বিডিআরের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রী নাজনীন শাকিল শিপুকে হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য দুইজন কসাইকে ঠিক করা হয়েছিল। শুধু ডিজি ও ডিজির স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ গুম করা হবে বলে পরিকল্পনা নেয় বিডিআর সদস্যরা। কসাই ঠিক করার দায়িত্ব ছিল সদর ব্যাটালিয়নের ব্যান্ড প্লাটুন হাবিলদার সামাদের। এজন্য দুইজন কসাইকে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা দেয়াও হয়েছিল। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অবস্থিত রাইফেলস ট্রেনিং সেন্টার এ্যান্ড স্কুলের ব্যান্ড বাদক দলের সিপাহী আশরাফুল আলমের স্বীকারোক্তিতে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাইফেলস সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে ব্যান্ড বাজানোর জন্য তাকে ৬ জানুয়ারি ঢাকায় বিডিআর সদর দফতরে যোগদান করতে হয়। ঢাকা সদর ব্যাটালিয়নের ব্যান্ড প্লাটুনের হাবিলদার সামাদের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে বিডিআরের দাবি-দাওয়া নিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করা হবে। এরপরেই তিনি জড়িয়ে পড়েন বিডিআর সদর দফতরে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে।
স্বীকারোক্তিতে সিপাহী আশরাফুল জানান, ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে হাজারীবাগ ট্যানাড়ি মোড়ে ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের নায়েক জয়নালের বাড়িতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে হাবিলদার সামাদ, নায়েক সাত্তার, হাবিলদার সামাদ (৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন), হাবিলদার মোস্তফা, সিপাহী আজাদ, সিপাহী তারেক, সিপাহী ইউনুস, সিপাহী রনজিত মারমা, সিপাহী শাহবুদ্দিন, সিপাহী সেলিম, সিপাহী আফজাল ও সিপাহী আশরাফুল উপস্থিত ছিলেন। ঐ বৈঠকে হাবিলদার সামাদ জানান যে, শুধু ডিজি ও ডিজির স্ত্রীকে মেরে ফেলা হবে। এ ব্যাপারে উপরের লোকদের সাথে তিনি যোগাযোগ করেছেন। লাশ গুম করার জন্য হাজারীবাগের দুইজন কসাই ঠিক করা হয়েছে। এরা হলো হারুন ও মজিবুর। এই দুইজন কসাইকে তাদের কাজের জন্য অগ্রিম ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিডিআর ৫ নম্বর গেট সংলগ্ন বিডিআরের অবসরপ্রাপ্ত সদস্য তোরাব আলীর বাসায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বৈঠকে দুইজন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তোরাব আলী, ডিএডি তৌহিদ, ডিএডি জলিল, হাবিলদার কাওসার, হাবিলদার সামাদ, নায়েক আজিজ, সিপাহী তারেক কাজল, সিপাহী জাকির, সিপাহী আলমগীর শেখ, সিপাহী আব্দুল হাকিম, সিপাহী রনজিত ও সিপাহী আশরাফুল উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিডিআর সদস্যরা তাদের দাবি-দাওয়া ও পরিকল্পনার কথা ঐ দুই সংসদ সদস্যকে জানান। বিডিআর সদস্যরা জানান যে, ২৫ ফেব্রুয়ারি দরবার হলে সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করা হবে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী ২/১ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হতে পারে। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠকে সংসদ সদস্যরা বিডিআরের দাবি-দাওয়া আদায়ে সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করার বিষয়ে মতামত দেন।
২৫ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা অনুযায়ী সিপাহী আশরাফুল, সিপাহী মইন, সিপাহী তারেক, সিপাহী সেলিম,সিপাহী কাজল, সিপাহী জসিম, নায়েক ফরহাদ ও সিপাহী তোতা মিয়া দরবার হলের পিছনে অবস্থান নেয়। সিপাহী মইন, সিপাহী কাজল ও সিপাহী তারেক দরবার হলের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপরে মইন ডিজির বুকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে সিপাহী কাজল পালিয়ে গেলে সিপাহী তারেক আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করার কথা বলে। সিপাহী সেলিমের নির্দেশে দরবার হলের সামনে ও ভিতরে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর সিপাহী আশরাফুল ৪/৫ জন বিডিআর সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ৩৬ ব্যাটালিয়ন অফিসে যান। ৩৬ ব্যাটালিয়নের অফিস থেকে কর্নেল মজিবুল হক, লে.কর্নেল এনায়েত ও মেজর মকবুলকে আটক করে ছাদে নেয়া হয়। সেখানে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন সিপাহী আশরাফুল।
সূএ : দৈনিক ইত্তেফাক । ০৬.০৫.০৯
[http://www.ittefaq.com/content/2009/05/06/news0648.htm]