সকাল হতেই মনটা অসম্ভব রকমের খারাপ । গতকাল ভোরের দিকে মাযহারকে স্বপ্নে দেখলাম । অস্পষ্ট কিংবা ছাড়া ছাড়া স্বপ্ন না; গোছানো, পরিপাটি একটা স্বপ্ন ।
…. প্রচন্ড বৃষ্টি, এর মাঝেই ওয়ান মাইল হচ্ছে । প্রথমে দেখলাম আমি ড্রিল গ্রাউন্ডের স্যালুটিং ডায়াস পেরোচ্ছি । পেছন থেকে মাযহার চীত্কার করছে, “জাভেদের বাচ্চা, সামনে থাক! খবরদার স্লো করবি না।” আমি প্রাণপনে ছুটছি । ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারস পার হয়ে ওল্ড পিটি শেড পার হচ্ছি আর চীত্কার করে মাযহারকে ডাকছি আমি । মাযহার সাধারণত এই জায়গায় ধরতো আমাকে । পাশ দিয়ে আফজাল চলে গেলো, সাথে রীশাদ । আয়রন গেট পার হয়ে ঢালে উঠবো । ঠিক এই সময়ে পেছন থেকে ধাক্কা খেলাম আর সাথে মাযহারের গলা, “যাই নাই আমি, শুক্র-শনিবার তোর্ কান্নাকাটি দেখতে আমি রাজী না । স্লো করবি না খবরদার, জাভেদ ।” আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম । আমি জানি মাযহার আমাকে সাথে নিয়ে যাবে, সেটা যেভাবেই হোক !....
প্রায় প্রতি ওয়ান মাইল শেষেই মাযহার আমাকে বলতো, “এটাই শেষ, আর ইহজীবনে তোকে আর ধরছি না আমি ।” আমি নিজেও ইহজীবনে এই ব্যাপারে টেনশন করতাম না । আমি নিশ্চিত করেই জানতাম যে আয়রন গেট পার হতে না হতেই আমি মাযহারের চীত্কার শুনতে পাবো পেছন থেকে, - “জাভেদ, এই তো শেষ । স্লো করবি না খবরদার!”
বন্ধু আমার, আমাদের সবাইকে এইভাবে সামনে পাঠিয়ে দিয়ে কেনো পেছনে রয়ে গেলি তুই ??
মূল লেখক- ক্যাপ্টেন জাভেদ। পিলখানায় নিহত ক্যাপ্টেন মাঝহার প্রসংগে।