জাতীয় পরিচয়পত্র, কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০১৬: একটি রূপকল্প
=======================================================
আমি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক; কোন রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক বা পরিকল্পণাবিদ নই। তারপরও দেশের জন্য কিছু করতে মন চায়। যখন দেখি দেশের কোন কাজে অযাচিত কালক্ষেপণ হচ্ছে, তখন কিছুটা হতাশ হই; কাজটা কিভাবে আরো ভালভাবে করা যায়, তা নিয়ে ভাবি। সেরকম-ই একটা ভাবনা সবার সাথে শেয়ার করলাম।
.
ভাবনার বিষয়ঃ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য সম্বলিত একটা কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরী, আপাতত ১৫ বছরের উপরের প্রত্যেক নাগরিককে প্রাথমিকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও পরবর্তীতে স্মার্টকার্ড প্রদান এবং জাতীয় জীবনে এই স্মার্টকার্ডের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করণ।
.
১।
প্রথম কাজঃ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য সম্বলিত একটা কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরী
************************************************
দেশে প্রায় সাড়ে আট কোটি ভোটার আছেন এবং এর কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ আছে। এর সাথে প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্য যোগ করে দেশের সকল নাগরিকের একটা কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরী করতে হবে। ০১ জানুয়ারী ২০১৬ইং থেকে ৩১ মার্চ ২০১৬ইং পর্যন্ত বিনামূল্যে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য (ভোটার তালিকা, জন্মনিবন্ধন সনদ) ইউনিয়ন, উপজেলা বা জেলা অফিসে স্বপ্রণোদিত হয়ে গিয়ে বিনামূল্যে আপডেট করতে হবে। এই তিন মাসে কোন নাগরিক “জাতীয় তথ্য ভান্ডার” বা কেন্দ্রীয় ডাটাবেজে স্ব স্ব তথ্য বা তার পরিবারের সদস্যদের তথ্য সংযোজন বা সংশোধনে ব্যর্থ হলে ০১ এপ্রিল’১৬ থেকে ৩০ জুন’১৬ পর্যন্ত মাথাপিছু ৫০০টাকা ফি দিয়ে তথ্য সংযোজন বা সংশোধন করতে পারবেন। এরপর কোন নাগরিক তথ্য সংযোজন বা সংশোধন করতে হলে ১০,০০০টাকা জরিমানা দিতে হবে। তা না হলে উক্ত নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন না। তবে নতুন জন্ম নেওয়া শিশুর তথ্য জন্মের তিন মাসের মধ্যে তার অভিভাবক বিনামূল্যে সংযোজন করতে পারবেন এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে ৫০০টাকা ফি দিয়ে সংযোজন করতে পারবে। কোন অভিভাবক শিশুর জন্মের ছয় মাসের মধ্যে জন্মনিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে ১০,০০০টাকা জরিমানা দিয়ে পবরর্তিতে জন্মনিবন্ধন করতে পারবে। “জাতীয় তথ্য ভান্ডার বা কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ কর্তৃপক্ষ” ০১ জানুয়ারী’১৬ থেকে ৩০ জুন’১৬ এর মধ্যে একটা পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরী করবে। এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিবে (শিক্ষিত বেকার) অথবা ২০০৮-এ ভোটার তালিকা প্রণয়নের মতো সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করবে।
.
দ্বিতীয় কাজঃ দেশের প্রত্যেক নাগরিককে স্মার্ট কার্ড প্রদান
*********************************
০১ জুলাই’১৬ থেকে শুরু হবে স্মার্ট কার্ড তৈরির কাজ এবং ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন জেলার কাজ শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর’১৬ এর মধ্যে তা বিতরণ করা হবে। প্রত্যেক নাগরিক (শিশু থেকে শুরু করে সবচেয়ে প্রবীন নাগরিক পর্যন্ত) বিনামূল্যে এই স্মার্ট কার্ড পাবেন। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্মার্ট কার্ড গ্রহণে ব্যর্থ হবেন, তারা বড় অংকের জরিমানা দিয়ে পরবর্তীতে তা গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন।
.
২। স্মার্ট কার্ডে যেসব তথ্য থাকবে
=======================
ক। গতানুগতিক সব তথ্যঃ
(i) নাম
(ii) ছবি
(iii) বাবার নাম
(iv) মায়ের নাম
(v) স্বামী/স্ত্রীর নাম
(vi) জন্ম তারিখ
(vii) রক্তের গ্রুপ
(viii) শিক্ষাগত যোগ্যতা
(ix) পেশা
(x) স্থায়ী ঠিকানা
(xi) বর্তমান ঠিকানা
(xii) কর্মস্থলের ঠিকানা
(xiii) যেসব জায়গায় তিন বছর বা তার অধিক সময় অতিবাহিত করেছেন তাদের নাম
.
খ। অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
(i) ফিঙ্গার প্রিন্ট
(ii) পাসপোর্ট নম্বর
(iii) TIN/eTIN (যদি থাকে)
(iv) ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর
(v) সকল ব্যাংক একাউন্ট নম্বর
(vi) অধিনস্ত সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম (যদি থাকে)
(vii) ট্রেড লাইসেন্স নম্বর
(viii) পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের NID নম্বর সমূহ
(ix) তার ব্যবরূত সকল মোবাইল নম্বর
.
৩। যেসব কাজে এই স্মার্ট কার্ড অবশ্যই ব্যবহার করতে হবেঃ
(i) সরকারী প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা গ্রহণ (ভর্তি হয়ে)
(ii) স্কুল-কলেজ সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি
(iii) সকল ইন্টার-সিটি বাস, ট্রেন, লঞ্চ-এ উঠতে ও নামতে
(iv) প্লেনে উঠতে ও নামতে
(v) ব্যাংক একাউন্ট খুলতে
(vi) সঞ্চয়পত্র কিনতে
(vii) বিদেশ থেকে আসা টাকা গ্রহণ করতে
(viii) আয়কর দিতে
(ix) মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে
(x) বিবাহ ও তালাক রেজিঃ করতে
(xi) জমি-জমা হস্তান্তর করতে
(xii) মামলা করতে
(xiii) সরকারী যে কোন সুবিধা গ্রহণ করতে
.
৪। স্মার্ট কার্ড দিয়ে জনগণ যেসব সুবিধা পাবেনঃ
(i) এটা তার ইউনিক পরিচয়পত্র হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সব ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন
(ii) নতুন কোন সেবা গ্রহণ করতে বিশাল ফর্ম-ফিলাপ করতে হবে না (ব্যাংক একাউন্ট খোলা, রেমিট্যান্স গ্রহণ, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ ইত্যাদি)
(iii) কোন সেবা গ্রহণ করতে পরিচয়দানকারী (Introducer) লাগবে না
(iv) কোন নাগরিকের পরিচয় নিয়ে অযথা কেউ হয়রানি করতে পারবে না
.
৫। স্মার্ট কার্ড ছাড়া জনগণ যেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেনঃ
(i) বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করতে পারবেন না
(ii) সরকারী প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন না
(iii) এক শহর থেকে অন্য শহরে বা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করতে পারবেন না
(iv) ইন্টার-সিটি বাস, ট্রেন, লঞ্চ-এ উঠতে পারবেন না
(v) মোবাইল সিম ও সেট কিনতে পারবেন না
(vi) ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে পারবেন না
(vii) ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন না
(viii) বিদেশ থেকে আসা টাকা গ্রহণ করতে পারবেন না
(ix) বিবাহ করতে পারবেন না
(x) জমি-জমা হস্তান্তর করতে পারবেন না
(xi) কোন ধরনের আইনি সাহায্য পাবেন না
(xii) কোন ধরনের সরকারী সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না
.
৫। স্মার্ট কার্ড দিয়ে সরকার যেসব সুবিধা পাবেনঃ
(i) সব নাগরিকের তথ্য সরকারের হাতে থাকবে
(ii) ব্যাংক একাউন্ট ও TIN নম্বর সরকারের হাতে থাকায় আয়কর আদায়ের হার বাড়বে
(iii) প্রত্যেকের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ডাটাবেজে থাকার কারণে মোবাইলের সহযোগিতায় সংগঠিত অপরাধের হার কমবে এবং অপরাধীকে দ্রুত সনাক্ত করা যাবে
(iv) এক শহর থেকে অন্য শহরে বা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতকালে স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করতে হবে বিধায় কোন নাগরিক কবে কোথায় যাচ্ছেন বা অবস্থান করছেন, সরকার তা মূহূর্তেই জেনে যাবেন। তাই পলাতক আসামীকে খুজে পাওয়া ও জঙ্গী-দমন সহজ হবে।
(v) মানি লন্ডারিং কমবে
(vi) আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমবে এবং কাজে গতি আসবে
.
৬। কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ ও স্মার্ট কার্ডের সুফল পেতে হলে যা যা করতে হবেঃ
(i) ০১ অক্টোবর’১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর’১৬ এর মধ্যে সকল মোবাইল সিম স্মার্ট কার্ডের সাথে ট্যাগ করতে হবে। স্মার্ট কার্ডের সাথে ট্যাগবিহীন সব সিম বন্ধ করে দিতে হবে।
(ii) একইভাবে ব্যাংক একাউন্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স সবকিছু স্মার্ট কার্ডের সাথে ট্যাগ করতে হবে। স্মার্ট কার্ডের সাথে ট্যাগবিহীন সব সার্ভিস বন্ধ করে দিতে হবে।
(iii) আন্তজেলা বাস, ট্রেন, লঞ্চের প্রবেশ পথে GPS ও ইন্টারনেট সংযোগ সহ পাঞ্চ মেশিন স্থাপন করতে হবে এবং কোন যাত্রী যাতে স্মার্ট কার্ড পাঞ্চ না করে ভ্রমণ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
(iv) একইভাবে যেসব সেবার জন্য স্মার্ট কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তাদেরকে ০১ অক্টোবর’১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর’১৬ এর মধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ৩১ ডিসেম্বর’১৬ এর মধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যর্থ হবে, তাদেরকে মোটা অংকের জরিমানা করতে হবে।
এটা একটা খসড়া ও সংক্ষিপ্ত কল্পচিত্র। কেউ আগ্রহী হলে আমি বিস্তারিত আলোচনায় রাজী আছি। আমি বারবার জরিমানার কথা বলেছি; কারণ শাস্তির ভয় না থাকলে আমরা সাধারণত স্বপ্রণোদিত হয়ে কোন কাজ করতে অভ্যস্ত নই। ২০১৬ সালের মধ্যে না হউক, বাংলাদেশ অচিরেই “ডিজিটাল” হবে- এই আশায় রইলাম।
ডাঃ মোবাশ্বেরুল ইসলাম
ইমেইলঃ [email protected]