আশা করি পোষ্ট টা সকলের ভাল লাগবে ।
কিছুদিন আগে এক বড় ভাই কোন এক কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে আমার পরবর্তী প্রজন্মকে কানের ডাক্তার বানাব ।আমি প্রশ্ন করলাম কেন? হঠাৎ এদিকে উৎসাহিত হবার কারণ কি? তিনি বললেন, কারণ জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার বর্তমান তরুন প্রজন্ম চব্বিশ ঘন্টা কানে হেডফোন গোজে এফ.এম শোনায় ব্যস্ত ।যার ফলশ্র“তিতে অদূর ভবিষ্যৎতে তাদের শ্রবন শক্তি হৃাস পাবে ।আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে কানের ডাক্তারের পসার ।তরুনদের কানের অসুখের দাওয়াই দেয়া আজকের আলোচনার উদ্দেশ্য নয় ।বরং আমরা কৌতুহলী এফ.এম. চ্যানেলের সেই সব মোহময় অনুষ্ঠান মালার ব্যাপারে যার নেশায় বুঁদ হয়ে আছে আমাদের তরুন সমাজ ।
বর্তমান এই এফ.এম এর যুগে এই হেডফোন নামক যন্ত্রটির ব্যবহার বেড়ে গেছে বিশেষ করে বিভাগীয় ও জেলা শহর গুলোতে ।আর এরই সাথে বেড়ে গেছে এফ.এম রেডিও সম্বলিত মোবাইল ফোনের কদর ।যেটা মোবাইল ফোণ এর বিজ্ঞাপনে বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় ।রাস্তায় বের হলে যখন দেখা যায় তরুন তরুনী প্রায় সবার কানেই হেডফোন; ঠিক তখনই এফ.এম.ষ্টেশনগুলি ব্যস্ত লাভ গুরু, নিত্যবালা (Girl Everyday) মাস্তি আনলিমিটেড ইত্যাদি চটকদার শিরোনামে নোংরামি ও অশ্লীলতায় ভরপুর অনুষ্ঠান স¤প্রচারে ।তখন RJ রা হয়ে যায় আমাদের তরুনদের প্রেম গুরু ।প্রেম গুরু বলার কারণ হচ্ছে তারা বিভিন্ন রকম সহীহ প্রেমের টিপস্ দেয় এবং মাঝে মাঝে শাসন ও করে, যদি কেউ তার বয়ফ্রেন্ড অথবা গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে খারাপ ব্যবহার করে ।নয়া কিছিমের মাষ্টার আর কি!
এফ.এম.রেডিও এর আবির্ভাবঃ এফ.এম. ষ্টেশন এর আবির্ভাব বাংলাদেশে খুব প্রাচীন নয় ।প্রথম দিকে শুধু মাত্র ট্রাফিক স¤প্রচার কার্যক্রম বাংলদেশ বেতার এবং বিবিসি বাংলা সার্ভিস কিছু সময়ের জন্য শোনা যেত ।২০০৬ সালে এর সাথে যোগ হয় আরও কিছু চ্যানেল ।রেডিও টুডে বাংলাদেশে প্রথম ২৪ ঘন্টার এফ.এম.ষ্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ।তারপর পালাক্রমে রেডিও ফুর্তি, রেডিও আমার এর কার্যক্রম শুরু হয় ।বেশকিছু দিন পর আরেকটি ষ্টেশন এর কার্যক্রম শুরু হয় ।যার নাম হচ্ছে রেডিও এবিসি (ABC) ।উল্লেখ্য যে, চ্যালেনটির মালিক হচ্ছে দেশের তথাকথিত সুশীল (!) সমাজের অন্যতম হর্তাকর্তা মতিউর, মাহফুজরা ।যারা তাদের সম্পূর্ণ মেধা ও সামর্থ্য নিয়োজিত রেখেছে এদেশে ইসলাম প্রিয় জনগনের মধ্যে তাদের ঈমান আকীদা বিরোধী সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে এবং দেশ ও জনগনের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরীর কাজে ।
এফ.এম. চ্যানেলগুলির কাজঃ এই এফ.এম চ্যানেলগুলির প্রধান কাজই হচ্ছে আমাদের সমাজের তরুন তরুনীদেরকে বিপথগামী করা ।আর এই বিপদগামী করার কাজ তারা তাদের সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই করে যাচ্ছে ।পাঠক বলুনতো, আপনার সামনে অন্য কেউ যদি আপনার ছোট বোনকে/ভাইকে অন্য কারোর সাথে অবাধ মেলামেশা বা নোংরা কাজে উৎসাহিত করে আপনি কি করবেন? কেউ যদি কিভাবে প্রেম করতে হয় বা আরেক জন কে পটানো যায় তার শিক্ষা দেয় আপনি কি করবেন? আপনার বোনের সাথে গভীর রাতে অন্য কোন ছেলে যদি মোবাইল ফোনে মাতলামী করে আপনি কি করবেন? অভিবাবক সমাজের কাছে আমাদের প্রশ্ন, আপনারা কি চান যে, আপনাদেরকে কেউ আপনাদের সন্তানের সাথে অন্য কারুর ভালবাসার নামে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ককে মেনে নেয়ার দীক্ষা দিক? কিংবা সন্তানকে কেউ আপনাদের অবাধ্য হবার দীক্ষা দিক? অথবা আপনাদের সন্তান অন্য কাউকে নিয়ে DJ পার্টিতে যাক, হোটেলে গিয়ে নষ্টামী করুক? এই ধরনের জঘন্য কাজ করতেই উদ্বুদ্ধ করছে এই এফ.এম. ষ্টেশন গুলি তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রোগামের মাধ্যমে ।বিশেষ করে রেডিও আমার যে কাজটি খুব ভালভাবে করেই তরুন তরুনীদের প্রাণ জয় করে চলছে তাদের সানডে নাইট এবং লাভ গুরু প্রোগ্রামের মাধ্যমে ।ইদানিং যোগ হয়েছে নিত্যবালা (Girl Everyday) যেটা চলে দিনের বেলা বাকি দুটি স¤প্রচারিত হয় রাতে ।লাভ গুরু প্রোগ্রামে একজন গুরু (নাকি গরু) থাকেন সাথে থাকে আমন্ত্রিত অতিথি ।আমন্ত্রিত অতিথি হয় কোন তরুন বা তরুনী ।তারা তাদের সফল/বিফল প্রেমের কাহিনী শোনান ।এবং পরে গরুটা বিভিন্ন ভুল ধরিয়ে দেন এবং অন্য শ্রোতাদের এ থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা বলেন ।এবং কিভাবে ভালবাসার নামে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ককে আরও পাকাপোক্ত করা যায় তার বিভিন্ন টিপস দেন ।আগে রেডিওতে শুনতাম বিভিন্ন মানুষদেরকে আনা হতো যারা দিনে একবেলা খাবার ও খেতে পারত না। এখন অনেক স্বচ্ছল ।তাদের সফলতার কাহিনী শুনানো হতো অন্য মানুষদেরকে উৎসাহী করার জন্য ।আর এখন ঋগ চ্যানেলগুলো বিভিন্ন ধরনের কথা শুনিয়ে আমাদের তরুনদের কে উৎসাহী করছে ফ্রি মিক্সিং এ গা ভাসিয়ে দেয়ার জন্য ।স¤প্রতি Love Goru পদক্ষেপ নিয়েছে চল্লিশ উর্ধ্ব একজন মানুষকে তার প্রোগ্রামে রাখার এবং রাখছে ও ।যেটার মাধ্যমে অভিবাবক কে রাজী করানো হবে সন্তানদের ভালবাসার নামে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ককে মেনে নেয়ার জন্য ।কত জ্ঞানী মানুষ এই গরুটা সেই বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে অভিবাবক রাজী তো সব ঠিক ।আর সানডে নাইট প্রোগ্রামের কাজ হচ্ছে ফোন কলের মাধ্যমে তরুন তরুনীদের বিভিন্ন ধরনের আকৃষ্ট করার টিপস শিখানো ।বিশেষ করে তরুনীরা যখন ফোন করে তখন সমাজের নতুন আইডল RJ রা খুব উৎসাহের সাথে কথা বলে এবং কথা দীর্ঘায়িত করে ।শুধু তাই নয় তারা তরুনীদের সাথে অনেক অশ্লীল আবেগ প্রকাশ করে থাকে ।এভাবে চলে গভীর রাত পর্যন্ত ।আর অন্য দিকে অন্যান্য চ্যানেল গুলির এ একই অবস্থা, রাত যত গভীর হয় নষ্টামীর জগৎ তত সম্প্রসারিত হয় ।
রেডিও টুডে বাংলাদেশের প্রথম চ্যানেল হয়েও রেডিও আমার বা ফুর্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছে না ।তাই তারা ও শুরু করে দিয়েছে তাদের RJ নিরবের নেতৃত্বে প্রতি রবিবার রাতে স্পেশাল আয়োজন সেটাতে সেলিব্রেটি হয়ে আসে অনেক তরুনী এবং তাদের সাথে আড্ডা চলে গভীর রাত অবদি ।তরুনদের নষ্টামীর দিকে আকৃষ্ট করার জন্য টুলস হিসেবে তরুনীদের ব্যবহার ।সম্প্রতি শুনলাম রেডিও টুডে নাকি ভারতীয় চ্যানেল MTV এর KICKASS (পশ্চাদে লাত্তি) এর আদলে একটা প্রোগ্রাম শুরু করতে চাচ্ছে যেটা ঐ সানডে নাইট ও লাভ গরুর চেয়ে ভয়াবহ ও জঘন্য।
তরুন সমাজ এবং অভিবাবকদের কাছে আমাদের প্রশ্ন প্রেম করা, ছ্যাকা খাওয়া তারপর মদ, গাজা, ইয়বা, আত্মহত্যা এটাই কি একজন মানুষের জীবন? এটাই কি হওয়া উচিত তরুন তরুনীদের জীবনের উদ্দেশ্য? বাস্তবতা হচ্ছে এই ধরনের এফ.এম চ্যানেলগুলি তাই শিখাচ্ছে আমাদের তরুনদের কে ।বছর দশেক আগে যেখানে প্রেম করাটা ছিল নষ্ট ছেলেদের কাজ ।এখন যুগের পরিবর্তনে নষ্টামীর জায়গাটা দখল করে নিয়েছে স্মার্টনেস শব্দটা ।যার একজন গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড আছে সেই এখন স্মার্ট ।শুধু তাই না সত্যিকারের স্মার্ট হতে হলে আজকের তরুনকে হতে হবে পাশ্চাত্যের দেহ সর্বস্ব ফ্রিমিক্সিং কালচারের একনিষ্ট এবং পরিপূর্ণ অনুসারী ।
তরুনরাই হচ্ছে সমাজ পরিবর্তনের মূখ্য কারিগর ।ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেশে ও বিদেশে আমরা দেখি এই সত্যিরই প্রতিফলন ।সুতরাং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ রুদ্ধকরতে হলে প্রথমেই তরুনদের বিবেক ও বিচার বুদ্ধিকে পঙ্গু করা প্রয়োজন ।এফ.এম কালচার আমাদের তরুনদের আজ সেই পথেই নিয়ে যাচ্ছে ।এখন আমাদের চিন্তা করার সময় এসেছে- তরুনদের আনন্দ-ফূর্তি, ভোগ-বিলাস আর ইন্দ্রিয়সুখের নেশায় মত্ত রাখা যায় ।তাহলে কার লাভ আর কার ক্ষতি?
ভোগবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত তরুন কি কখনও ভাববে নিরন্ন, নিপীড়িত মানুষের কথা? কে দাঁড়াবে নির্যাতিত মানুষের স্বপক্ষে? কে উম্মোচন করবে সাম্রাজ্যবাদী শুকুনের আসল চেহারা?