somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টিস্নাত দুপুর অথবা জোছনার সমুদ্র বিলাশ কিংবা শুধুই অনুভূতিনামা

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাকে কেউ যখন জিজ্ঞেস করে আমি সবচেয়ে ভালো কি করতে পারি, আমি অনেক ভাবনা চিন্তা করে বলি, আড্ডায় বসে আমি অনেক বক বক করতে পারি। বিরামহীন বক বক। যেই সব কথার শুরু যেকোনো জায়গা থেকে, একি ভাবে শেষটাও এখানে সেখানে। উদ্দেশ্য বিধেয় নেই। নেই তেমন কোনো প্রয়োজনীয়তাও। সবই আমার আজকের গল্প, কিংবা গতকালের গল্প। দিনের গল্প, রাতের গল্প, বন্ধুর গল্প, পরিবারের গল্প। আমি যখন বক বক করতে থাকি, তখন আমার মনে হয়, এই সব কথার প্রয়োজন শুধু আমারই। হয়তো কথা শেষ হবার পরে ভেতরে ভেতরে আমি অনেক হাল্কা হয়ে যাই। সেটা আর কেউ সেভাবে বুঝতে পারে না। ঠিক একি ভাবে কেউ একটা প্রশ্ন করে উত্তরটা নিয়ে এত বেশি মাথা ঘামায়, যে কখনো খেয়ালই করে না যাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে, সে এই প্রশ্নের পরে কি প্রশ্নের উত্তর তৈরী করছে মনে মনে। মানুষের সব সময় সবচেয়ে ভালোটা নিয়েই সব আগ্রহ। দ্বিতীয়, তৃতীয়, এরপরে, তারপরে এসব নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। মানুষের এই সহজাত ধরন জানার পরেও আমি খুব আগ্রহ করে বসে থাকি কেউ যদি ভুল করেও জিজ্ঞেস করে আমি আর কি কি কাজ খুব ভালো পারি। কারন দ্বিতীয় কাজটাও আমার খুব পছন্দের। আমি একজন ভালো শ্রোতা, আমি মানুষের গল্প শুনতে খুব পছন্দ করি। না, টান টান উত্তেজনার গল্প নয়, অনবদ্য রোমান্টিসিজমের কথকতা নয়, খুব সাধারন বেড়ে উঠার গল্প, হারিয়ে যাওয়া অনুভুতির গল্প, অকারন মন খারাপের গল্প, অযথাই হা হা হি হি র গল্প, সকালের গল্প, বিকেলের গল্প, পাশের বাড়ির টুকটুকের গল্প, ‘এটা কোনো গল্প নয়’ এই শিরোনামে শুরু করা কোনো গল্প। কি এক অদ্ভুত আগ্রহ এসব দিনলিপি গল্পের ব্যাপারে আমার। ঘন্টার পর ঘন্টা বলে যাওয়া কিংবা শুনে যাওয়ার এই ধৈর্য্য, এই দিন যাপনের ভালোলাগার উৎস কোথায়? কে শিখিয়েছে এই অনুভূতি প্রবণতা?

কি বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে? এই প্রশ্ন কখনো কেউ আমায় করেনি। তাই এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না। কখনো নিজেকেও জিজ্ঞেশ করা হয়নি। তবে মানুষের স্বপ্নের গল্প গুলো দারুন। আমাকে খুব আনন্দ দেয়, ভাবায়। কিছু দিবা স্বপ্ন, কিছু ঘোর লাগা স্বপ্ন। তবে কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেশ করে আমার স্বপ্ন গুলো নিয়ে, আমি প্রথম যেই কথা বলি সেটা হলো, আমি এক সাথে কখনো দুটো কাজ করি না। যখন ঘুমাই তখন শুধুই ঘুমাই। অতএব, ঘোর লাগা স্বপ্ন দেখার সুযোগ নেই। আর দিবা স্বপ্ন দেখার মতন সময় কই। এত ব্যস্ত জীবন। আসলে এসবই ছুতো, হাস্যকর স্বপ্ন গুলোর কথা বলতে অস্বস্তিবোধ থেকেই এই পলায়ন মনোবৃত্তি। কত কত সকালে (সকালের সময়ের হিসেব আমার মতন কখনো ১০টা, কখনো ১২টা) ঘুম ভেঙেছে, আর হুড় মুড় করে উঠে পাখিটাকে খুঁজেছি। ঝুম বৃষ্টির দুপুরে অকারনে শূন্য রাস্তা ধরে কাক ভেজা হয়ে হেটে যাচ্ছি, আমার কাঁধে বসে ছিল ছোট্ট টিয়ে পাখিটি, আমার পরনে হলুদ পাঞ্জাবী ছিল কিনা মনে নেই, পায়ে স্যান্ডেল ছিল কিনা তাও মনে করতে পারছি না। পাখিটি কি “তুই রাজাকার” বলতে পারে? নাহ কিছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে অনেক বৃষ্টি। বাশিওয়ালা একা দাঁড়িয়ে যাত্রি ছাউনির ভেতরে। সে কি রবীন্দ্রসংগীত এর সুর তুলছে? এটা কি নীপবনের গান? নাহ! কিছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে আমি বৃষ্টিতে ভিজেই যাচ্ছি। আমার হাতে কি একটা গোলাপ নাকি কদম ফুল ছিল? সেই ফুলের আশায় এই পৃথিবীর কোনো প্রান্তে কি অপেক্ষায় বসে আছে কেউ?

আরেকদিনের ঘুম থেকে জেগে উঠা ছিল আমার জন্য সবচেয়ে স্বস্তিময় রাতের পরিসমাপ্তি। আমার অপরিসীম আনন্দ হলো আমি বেঁচে আছি এটা বুঝতে পেরে। আমার ঠোঁটে নেই কোনো নোনতা স্বাদ। আমি ভেসে যাইনি সেই অল্প কটি মাত্র ঢেউয়ের টানে। এদের কি সাধ্য আমাকে আমার থেকে কেড়ে নেয়। এই আমি সারা রাত ডুবে ছিলাম, সমুদ্রের খুব কাছে, রাতের শুন্যতাকে সাথে নিয়ে, এক সমুদ্র জোছনায়। সেই রাতে আর কে কে ছিল সেখানে? কেউ কি ঢুকরে কেঁদে উঠেছে, দূর থেকে চান্নি পসর রাতে মারা যাওয়ার আকুতি নিয়ে? আমার মতন আর কেউ কি একা একা সারা রাত ঐ চাঁদের দিকে তাকিয়ে পার করে দিয়েছে। কোনো অল্প বয়সী মেয়ে কি দরদ মাখা গলায় চাঁদের হাসির বাধ ভেঙ্গে যাওয়া গানটি গাইছিল? সেই গান শুনে কেউ কি একটু পর পর লুকিয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের জল আড়াল করছিল? এত এত প্রশ্নের জন্ম দেয়া যেই স্বপ্নগুলো, কেমনে বলি সবাইকে। স্বপ্ন গুলো দেখতেই শুধু শিখেছি ওনার কাছ থেকে। বলতে শিখিনি। তাই প্রশ্ন করা মানুষ গুলোর আগ্রহ মরে আসে। তারাও ভেবে দেখে না, আমি যখন স্বপ্ন দেখি তখন শুধুই স্বপ্ন দেখি, আর কিছু করি না।

নিজের সবচেয়ে ভালো লাগা বিষয় গুলো নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে কেন যেন ইচ্ছে করে না। ভালো লাগার বিষয় নিয়ে আবেগ, অভিমান, অনুভূতি সব নিজের ভেতর লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। কাগজ কলমকে এতটা ক্ষমতা আমি দিইনি। অথবা বলা ভালো দিতে পারিনি। তাই নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখা ছোট্ট ছোট্ট কল্পনা বিলাশী বোধ গুলো নিজের মত করেই কখন যেন হারিয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে তাদেরকে জোর করে ধরে নিয়ে আসি। তাদের সাথে সময় কাটাই। ঐ সময় গুলোতেই আসলে আমি একা থাকি। একা থাকি বলে ওরা আসে এমন না। আমার ভালো লাগা সব কিছু আমার হাতের খুব কাছেই। চাইলে আমি তাদের ছুঁয়ে দেখতে পারি। অনেক অনেক দূরে থাকা বন্ধুটির সঙ্গ, কিংবা অনেক অনেক দিন আগে ফেলে আসা একটি দিন। আমার জগৎ ঘিরে রাখা তারা সবাই আমার হাতের মুঠোয়। আমার গড়া পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব হয়তো তাদের অজানা। এই পুরো রহস্য ঘেরা কাল্পনিক জগতে অল্প কজন শুধু ভিন্ন মানুষ আছেন। তাদেরকে কখনো দেখা হয় নি। তাদের সাথে কথা হয়নি। অথচ কি ভীষন ভাবে তারা আছেন। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ডাক দিয়ে জিজ্ঞেশ করি। আপনি কি আছেন আসে পাশেই। শুনতে পাচ্ছেন? তাদেরই একজন কি ভীষন ভাবে আলাদা। যার কারনে অন্য কোনো ভাবে ভাবতে পারা বিষয় গুলো তার মত করে ছাড়া অন্য কোনো ভাবে ভাবতে পারিনি। অথবা, তার কারনেই বিষয় গুলো নিয়ে ভাবতে শিখেছি, তিনি না থাকলে হয়তো এগুলো যে ভাববার বিষয় সেই বোধটাই তৈরী হতো না। “শুনতে পাচ্ছেন? আপনি কি ভেবেছেন, চাইলেই আপনি চলে যাবেন অনেক দূরে? একটু একটু করে এই দীর্ঘ সময় ধরে যেই ঘোর লাগা দিনপাতের জীবন যাপন আপনি গড়ে গিয়েছেন, এতই কি সহজ সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া?”

মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কোনটি? এক কথায় এর উত্তর ‘বর্তমান’। আর মানুষের জন্য সবচেয়ে চিন্তাযুক্ত সময় কোনটি? ‘ভবিষ্যত’। তাহলে মানুষের জীবনে অতীতের গুরুত্ব কি? এর উত্তরতো আরো সহজ। মানুষের বর্তমান সময়টা গড়েই উঠেছে অতীতের উপরে, আর সেই বর্তমানকে ঘিরেই ভবিষ্যতের রাস্তা তৈরী হয়। আমি ঘোর লাগা ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি দিব্য দৃষ্টিতে। যদি বেঁচে থাকি, আজ থেকে অনেক দিন পর, কোনো এক সকালে আমি হুড় মুড় করে ঘুম থেকে উঠে পাখিটিকে খুজতে থাকব। কোনো এক অলস দুপুরে বুক সেলফ থেকে টেনে নিয়ে যেই বইটি পড়ছি, সেই বইয়ের এক বয়স্ক লোক আমার স্বপ্নের ব্যাখা দিতে বসেছেন। বাসার পাশের চায়ের দোকানের মাথায় টুপি পড়া দোকানদারটি বাধানো একটা ছবিতে থু থু দিয়ে আবার গলার গামছা দিয়ে মুছে ফেলছে। সদ্য ডাক্তারি পাশ করা ছেলেটি চেম্বার ছেড়ে শ্যামলা রঙের কালো ডাগর চোখের মেয়েটির পেছন পেছন হাটতে শুরু করেছে। আমার দুই বাসা পরে থাকা পরিবারের বড় মেয়েটি একা একা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে রিক্সার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আনমনা হয়ে যায়। আর পাড়ার মাস্তান ছেলেটি একটা রিক্সা নিয়ে এসে তার সামনে দাড়িয়ে রিক্সা ওয়ালাকে দুটো ধমক দেয়। সিনেমা পাগল পাড়ার ব্রিলিয়ান্ট ছেলেটি পড়াশুনা ছেলে সিনেমা নিয়ে মেতে থাকে সারাদিন। আমি দেখতে না পেয়েও বুঝতে পারি নীতুরা এখনো লুকিয়ে মনের মানুষটিকে চিঠি লিখবে। সেই চিঠি হয়তো কখনো দেয়া হয় না। আমি আরো দেখতে পাই মধ্যবিত্ত একটি পরিবার বছরের পর বছর অপেক্ষায় কাটায় কাছের মানুষটি ফিরে আসার।

একটি পরিবার নয়, আসলে একটি দেশ, দেশের মানুষ, অপেক্ষায় থাকে। তাদের সবাইকে অপেক্ষায় রেখে, তিনি চলে যান।

(আমার এই লেখাটাও আমার প্রতিদিনের বক বক। এর শুরুটাও যেমন যেকোনো একটা জায়গা থেকে শেষটাও এখানে সেখানে। )
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×