somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ

০৮ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার
বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ "
(ধৈর্য্য নিয়ে পড়তে পারেন)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯২১ সালে। এটি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। ১৯১২ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি ঢাকা সফরকালে কয়েকজন মুসলিম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ তার সঙ্গে দেখা করেন এবং বঙ্গভঙ্গ রদের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে অনুযোগ করেন। এই ক্ষতি পূরণের জন্য ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে লর্ড হার্ডিঞ্জ প্রতিশ্রুতি দেন।
সে সময় পূর্ব বঙ্গে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। পূর্ব বঙ্গ মুসলমান অধ্যূষিত বলে পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের জন্য উচ্চ শিক্ষার দরোজা খোলার সুযোগ ঘটে। পাশাপাশি পূর্ববঙ্গের অন্যান্য ধর্মের লোকজনের জন্যও এটা বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়। সকলেই এই প্রস্তাবটি স্বাগত জানায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন; এ ধরনের একটি অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক। কিছু কিছু কলাম লেখক নানা সময়ে সংবাদপত্রে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছেন। এছাড়া অনলাইন পত্রিকা, বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, গ্রুপে নানা বিরূপ মন্তব্য লক্ষ্য করা যায়।
২০০০ সালে মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন, বীরপ্রতীক, পিএসসি (সাবেক উপদেষ্টা, তত্বাবধায়ক সরকার) আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত 'আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা’ নামে একটি বইয়ে এই তথ্য জানান যে, ”১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়।” তিনি অভিযোগ করেন যে, রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।
কেউ কেউ আবার ভাষণ দিয়ে থাকেন - রবীন্দ্রনাথ নাকি কোলকাতায় এক সভায় দাঁড়িয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধীতা করে দম্ভভরে বলেছিলেন, “মূর্খের দেশে আবার কীসের বিশ্ববিদ্যালয়, তারা তো ঠিকমতো কথাই বলতে পারেনা !"
তবে যারা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ এর বিরোধিতা করেছিলেন তারা স্বপক্ষে দালিলিক কোন তথ্য প্রমাণ দেন নি। সেই সময়কার সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা এবং রবীন্দ্রনাথের সেই সময় যাদের সাথে উঠা-বসা ছিল তাদের কয়েকজন ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে।তাই অনেকেই সহজ সমীকরণ মিলিয়ে লিখেছেন তিনিও এর বিপক্ষেই ছিলেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা' বই এ লিখেছেন "শ্রেণীস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের (লর্ড কার্জন) ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন,তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশির ভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ"।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য এজেড এম আব্দুল আলী একটি পত্রিকায় এই অভিযোগটির বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, যারা রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি করছেন তারা তাদের রচনায় কোনো সূত্রের উল্লেখ করেননি। তবে ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে এই ধরনের একটি মনগড়া অভিযোগের উল্লেখ পাওয়া যায়।
বাস্তবতা হচ্ছে: ১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ তারিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোলকাতায়ই উপস্থিত ছিলেন না; তিনি ছিলেন শিলাইদহে। ১৯ মার্চ ১৯১২ (৬ চৈত্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) ভোরে কলকাতা থেকে সিটি অব প্যারিস জাহাজে রবীন্দ্রনাথের ইংল্যাণ্ড যাত্রার জন্য কেবিন ভাড়া করা হয়েছিল। তাঁর মালপত্রও জাহাজে উঠেছিল। সেদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে তাঁর ইংল্যান্ড যাত্রা স্থগিত হয়ে যায়।
আকস্মিকভাবে যাত্রা পণ্ড হয়ে যাওয়ায় খুব বেদনা পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি ২১ মার্চ ১৯১২ তারিখে ডাঃ দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্রকে লেখেন- ‘আমার কপাল মন্দ - - - - নইলে ঠিক জাহাজে ওঠবার মুহুর্তেই মাথা ঘুরে পড়লুম কেন? রোগের প্রথম ধাক্কাটা তো একরকম কেটে গেছে। এখন ডাক্তারের উৎপাতে প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। লেখাপড়া নড়াচড়া প্রভৃতি সজীব প্রাণীমাত্রেরই অধিকার আছে, আমার পক্ষে তা একেবারে নিষিদ্ধ।…’
২৪ মার্চ ১৯১২ বিশ্রামের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে রওনা হন। ঠাকুরবাড়ির ক্যাশবহিতে লেখা আছে, শ্রীযুক্ত রবীন্দ্র বাবু মহাশয় ও শ্রীযুক্ত রথীন্দ্র বাবু মহাশয় ও শ্রীমতি বধুমাতাঠাকুরাণী সিলাইদহ গমনের ব্যয় ৩৭৯ নং ভাউচার ১১ চৈত্র ১৫।।৩।. পরদিন সোমবার ১২ চৈত্র ২৫ মার্চ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ মৌচাক পত্রিকার সম্পাদক সুধীরচন্দ্র সরকারের ভগ্নী কাদম্বিনী দত্তকে এক চিঠিতে লেখেন—এখনো মাথার পরিশ্রম নিষেধ। শিলাইদহে নির্জ্জনে পালাইয়া আসিয়াছি।
রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যেই তাঁকে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করা হত না। ১৯৩৬ সালে তাকে ডিলিট উপাধী প্রদানের বিষয়েও বিরোধিতা হত। বরং তাঁকে দু'বারই হিন্দু-মুসলমান সকল শ্রেণীর ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আন্তরিকভাবে সম্মাননা প্রদান করেছে।
সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে কোথাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি এবং এ ধরনের কোন সংবাদ সে সময়কার পত্রিপত্রিকায় আসেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেছেন প্রফেসর রফিকুল ইসলাম। তিনি 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর' নামে বই লিখেছেন। সেই বইয়ের কোথাও রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন জানাচ্ছেন– রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট বার্ষিক অধিবেশনের (২৮-২৯ জুন, ২০১১) আলোচনায় আসে।
অধ্যাপক ফকরুল আলমের কথার অংশ থেকে লিখছি…”রবীন্দ্রনাথ একসময় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বিরোধী ছিলেন….কিন্তু….চারপাঁচ বছর পর তাঁর পুরানো পজিশন পরিবর্তন করে ফেলেছিলেন। ….অবশ্যই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গ্রহণ করেছেন বলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননায় এসেছিলেন।….যারা ইতিহাসকে এক জায়গায় রেখে দেয় তারা ইতিহাসকে বিকৃত করে, তারা সত্যকে বিকৃত করে।….” (কার্যবিবরণী, পৃ:১৭৮)।
১৯১২ সালের ২৮ শে মার্চ রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠি লিখেছেন জগদানন্দ রায়কে। জগদানন্দ রায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক, রবীন্দ্রনাথের পুত্রকন্যাদের গৃহশিক্ষক ও শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিক্ষক। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। চৈত্র ১৫, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ। রবীন্দ্রনাথ চিঠিটি লিখেছেন শিলাইদহ থেকে।
প্রশান্তকুমার পাল 'রবিজীবনী' গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডে জানাচ্ছেন, এদিনই তিনি একটি কবিতা লেখেন। কবিতার নাম—‘ স্থির নয়নে তাকিয়ে আছি’। এই কবিতাটি গীতিমাল্য কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ৪ সংখ্যক কবিতা। এর পর বাকী ১৫ দিনে শিলাইদহে থেকে রবীন্দ্রনাথ আরও ১৭টি কবিতা বা গান লেখেন। এর মধ্যে একটি গান—আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ। ১৪ চৈত্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ। রচনার স্থান শিলাইদহ। ১২ এপ্রিল, ১৯১২ শিলাইদহ থেকে তিনি কোলকাতায় রওনা হন
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাও সে সময় কিছু লোকজন করেছিলেন। এদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। কথা সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তাঁর 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ' নামক প্রবন্ধে লিখেছেন- লক্ষ্য করা যায় তিন ধরনের লোকজন বিরোধিতা করেছিলেন -
১. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে!
২. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান–তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে।
৩. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে হাজারে ২/১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে। হিন্দুদের সুবিধা বেশী হবে। পূর্ববঙ্গে মাদ্রাসা, প্রাইমারী এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়াশুনা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় হলে; যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চান নি।
মাওলানা আকরাম খান আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ করলে সাধারণ মুসলমানদের শিক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দানের ক্ষেত্রে অর্থের ব্যবস্থা করবেন না। মুসলমানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা অপেক্ষা প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর তিনি গুরুত্ত্ব আরোপ করেন।
আবদুর রসুল আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় মুসলমানদের পক্ষে ‘বিলাসিতা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তার মতে কয়েকজন ভাগ্যবানের জন্য অর্থ ব্যয় না করে বেশিরভাগ মানুষের জন্য তা ব্যয় করা উচিৎ।
তৎকালীন মুসলিমদের মতে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি অসাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান, ফলে বাংলার মুসলমানদের বিশেষ কিছু লাভ হবে না। বরং গরীব অথবা যোগ্য মুসলমান ছাত্রদের বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা এবং দু-একটি প্রথম শ্রেণীর কলেজ স্থাপন ইত্যাদি করলে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার সম্ভব হবে। চব্বিশ পরগণার জেলা মোহামেডান এসোসিয়েশন ১৯১২-র ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন। ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন?
শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তিতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্যার নীলরতন সরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদ নানাপ্রকার প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব নবাব স্যার সলিমুল্লাহ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে একদিকে টাঙ্গাইল ধনবাড়ির জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী এবং করটিয়ার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর (চাঁদ মিয়া) অর্থ, অন্য দিকে নবাব সলিমুল্লাহর জমি এবং শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হকের রাজনৈতিক প্রভাব অনন্য ভূমিকা পালন করে। হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু ঘটলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন। এদের মধ্যে ঢাকার বলিয়াদির জমিদার অন্যতম। জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তাঁর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে। জগন্নাথরায় চৌধুরীর নামেই ঢাকার জগন্নাথ কলেজের নামকরণ করা হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ফিলিপ জে হার্টজ প্রথম ভাষণেই বলেন, ‘এটি কোন মুসলিম কিংবা হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় হবে না, এটি সবার এবং প্রত্যেক মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।’ এ ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙ্গালী জাতির মননশীলতার প্রতীক হয়ে ওঠে।

© হারুন-অর-রশীদ।
(References: BBC, Kulda Roy: Fiction and Essayist / MMR Jalal: Freedom Fighter and Researcher.
রবীন্দ্রনাথ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- ড. মাহফুজা হিলালী)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ২:১২
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×