somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্নসম্মান

২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- কিরে মজিদ, তোর মায় কই?
দুপুরবেলা খেতে এসে ৬ বছরের ছেলেকে বাড়িতে একা পেয়ে জিজ্ঞাসা করে করিম মিঞা।
- মায় তো বাড়িত নাই, বাজান।
- কই গেছে?
- কামে।
শুনেই মেজাজটা বিগড়ে গেল তার। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে দুপুরে বৌকে না পেলেই মেজাজটা খারাপ হয়। মহাজনের বাড়িতে কাজ করে তার বৌ। তাই বলে যখন তখন ডেকে নিয়ে কাজ করাবে এটা করিম মেনে নিতে পারে না। যদিও মহাজনের দয়ায়ই এই রিক্সাটা চালাতে পারছে সে। তাই চাইলেও মালিকের উপরে রাগ দেখাতে পারে না । তার বৌ বলে কয়ে রিক্সাটা কিনিয়ে দিয়েছে। মহাজনের ভাল খাতির আছে তার বৌয়ের সাথে, সে কিছু একটা বললে মহাজন তা ফেলতে পারে না। এ নিয়ে অবশ্য গ্রামে অনেক কানাঘুষাও হয়। মহাজনের চরিত্র নাকি ভালো না। তার বৌয়ের সাথে নাকি অবৈধ সম্পর্ক আছে মানুষটার। কিন্তু, মানুষের কথা আমলে নেয় না সে। নিন্দুকেরা নানান কথা বলবেই। তার বৌ দেখতে একটু সুন্দরী, তাই গ্রামের মানুষের হিংসা জাগে মনে। মহাজন অনেক সাহায্য করেছে তাকে। তার বাড়িতে কারেন্টের লাইন, টিভি সবই এসেছে এই মানুষটার কল্যানে। বৌয়ের কাজে খুশি হয়ে গিফট করেছে। উনি দেবতুল্য একজন মানুষ। কাজের জন্য ডাকতেই পারে। বিনিময়ে যদি সুখে শান্তিতে জীবন পার করতে পারে তো ক্ষতি কি! এভাবেই নিজেকে প্রবোধ দিতো সে।

কিন্তু আজকে একটু বেশিই মেজাজ খারাপ হল তার। রিক্সা কিনে দিয়েছে বলে মাথা কিনে নিয়েছে নাকি! গোসল শেষ করে পাটি বিছিয়ে ভাত নিয়ে ছেলেকে ডাক দেয় সে। বাপ ছেলে একসাথে খেতে বসে।
- বুঝলি মজিদ, মানুষের দয়া নিবি না কহনো।
- ক্যান বাজান, দয়া নিলে কি অয়?
- দয়া নিলে হেই মাইনষ্যের গোলাম হইয়া যাওয়া লাগে। নিজের স্বার্থ ছাড়া কেউ কোনদিন কেউরে সাহায্য করে না, বুজসস?
- হ, বুছছি।
- নিজের মেহনতি করা টেকা দিয়া জিনিস কিন্না ব্যবহার করবি, ওইডায় ম্যালা সুখ।
- আইচ্ছা।
- আমাগো বাইত্তে মহাজনের দেয়া যেই জিনিস আছে, ওইগিলা সব আজকে ফালায়া দিমু কুয়ার মইধ্যে। মাইনষ্যের জিনিস ঘরের মইধ্যে রাহুম না।
- আইচ্ছা।
কোন কিছু না বুঝেই মাথা নেড়ে গেল মজিদ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুজনে মিলে এক এক করে মহাজনের সব জিনিস ফেলে দিলো। রিক্সা সহ। দরকার হয় না খেয়ে থাকবে, তাও অন্যের দয়া নেবে না। বৌটাকে বলতে হবে যেন ওই বাড়ির কাজ ছেড়ে দেয়।

*****
বিকেলে উঠানে পাটি বিছিয়ে বসে আছে করিম মিঞা। নিজেকে খুব হালকা লাগছে। রাগও কমে গেছে। অন্যের দয়ার উপর বেঁচে থাকার দায় থেকে পুরোপুরি মুক্ত সে। আয়েস করে বিড়ি ধরালো। তখনই তার বৌকে দেখা গেল বাড়ির দিকে আসতে। বৌকে হাসিখুশি দেখাচ্ছে খুব।

- কী গো, আইজকা রিক্সা লইয়া বাইর হও নায়?
- নাহ।
- ক্যান?
বলতে বলতে ঘরে ঢুকেই চিৎকার দিয়ে উঠলো।
- ও খোদা!! ঘরের জিনিসপত্তর কই?
- ফালাইয়া দিছি!
বিড়ির ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে উত্তর দেয় করিম।
- তুমি কি পাগল হইয়া গ্যালা? কই ফালাইছো? ক্যান ফালাইছো?
- যেই জিনিস আমার না, ওইডা আমার ঘরের মইধ্যে রাহুম না।
নির্বিকার ভঙ্গিতে উত্তর দেয় করিম। অন্যদিকে বউ চেচামেচি করছেই।
- আইজকাই আমি মহাজনের কাছে তোমার নামে বিচার দিমু। মজিদ কই?
কোন উত্তর দেয় না করিম। বিড়িতে শেষটান দেয়ায় ব্যস্ত সে। বিড়ির সমস্ত মজা এই শেষ অংশটুকুতেই থাকে। স্বামীর কাছে উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞাসা করে-
- আমার পোলা কই গেছে?

এবারেও প্রতিউত্তরে কিছু না বলে নির্বাক ভুমিকা পালন করে করিম মিঞা। শুধু বাড়ির পাশের পানিহীন কুয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলে, "যেই জিনিস আমার না, সেই জিনিস আমার বাড়িত রাহুম না।"
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×