somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির পাতায় জ্বল জ্বল করে থাকা লিটন দা

১১ ই মে, ২০০৯ সকাল ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেইন সড়কের বাস ষ্টেশন থেকে লিটনদা’র বাড়ীর দুরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। তার পর আবার বাসে করে ছয় কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কলেজে যাতায়াত করতে হত। মেইন সড়কের বাস ষ্টেশনের কাছে ই আমাদের মান্দারী হাই স্কুল। হাই স্কুলে ই লিটনদা’র সাথে আমার প্রথম পরিচয়। সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি ধর্মীয় বিধি নিষেধের কারনে কিনা জানিনা, হিন্দু ছেলেদের সাথে কেন জানি মেলা মেশা হয়না। শুধু আমার ক্ষেত্রে না প্রায় সবার ক্ষেত্রে ই এমন টি লক্ষ করতাম। আমার গ্রামের তিন গ্রাম পরে লিটনদা’র বাড়ী। আর স্কুল ছুটি হলে বাড়ী ফেরার রাস্তা একই হয়ার কারনে আস্তে আস্তে দু একটা কথা বলতে বলতে তার সাথে আমার একধরনের বেশ ভাব জমিয়ে উঠে। এর পর থেকে প্রায় কথা বলা, হেন্ডসেক করা, স্কুলে যাওয়ার পথে আমার বাড়ির সামনের রাস্তায় আমার জন্য অপেক্ষা করা, কখনো কখনো বাড়ীর ভেতরে ঢুকে, ডাক দেওয়া, তার পর এক সাথে স্কুলে যাওয়া-আসা। ই ভাবেই আস্তে আস্তে সময়ের সাথে সাথে কথা হয়, চেনা হয়, জানা হয়। তার বাড়ীতে ও আমার আসা-যাওয়া হয়, সে ও আসে আমার বাড়ীতে। চলতে থাকে আমাদের ভাব। তার পর সেটা রুপ নেয় আরও গভীরে বন্দুত্বের সম্পর্কে। তার পর অতিবাহিত হয় হাই স্কুল জীবনের দীর্ঘ পাঁচটি বছর। সে সময় কার অনেক স্মৃতি অনেক কথাই মানে পড়ে, এত কিছু লেখতে মন চায় না, শুধু স্মৃতি রোমন্থনেই মজা পাই,। তার পর এক সময় হাই স্কুল শেষ করে কলেজে যাতায়াত শুরু করি, কলেজের ও প্রায় দু বছর শেষ হয়ে এল, ফাইনাল পরীক্ষা প্রায় এসে গেছে, আর কিছুদিন বাকি, সবার মাজে ই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি প্রস্তুতি ভাব। একদিন সকালে হঠাৎ করে দেখিযে লিটনদা আমার বাড়ীর সামনে একটা সাইকেল নিয়ে দাঁড়ীয়ে আছে আমার জন্য। কলেজে যাওয়ার জন্য আমি ও বের হয়ে এলাম, কিরে সাইকেল ফেলি কোথায়? কার সাইকেল এনেছিস? ও বলল্ল, না~~রে সাইকেল টা কিনেছি। কিছু টাকা নগদ দিয়েছি কিছু টাকা বাকীতে, পরে দেব বলছি। সে দিন আমি কি যে আনন্দিত হয়েছি, এত ফুলকিত হয়েছি যে, এই ভার্চুয়াল জগতে কিংবা লেখাতে সেটা কনো মতে ই ফুটিয়ে উঠাতে পারছিনা, এবং বুজানো ও সম্বভনা। তার পর থেকে সেই সাইকেলে করেই শেষ কয়দিন কলেজে আসা যাওয়া করেছি। এক সময় পরীক্ষা শেষ হল। পাস ও করলাম, ভার্সীটিতে একাউন্টিং এ অনার্স ভর্তি পরিক্ষা দিলাম, টিকে ও গেলাম, হলে থাকা সম্ভব হয়নি, এক আত্তিয়ের বাসাতে উঠলাম, লজিং মাস্টার হিসেবে। লিটনদা ভর্তি পরীক্ষায় টিকেনি বলে ও আমাদের কলেজে ই বি,কম ভর্তী হল। এই ভাবে মাস ছ’ য়েক অতিবাহিত হল, তার পর একদিন হঠাৎ করে একটা লিঙ্ক ফেলাম, দক্ষিন কোরিয়াতে লোক যাচ্ছে, ট্রেনার হিসেবে, বেতন ও ভাল, কিন্তু অনেক টাকা দিতে হয় ট্রাভেল ইজেন্সি গুলাতে। টাকা যোগাড় করাটা আমার কাছে সপ্নের মত মনে হল। টাকা মেনেজ করতে ওনেক কাঠ খড় ও পোহাতে হল। এক পর্যায়ে যাওয়ার দিন ক্ষন ঠিক হল, বাড়ী থেকে ছলে যাওয়ার আগের দিন সকালে, সেই লিটনদা আমার বাড়ীতে এসে হাজির, দুই বন্দু মিলে অনেক গল্প গুজব করলাম, খাওয়া দাওয়া করলাম, এক পর্যায়ে তাকে বিদায় দিতে, বাড়ীর সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম দুজনে, লিটনদা আমার হাতটাকে টেনে নিয়ে, আমার হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়ে বলল, ভাল থাকিস, এই বলে লিটনদা চলে যেতে থাকল। আমি নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, কি বলব বুজতে পারছিনা। আমার দু চোখের দৃষ্টি লিটনদা’র চলে যাওয়ার পেছনটাতে গিয়ে প্রতিবিম্বীত হয়ে আবার আমার ই কাছে ফিরে আসতে থাকল। আমার অজান্তে ই দু চোখের কোনাটা ভিজে উঠল। হয়তবা তেমনি লিটনদা’র ও~~~~~
~~~~চলবে~~~~
বিঃ দ্রঃ ( পরে জানতে পারলাম, লিটনদা’র প্রিয় সাইকেল টা দু হাজার টাকা বিক্রি করে আমাকে টাকাটা দিয়েছিল)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১০ সকাল ৮:২৫
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×