমার সঙ্গে যেতে হবে। আয় গাড়িতে ওঠ।
-কোথায়?
-প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে হবে শুনে তো হিমুর চোখ ছানাবড়া! আচ্ছা এই ‘ছানাবড়া’ জিনিসটা কি? খায় না মাথায় দেয়? শুকরছানা বা কুকুরছানা থেকে ‘ছানা’ নিলে আর ডালবড়া থেকে ‘বড়া’ নিলেও তো কিছু দাঁড়ায় না। দুধের ‘ছানা’ আর হিন্দি ‘বড়া’ মিলিয়েও কি কিছু দাঁড়ায়?
সাহারা খালা হালকা কাশি দিলেন।
-কি রে! টাশকি খেলি নাকি?
হিমু আবারো অবাক হলো।
আচ্ছা ‘টাশকি’ জিনিসটা কি? এটা খেলে কী হয়? টাশকি খেতে কেমন? টক? ঝাল? নাকি মিষ্টি?
হিমু গাড়িতে উঠে বসল। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে হবে, এটা না জানলেও সে গাড়িতে উঠে বসত। চায়ের কাপে আস্ত মশা যখন ধরা দিয়েছে, তার কারিশমা না দেখে ছাড়বে না হিমু। চায়নিজ গুপ্তবিদ্যার একটা পরীাও হয়ে যাবে। মন্দ কী?
আরাম করে একটা কুশন কোলে নিয়ে বসল হিমু। সবচেয়ে ভালো হয় পায়ের উপর পা তুলে বসতে পারলে। সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ হিমুর পা খালি। জুতা নাই। খালি পায়ের একজন রাস্তার লোককে নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না।
সাহারা খালা আবারো কাশি দিলেন।
-কি রে! গুটি-সুটি মেরে বসেছিস কেন? ভয় পাচ্ছিস নাকি?
-না খালা। তুমি থাকতে ভয় কিসের!-
-তা ঠিকই বলেছিস। তুই যাচ্ছিস স্বরাষ্টমন্ত্রীর গাড়িতে। তোর আবার ভয় কিসের! আচ্ছা হিমু, একটা কথা বলতো। দেশের আইন শৃঙখলার অবস্থা কি? তোর কাছে কেমন মনে হচ্ছে?
-ঝাক্কাস! মাইরি বলছি!
-ছিঃ হিমু! এইসব কী ভাষা? ভুলে যাস না, সম্পর্কে আমি তোর খালা। মুরুব্বিদের সামনে মুখে লাগাম দিতে হয়।
হিমু বলতে চাইলো, কেন খালা? মুরুব্বিদের সামনে কি ঘোড়া হয়ে যেতে হয় নাকি যে মুখে লাগাম দিতে হবে। কিন্তু বলা হলো না। তার আগেই কথা বললেন সাহারা খালা।
-বুঝলি হিমু, দেশের অবস্থা যে ঝাক্কাস এই কথাটা তুই বুঝলি কিন্তু বিরোধী দল তো বোঝে না।
-খালা, ওরা নাদান, ওদের ক্ষমা করে দিন।
-না রে হিমু। তোরে একটা গোপন কথা বলি। সাগর-রুনির বিষয়টা নিয়ে আমি বেশ বিপদের মধ্যে আছি। ভয়ে আছি যদি সামনের বার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়? তোর তো বিশেষ কিছু মতা আছে। আমারে এই বিপদ থেকে উদ্ধার কর।
হিমু ষড়যন্ত্র করার ভঙ্গিতে সাহারা খাতুনের কাছে ঝুঁকে এলো। প্রায় ফিসফিসিয়ে বললো ‌'এই বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায় খুবই সিম্পল। আপনাকে দুটা নাটক মঞ্চস্থ করতে হবে।'
-কি নাটক? চিত্রনাট্যকার কে?
-চিত্রনাট্যকার লাগবে না। নাটকের উদাহরণ তো আপনার সামনে অনেক আছে। সবার আগে মঞ্চস্থ হবে ‘'জজ মিয়া’' নাটক। এর পর করতে হবে ‘'সুরঞ্জিত নাটক’'। ‘জজ মিয়া’ নাটকের সফল পরিবেশনা শেষে আপনি পদত্যাগ করবেন। তখন প্রধানমন্ত্রী আপনাকে অনুরোধ করবেন ফিরিয়ে আসার জন্য। ব্যস, ভোট এবং রাজত্ব দুইটাই আপনার। কি আইডিয়া পছন্দ হয়েছে?
হিমুর আইডিয়া সাহারা খাতুনের খুবই পছন্দ হয়েছে। কিশোরীদের মতো তিনি আনন্দে প্রায় কেঁদেই ফেললেন।
সাহারা খালা বললেন, হিমু চল। তোকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করিয়ে দেই। তোর সাথে দেখা করার জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপো করছেন।
হিমু কিছু বললো না। সে ভাবছে রূপার কথা। হঠাৎ করেই মনে পড়ল রমনা পার্কে এক রূপবতী তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। থাক অপেক্ষা করে। অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়। আচ্ছা ‘টাশকি’ও কি খেতে সুমিষ্ট?


রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে।
সদস্য মাত্র তিন জন। প্রধানমন্ত্রী, সাহারা খালা আর হিমু।
বসার সোফাতে না বসে হিমু মাটিতে বসে পড়েছে। হিমুর এই কর্মকাণ্ডে খুবই ব্যথিত হলেন প্রধানমন্ত্রী।
-হিমু, তুমি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তোমার এইভাবে ফোরে বসে পড়াটা ঠিক হয়নি। সোফায় উঠে বসো।
সাহারা খালা চোখের ইশারায় হিমুকে কিছু একটা বললেন। হিমু খালার ইশারার কিছুই বুঝতে পারল না। তবে ফোর থেকে উঠে সোফায় বসল সে। প্রধানমন্ত্রী এইবার দায়মুক্তির হাসি হাসলেন। বললেন-
-বুঝলে হিমু! তোমার কথা অনেক শুনেছি। তুমি নাকি যে কোনো সমস্যা সমাধান করে দিতে পারো?
হিমু মধুর ভঙ্গিতে হাসল।
-তাছাড়া তোমার নাকি সুপার ন্যাচরাল পাওয়ারও আছে?
হিমু আবার হাসল।
-তাহলে শোনো। তোমাকে যে জন্য ডেকেছি। আমি বিরাট ঝামেলায় পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অজুহাত তুলে আমাদের সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তুমিই চিন্তা করো কত্তবড় ইনসাল্ট! বিশ্ব ব্যাংক নিজেই দুর্নীতিগ্রস্থ, অথচ বলে কিনা আমরা দুর্নীতিগ্রস্থ!
হিমু চোখে-মুখে সিরিয়াস ভাব এনে বললো
-খুবই খারাপ ব্যাপার। এটা একটা ষড়যন্ত্র।
-এই তো। তুমি বিষয়টা বুঝতে পেরেছ।
-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাকে এখন কী করিতে হইবে?
-এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতেই হবে। তুমি আমাকে সাহায্য করো।
হিমু মাথা নিচু করে কুর্নিশ করার ভঙ্গিতে বললো ‘তথাস্তু’। এর পর প্রধামন্ত্রীর কানে কানে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বললো। সাহারা খালা আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। এটা কি ধরনের বেয়াদবি! না হয় হিমুর কিছু পাওয়ার আছে, তাই বলে বেয়াদবি কিছুতেই মানা যায় না। সাহারা খাতুনের আতঙ্ক মুহূর্তেই কেটে গেল। কারণ হিমুর কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী হো হো শব্দে হেসে উঠলেন। বোঝাই যাচ্ছে তিনি হিমুর উপর বেশ সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রীকে সর্বশেষ কবে এতটা খোশমেজাজে দেখেছেন সাহারা খাতুন তা মনে করতে পারলেন না।
আজকের বৈঠক এখানেই সমাপ্ত। হিমু চলে যাচ্ছিলো। প্রধানমন্ত্রী তাকে থামালেন।
-হিমু, আমি তোমার উপর খুব খুশি। তুমি সত্যিই জিনিয়াস। বলো তুমি কি চাও আমার কাছে। যা চাইবে তাই পাবে।
-একটা প্রশ্নের উত্তর চাই।
সাহারা খালা আর প্রধানমন্ত্রী একে অপরের দিকে তাকালেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘হিমু তুমি নির্ভয়ে বলো।’
-দুই ঘণ্টা ধরে আমি একটা শব্দ নিয়ে টেনশনে আছি। আচ্ছা ‘টাশকি’ কি খাওয়া যায়? এটা খেতে কেমন? দেখতে কেমন? টক? ঝাল? না মিষ্টি?
প্রধানমন্ত্রী এবার হেসে ফেললেন।
-তাই তো! এটা তো কখনো ভেবে দেখিনি। যাই হোক, কোনো ব্যাপার না। সংসদের আগামী অধিবেশনেই ‘টাশকি’ বিষয়ক একটা কমিটি করে দিব। তোমার দীপু খালামণি কমিটির সভাপতি থাকবে। এই প্রকল্পের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখবো। তুমি নিশ্চিত থাকো। ডিজিটাল সরকার ‘টাশকি’র গোষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়বে ইনশাল্লাহ।’
-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার আশ্বাসে আমি খুবই খুশি হয়েছি। আরেকটা শব্দ কি এই কমিটিতে ঢুকিয়ে দেয়া যায়? শব্দটা হলো ‘ছানাবড়া’।




পরদিন পত্রিকার হেডলাইন।
‘বিশ্ব ব্যাংকের টাকাতেই পদ্মা সেতু’।
গণি মিয়ার টং দোকানে চা খেতে খেতে মনোযোগ দিয়ে পেপার পড়ছে হিমু। পত্রিকায় লিখেছে, সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগী একটি ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ব্যাংকের নাম রাখা হবে ‘বিশ্ব ব্যাংক’। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিত্তশালী ও দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য নিঃশর্ত সাহায্য চাওয়া হবে। প্রাপ্ত অর্থ রাখা হবে নবগঠিত এই বিশ্ব ব্যাংকে। সরকার আশা করছে খুব শিগগিরই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
পত্রিকার পাতা বন্ধ করে হিমু তৃপ্তির ঢেকুর তুললো। যাক জননেত্রীর সম্মান তথা দেশের সম্মান অন্তত রক্ষা হলো। এবার ‘টাশকি’ এবং ‘ছানাবড়া’ প্রকল্পের রেজাল্টের অপেক্ষা।



প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হিমুর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ।
হিমু আজকে একাই এলো। এসে দেখে এলাহি কারবার! হলুদ পাঞ্জাবি পরা একদল তরুণ, সবার খালি পা। এদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে হিমু জানল, হুমায়ুন আহমেদ নামের এক লেখক নাকি তাকে নিয়ে দিস্তার পর লিখে গেছে। আর সেসব ‘ছাইপাশ’ গিলে শহরের অলি-গলিতে নাকি অসংখ্য ‘হিমু’ তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এরকম শ খানেক পাগলাটে হিমুকে হাজির করেছেন একদিনের নোটিশে। এরা সবাই কফি মেশিনের সামনে ভিড় করেছে। ফ্রি কফি খাওয়ার জন্য। হিমু খুব রাগ করল। ছিঃ! হিমুদের এই সব মানায় না।
ওয়াকিটকি হাতে একজন যন্ত্রমানব এসে বললো, ‘প্রধানমন্ত্রী এসে গেছেন। আপনারা লাইন ধরে ভেতরে আসেন।’
সবার সঙ্গে হিমুও ঢুকল। গিয়ে দেখে ভেতরে সাহারা খালা। একটু পর প্রধানমন্ত্রীও এলেন।




পরদিন পত্রিকায় আসলো
‘গঠিত হলো হিমুলীগ’। পাশেই একটি ছবি। প্রধানমন্ত্রী ফুলের তোড়া তুলে দিচ্ছেন হিমুর হাতে। রূপা সংবাদটি শব্দ করে তার বাবাকে পড়ে শোনাচ্ছে।
সংবাদে লেখা হয়েছে, সারাদেশের হিমুরা এইবার হিমুলীগে যোগ দিয়েছেন। তাদের দলনেতা হিমালয় ওরফে হিমুর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের বরণ করে নেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘হিমুদের সুপার ন্যাচরাল পাওয়ার আছে। এই পাওয়ার তাদের একার সম্পদ নয়। আশা করছি, এখন থেকে সারা দেশের মানুষ এই পাওয়ারের সুবিধা পাবে। দেশের যে কোনো সমস্যা সমাধানে তারা এগিয়ে আসবে।’
হিমু লিডার তার বক্তব্যে বলেন, বাকি জীবনটা তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে কাটিয়ে দিতে চান। অনুষ্ঠানে শ্রমিক লীগ, ওলামা লীগ, ছাত্রলীগ এবং মৎস্যজীবি লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

[বি. দ্র.]
দুই হুমায়ুনের [হুমায়ুন আহমেদ ও আলিম আল রাজি] লেখা অনুসরণে লিখিত হয়েছে লেখাটি। ;)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৩২
৩৮টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×