somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরানের জেনারেল কাশেম সোলাইমানির মৃত্যু বিশ্ব রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে?

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাশেম ইরানের বিপ্লবী গার্ডের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি ব্যাপকভাবে সুপরিচিত তার নিজ দেশে একজন দেশ যোদ্ধা হিসেবে। মূলত সাদ্দাম হোসেনের পতন পরবর্তী ইরাকে ইরানের প্রভাব জোরদার করতে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।

ইরাকের বর্তমান ক্ষমতাসীন পার্টি যা আসলে শিয়াপন্থী, এছাড়া আল হাশেদি শিয়া মিলিটারি সংগঠনের ব্যাকিং মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে তাকে আগেই কালো তালিকাভুক্ত করেছিল এবং তিনি সহ আরও যে সাতজন মারা গেছেন তারা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন। সম্প্রতি ইরাকের অস্থিরতায় তাহরির স্কায়ারে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে এটা আসলে সুন্নি পন্থী এবং তারা এই মৃত্যু সংবাদকে ইরানের পরাজয় হিসেবে দেখছে। কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দূতাবাসে যে হামলা চালানো হয় তা ছিল তার আগে যুক্তরাষ্ট্র যে শিয়াপন্থী গোষ্ঠীর উপর হামলা চালিয়ে ২৫ জন হত্যা করেছিল তার ফলাফল। এরও আগে রকেট হামলায় ইরাকে কর্মরত এক আমেরিকান কন্ট্রাক্টর নিহিত হয়। ট্রাম্প এটিকে ইরানের কর্মকাণ্ড বলে অভিযোগ করে এবং যার ফলে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ২৫ জন আল হাশেদ সংগঠনের সদস্য বিমান হামলায় হত্যা করা হয়। কিন্তু ইরানের সমর্থকেরা যখন ইউএস এম্বাসিতে হামলা চালায় তখনই ট্রাম্প বলেছিলেন যে "খুব বড় প্রাইস দেওয়া হবে, এটা সতর্কবার্তা নয় এটা হুমকি "

যাই হোক, এরপর এটাই হলো। তার জায়গায় এখন ইস্মায়েল কানি কাজ করবেন। এই হামলায় হাশেদের ডেপুটি চিফ মুহান্ডিসও মারা গেছেন। তার স্থালাভিষক্ত কে হবেন তা জানা যায়নি। এই ঘটনায় আরেক সাম্রাজ্য রাশিয়া কিছুই বলেনি তেমন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন রাশিয়া ও চীন এখন সুযোগের সঠিক ব্যবহার করলেও করতে পারে। ইরান যদি সত্যিই হারমুজ প্রনালী বন্ধ করে তাহলে আরব সম্প্রদায়ের চাপ পড়বে। ইরানের ফাতেহ মিসাইল দিয়ে তারা তেলের ট্যাংকার যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা তৈরি করতে পারে। তবে যদি ইরান পাল্টা ব্যবস্থা নেয় তাহলে ইরানের জন্য সর্বনাশ নিয়ে আনতে পারে। ট্রাম্প আর ইসরায়েল সিরিয়াস কিছু করবে। অনেকেই বলছেন ট্রাম্প চেয়েছিলেন সোলাইমানিকে সরিয়ে দিতে, অবশ্যই তার উপর টার্গেট করার কারন‌ও আছে। রাশিয়া ইরানের সাহায্যে এগিয়ে আসলেও চীন আসার সম্ভাবনা কম। আর হারমুজ প্রনালী বন্ধ করে কোন প্রতিশোধ নিলেও তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারবে না ইরান, আমেরিকা ছাড়াও আরব দেশগুলোর চাপ পড়বে। সুতরাং ইরান অন্যভাবে কিছু করার চেষ্টা করবে। অনেকে বলেছেন এখন ইরান যদি ইউএস এম্বাসিতে শেলও ছুড়ে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যুদ্ধটা হবে ইরাকে । রাশিয়ার সহায়তায় ইরাক থেকে আমেরিকান সৈন্য সরিয়ে ফেলা সহজ হবে। তবে ক্ষতি হবে ইরানের কেননা ইউরোপ এতে ইরানের প্রতি অসন্তুষ্ট হবে এবং তারাও যদি ন্যাটো সদস্য হিসেবে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় তাহলে ইরানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ইরান কখনোই একা আমেরিকার সাথে পারবে না। রাশিয়া যদি অবস্থা বেগতিক দেখে তাহলে সরে যাবে কিন্তু ইরানের উপর সরাসরি আক্রমণ করলেই যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা আছে। ইরাক কেন্দ্রীক সমস্যা হলে রাশিয়া ইরানকে গোপন সহায়তা দেবে।

তবে ইরানের অর্থনৈতিক ভিত্তি ভেঙে যাবে, যে স্থিতিশীল সূচক তাদের আছে তা আর টিকবে না। ইরান ভেঙে পড়লে রাশিয়া আগামি ভবিষ্যতে আরও আগ্রাসী হবে। কারন ইরান ভেঙে পড়লে ইসরায়েল আরও শক্তিশালী হবে এবং তখন আমেরিকার লক্ষ্য হবে সিরিয়া। যা রাশিয়া ভুলেও হাতছাড়া করবে না। সুতরাং হ্যা চীন না চাইলেও ইরানকে সহায়তা দেবে রাশিয়া। তবে চীনও আগালে হয়ে যাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট।

কোড গিয়াস আনিমের সাথে ব্যাপারগুলো মিলে যাচ্ছে। ইউরোপ আর চীন এই খেলার পুরোটা উল্টে দিতে পারে, ইরান হবে কেবলই লালসার শিকার। ইরানের পতন খুবই সম্ভাব্য। হয় ইরান টিকবে না হলে আমেরিকার পতন ঘটবে , আমি নিশ্চিত ইরান টিকবে না। কারন ইরান নিজেদের যতটা নিরাপদ ভাবছে ততটা নয়।

ইসলামিক মালহামা ইভেন্টের আগেই ইরানের পতন ঘটার ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে। আমেরিকার পতন এত তাড়াতাড়ি হবে না। রাশিয়া টিকে থাকবে তবে চীন যে কী করবে ইহা বলা মুশকিল।

কাশেম সোলায়মানি আসলে আয়তুল্লাহ খামেনির পর ইরানের সবথেকে প্রভাবশালী সামরিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন (ফরেন ইস্যুতে), আর পরিচিত ছিলেন বেশ উপরের ছবিতে দেখতে পারেন যে পাবলিক প্লেসে তিনি খুব সাধারণভাবেই চলছেন।

আমি আগেই বলেছি রাশিয়া যথাসম্ভব চেষ্টা করবে ইরানকে রক্ষা করতে। সোভিয়েতের পতনের পেছনে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের পতনের বেশ কারন আছে, রিজিওনাল স্টাটাস লস হলে নিজ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক হুমকি আসবে
সিরিয়ায় রাশিয়ার আসাদকে সমর্থন দেওয়ার বড় কারন রিজিওনাল স্টাটাস লস ঠেকানো। আচ্ছা বলুনতো ইরান, ইরাক, পাকিস্তানে জঞ্জি হাওমলা স্বাভাবিক হলেও কাজাখিস্তান , উজবেকিস্তানে ইহা রেয়ার কেন? কারন রাশিয়া নিজ স্বার্থে এদের রক্ষা করে। যদি পাশের বাড়ি আগুন লাগে তাহলে আপনার বাড়িতেও আগুন লাগবে। খুব ভালো করে দেখুন, ঘাটিগুলো রাশিয়ার চারদিকে ঘিরে আছে। যদি ইরানের পতন হয় তাহলে আমেরিকা এগিয়ে যাবে এই ফর্মুলা (প্রক্সি এজেন্ট যেমন উগ্রবাদী সংগঠন) ব্যবহার করে রাশিয়ার দিকে। যেহেতু কোরিয়ান পেনিন্সুয়ালায় তাদের অবস্থা সুবিধাজনক না তাই মধ্যপ্রাচ্য তাদের এখন একমাত্র উপায়। ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে, কিন্তু বড় বাধা রাশিয়া। টেকনিক্যালি রাশিয়া এশিয়ার গার্ডিয়ান।

যে ব্যাক্তি মারা গেল, একেবারেই আপাত অর্থহীনভাবে৷ সাবেক আমেরিকান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও বলেন যে, ইসরায়েলের একচ্ছত্র ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটেছে। আমেরিকা ইতিমধ্যেই ইরানের সাথে সমঝোতা করতে যাচ্ছিল, এরকম হামলা প্রায় অর্থহীন মনে হলেও ইরানকে আবারও উত্তপ্ত করবে। আমেরিকা সিরিয়াস কিছু করতে চায়। মনে রাখা উচিত এশিয়ায় আমেরিকার হারানোর কিছু নেই। ইরানের সেই ক্ষমতা নেই আমেরিকার ভূমিতে হামলা করার তারা কেবলই রিজিওনাল পাওয়ার।
তো হ্যা এমেরিকা আস্তে আস্তে এশিয়ার দিকে আগাবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত এটা যে, রাশিয়ার সাম্প্রতিক ধারাবাহিক সামরিক প্রয়াস তাদেরকে অবশ্যিই ভাবায়। আমেরিকা দ্রুত কোনো ব্রেকথ্রু চায়।

এই ঘটনা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ না বাজালেও , সময় সংকোচন করবে। হ্যা অনেকেই হালকাভাবে নিবেন, বলবেন তেলের দাম বাড়বে এই আর কী! তবে হ্যা আমেরিকাজানে তার নিজের একক আধিপত্য শেষ হয়ে যাচ্ছে, মরি বাচার লড়াইতে অসুবিধা কোথায়।

ইরানকে রাশিয়ার পুতিনের দিকে চেয়ে থাকতে হবে। পুতিনই এশিয়ার একমাত্র হর্তাকর্তা!

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×