somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মে দিবস: জোরালো গলায় জানিয়ে দিলাম সামান্য দাবীগুলি

০২ রা মে, ২০০৯ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি দেশের বাইরে কর্মরত একজন শ্রমজীবী। শারীরিক পরিশ্রম করে খাই। শীঘ্রই দেশে ফিরে দেশের শ্রম বাজারে নিজের শ্রম বিক্রি শুরু করবো। বিদেশের মতো বেতন নিশ্চয়ই দেশে আশা করবো না। তবে স্বাধীন দেশের একজন মর্যাদাবান শ্রমিক হিসেবে আমার যেসব দাবী দাওয়া থাকবে সেগুলো আজকে জানিয়ে রাখি:
১. ন্যুনতম মজুরী ঘণ্টাপ্রতি কমপক্ষে ৫০ টাকা চাই (গৃহভৃত্য, ইট ভাঙ্গার শ্রমিক সহ সব ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানতে হবে)।
২. সাপ্তাহিক বেতন চাই।
৩. যারা ফুল টাইম কাজ করবেন তাদের জন্য দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারিত করতে হবে বাড়তি প্রতি মিনিট কাজের জন্য ১ টাকা করে দিতে হবে। তবে পার্ট টাইম কাজের ক্ষেত্রে এই আট ঘণ্টার ব্যাপারটা না রাখাই ভাল। (আমি নিজে প্রায়ই টানা ১৩ ঘণ্টা কাজ করি। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো এক দিনেই অনেক টাকা হয়ে যায় (যেহেতু ঘণ্টাপ্রতি বেতন)। ফলে সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে অন্য কাজ করা যায়।)
৪. কাজের বিশ্রাম চাই প্রথম চার ঘণ্টায় ৩০ মিনিট তার পর প্রতি তিন ঘণ্টায় ২০ মিনিট করে।
৫. বাৎসরিক এক মাস পেইড ছুটি চাই (যে কোনো অবস্থায় এই টাকা বেহাত না হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে)।
৬. কাজের পরিবেশ উন্নত থাকা চাই।
৭. দুর্ঘটনা থেকে নিরাপত্তার জন্য যথাযথ বিধান চাই (ফার্স্ট এইড বক্স, আগুন থেকে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনার পর ফ্রি চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও অসুস্থতার সময়কার পূর্ণ বেতন, দায়ী ব্যক্তির বিচার ইত্যাদি)।
৮. যে কোনো শ্রমকে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে (গৃহভৃত্য, ইট ভাঙ্গার শ্রমিক সহ সব ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানতে হবে)।

আমার অভিজ্ঞতা
বৃটেনের শ্রম আইন অতি কড়া। আমি নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমার কোম্পানি থেকে যেখানেই কাজ করতে যাই না কেন, ১ ঘণ্টার জন্য কোথাও কাজ করতে ঢুকলেই তারা প্রথমেই আগুন লাগলে কি করতে হবে (ফায়ার এক্সিট ও ফায়ার মিটিং পয়েন্ট), ফার্স্ট এইড বক্স কোথায় আছে, টয়লেটের অবস্থান কোথায় ইত্যাদি জানিয়ে দেয়। আইন অনুযায়ী কাজ শুরুর চার ঘণ্টা পর আধঘণ্টার জন্য বেতন সহ বিরতি দিতে হয় যা এখানে মেনে চলে। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য শ্রমিকরা যেসব মই, টুল ইত্যাদি ব্যবহার করে সেগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। কোনো মই নড়বড়ে হয়ে গেলে তা মেরামত করা হয়। যেখানে কর্ক লিফট, ছোট গাড়ি বা এ ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেখানে হাই ভিজিবল জ্যাকেট বা কটকটে রঙের পোশাক পড়তে হয়। সেগুলো দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমায়।
গৃহভৃত্য ব্যবস্থাটা বৃটেনে না থাকলেও বুড়ো মানুষ কিংবা প্রতিবন্ধীদের দেখাশোনার করার জন্য অনেককে বাসায় বাসায় যেতে হয়। সেক্ষেত্রে এসব শ্রমিকের কল্যানের জন্য সুস্পষ্ট আইন আছে। যেমন ৭ কেজির বেশী ওজন উঠানো যাবে না (বাড়ির ক্ষেত্রে)। শ্রমিক কাজ করার সময় বাড়ির কেউ সিগারেট খেতে পারবে না। কুকুর থাকলে তাকে বেধে রাখতে হবে (নাহলে এতে শ্রমিকের অসুবিধা হতে পারে)। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এ বিষয়গুলো কাজের শুরুতে বাইরে থেকে ট্রেইনার এনে শ্রমিকদের জানাতে হয়।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বৃটেনে সব কাজেই ঘণ্টাপ্রতি সর্বনিম্ন মজুরি বেধে দেয়া। কোনো শ্রমিক ঘণ্টায় সাড়ে পাচ পাউন্ডের নিচে বেতন পাবে না। এ বেতনে মাত্র আট ঘণ্টা কাজ করলে তারা ৪৪ পাউন্ড পায়। যা দিয়ে কমপক্ষে ১৪৬ কেজি আলু বা প্রায় ৫৫ কেজি চাল কিনতে পারে।

ইতিহাস
১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকরা শ্রমের ন্যায্য মূল্য এবং আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার মালিক পক্ষের উস্কানিতে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায়। আপসহীন দশ শ্রমিকের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। এতে শ্রমিক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো শিকাগো শহর। অবশেষে জনগণের প্রবল চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শ্রমিকদের কাজের সময় আট ঘণ্টা নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের প্যারিসে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের সংগ্রামী ঐক্যের মহান অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে সারা বিশ্বে শ্রমিক সংহতির আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে মে মাসের ১ তারিখে 'মে দিবস' পালিত হয়ে আসছে।

অগোছালো কথা
বিভিন্ন দিবস পালন নিয়ে আমাদের অনেকেরই এলার্জি আছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের বিরোধিতা করে প্রচুর লেখালেখি হয়। যুক্তি দেয়া হয় যে, এই দিবস পালন করে কোনো লাভ নেই, বরং নারীদের ক্ষতি করা হয়। তাই এ দিবস পালন না করে অন্য কিছু করা উচিত (কি করা উচিত তারাই জানেন!!)। তাই তেমন অভিজ্ঞতা আশা করে আমি এবার মে দিবসে বিভিন্ন বাংলা ব্লগ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করলাম। কিন্তু আশার কথা এ দিবস পালন করে কোনো লাভ নেই এমন কথা সম্বলিত কোনো পোস্ট দেখলাম না।
অবশ্য শ্রমজীবী হিসেবে আমারও একটু ইচ্ছা করছিলো এ সুযোগে একটা পোস্ট দিয়ে ফেলি, “যেদিন বুদ্ধিজীবীরা বুদ্ধি দিবস পালন করবে সেদিন আমরাও শ্রম দিবস পালন করবো” কিংবা “শ্রমিকদের শত্রু শ্রমিকরাই” ইত্যাদি। কিন্তু অতি কষ্টে সেসব লেখার ইচ্ছাকে অবদমিত করে সরাসরি দাবীগুলিকেই জানিয়ে দিলাম।
(আমি বর্তমানে বৃটেনে আছি। ফলে শ্রমিকদের ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বারবার এ দেশেরই উদাহরণই দিতে হচ্ছে। বৃটেনে বেশীদিন থাকছি না। দেশে যাওয়ার আগে সবকিছু শিখে নিচ্ছি)।
মেহনতি মানুষের জয় হোক।
২০টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×