somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শামিম বনাম আইভি ... Shamim Osman Vs Ivy Fight Live Talk Show Full

১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

না’গঞ্জে চল দেখাইতেছি : শামীম ওসমান, চল কি করবি : মেয়র আইভী
একজন বললেন, ‘তুই নারায়ণগঞ্জে চল, তোরে দেখাইতেছি।’ সঙ্গে সঙ্গে অপরজনের জবাব, ‘চল নারায়ণগঞ্জ, কি করবি?’

না, এটা কোন সিনেমা বা নাটকের ডায়ালগ নয়। এটি টকশোতে ঘটে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের দুই কৃতি (!) সন্তান শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। প্রথমজন বর্তমান এমপি। দ্বিতীয় জন মেয়র সিটি করপোরেশনের।

মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে পুরো সময়ই উত্তেজনা ছড়িয়ে যান তারা। স্থানীয় রাজনীতির বৈরিতা তুলে আনেন টেলিভিশনের পর্দায়। একে অপরকে অভিহিত করেন বেদায়ব হিসেবে। এমনকি একে অপরের গ‍ায়ে হাত তোলার মতো নাটকীয়তারও জন্ম দেন তারা। তাদের মুখরা আক্রমণে বিব্রত হন অপর আলোচক ‘সাপ্তাহিক’ সম্পাদক গোলাম মোর্তজা ও উপস্থাপক শাকিল আহমেদ।

এমনকি অনুষ্ঠানের বিরতির সময়গুলোতেও তারা চড়াও হচ্ছিলেন একে অপরের ওপর।

গোলাম মোর্তজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বেশ কয়েকবার শামীম-আইভী বিরতিতে যেভাবে উত্তেজিত বাক্যবিনিময় করেছেন, শামীম ওসমান আইভীকে প্রায় আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছেন, তাতে স্টুডিওতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।’ শামীম ওসমান আইভীকে বলেছেন, ‘তুই নারায়ণগঞ্জে চল, তোরে দেখাইতেছি...।’ আইভী বলেন, ‘চল নারায়ণগঞ্জে... কী করবি?

ম‍ূলত নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার এর ঘটনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই তাদের মধ্যে বাদানুবাদের সূত্রপাত।

প্রথমেই আক্রমণে যান মেয়র আইভী। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদার একজনই সেটা এ কে এম শামীম ওসমান এবং তার সৃষ্টি আরও কিছু গডফাদার। নূর হোসেনকে প্রথমে গণমাধ্যমের সঙ্গে কেন কথা বলতে দেওয়া হলো না? গণমাধ্যমকে ফেস করল কে? নজরুলের মৃত্যুর পরও যখন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সাহেব ওখানে গিয়ে বক্তৃতা করলেন তখন উনিই বললেন, নূর হোসেনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তার পরদিনই উনি টেলিফোনে বলছেন, ‘তুমি চলে যাও’। তাহলে গডফাদার বলাটা তো আমার ভুল হয়নি। আমি আমার অবস্থানে অনড়।

আইভীর এমন বক্তব্যের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, সে গডফাদার মিন করেছে শামীম ওসমানকে। এটা ওর মিনিংয়ের ব্যাপার না। যাকে আমি দেখি করাপশনের একজন নায়িকা হিসেবে তার ব্যাকগ্রাউন্ড, তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সবকিছু মিলে তার প্রশ্নের উত্তর আমি সরাসরি তাকে অ্যাটাক করতে চাই না। এটা আমার রুচিতে বাধে। প্রতিটা জিনিসের একটা সৌজন্যতা, একটা ভদ্রতা, কথা বলার স্টাইল- সবকিছুর মধ্যে একটা মানুষের ব্লাডের পরিচয় পাওয়া যায়। সে এখানে বলল, ‘তাকে (শামীম ওসমান) গডফাদার মিন করি’। সঞ্চালকের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনি বলেছেন কী কী প্রমাণ আপনার কাছে আছে? উনি প্রমাণ দেননি। উনি কিছু কথা বলেছেন।

এ পর্যায়ে অনুষ্ঠান নিয়েও কিছুটা ‌উষ্মা প্রকাশ করেন শামীম ওসমান।

তিনি বলেন, আপনারা বইলা আনছেন এক গেস্টের নামে, আনছেন আরেক গেস্ট। কথাও শেষ করতে দেবেন না- তাহলে তো হবে না ভাইজান। এটা খুব সেনসিটিভ একটা জায়গা।

শামীম ওসমানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আইভী বলেন, ‘আমি তাহলে চলে যাব। এক্সকিউজ মি... এক্সকিউজ মি... সঞ্চালক সাহেব আমি জানতে চাচ্ছি আপনি কি উনাকে অন্যের কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছেন? তাহলে আমি উনার সঙ্গে বসব না।

নিজের কথা শেষ হতে না হতেই নাটকীয়ভাবে ফাইল হাতে উঠে দাঁড়ান আইভী।

সঞ্চালক আইভীকে ম্যানেজ করতে গিয়ে বলেন, উনি কিন্তু আলোচনা শুরু করেছেন। আইভী বলেন, নো... নো... উনি শুরু করে আবার বলেছেন উনাকে একজনের কথা বলে আরেকজনকে নিয়ে আসা হয়েছে... এ ধরনের একজন মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বসা যায় না।

জবাবে শামীম ওসমান বলেন, মিথ্যাবাদী তুমি। কিছু বলতে হয় অনুষ্ঠানের পরিচালককে বল, আমাকে বলবা না।

আইভী সঞ্চালকের ওপর খেপে গিয়ে বলেন, আপনি কেন আমার কথা উনাকে বলেননি? কেন মিথ্যা বলে উনাকে এনেছেন?

সঞ্চালক বলেন, তাকে বলা হয়েছে। আপনি যখন হ্যাঁ বলেছেন তখন থেকে তার ফোনটা বন্ধ ছিল। কিছুক্ষণ আগে উনি ফোনটা ধরেছেন। এখানে আসার পরপরই জানিয়েছি আপনার কথা।

পাশ থেকে শামীম ওসমান বলেন, আমি মোটেই জানি না। আইভীকে উদ্দেশ করে বলেন, তুমি উঠে যাচ্ছ উঠে যাও, বেয়াদবি করো না। ফেস কর।

আইভীও খেপে গিয়ে বলেন, ‘শামীম ওসমান। বেয়াদব ইউ।’ এবার সঞ্চালকের দিকে তাকিয়ে শামীম ওসমান বলেন, বুঝতে পেরেছেন তো ফ্যামিলির পরিচয়। এই ধরনের কালচারের মেয়ে... চাক্কু মারা ওহেদ আলীর নাতনি তো, চুনকার মেয়ে তো, এইজন্যই মুন্সীগঞ্জে ভেগে গিয়েছিল, চার বছর ছয় মাস ছিল ওখানে।

সঞ্চালক তাদের শান্ত করার চেষ্টায় গলদঘর্ম হয়ে পড়েন।

আইভী সঞ্চালককে বলেন, আপনি জানেন উনি কি বাজে লোক?

তার দিকে তাকিয়ে শামীম ওসমান ধমকের সুরে বলেন, ‘অ্যাই শাট-আপ, জাস্ট শাট-আপ।’

আইভী সঞ্চালকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হোয়াই? হোয়াই? সে কেন বলল আপনি তাকে মিথ্যা কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছেন?’ শামীম ওসমান কিছুটা স্বর নামিয়ে বলেন, মিথ্যা কথা বলি নাই। তুমি আর কোনো সময়, ফারদার এভাবে কথা বলবা না, বেয়াদবের মতো। জাস্ট বেয়াদব।

আইভী ফের বসেন। বলেন, আমি দুইটা কথা বলে চলে যাব। পরে বলেন, কথা বলব না কেন? অবশ্যই বলব। এই বলে আলোচনা শুরু করেন।

এ সময় শামীম ওসমান বলেন, আমি বলেছিলাম তার যে ন্যাচার এতে তো টেলিটক হয় না।

তিনি বলেন, নজরুল কীভাবে খুন হলো সে ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি হয়েছে। নূর হোসেনের সঙ্গে যদি আমার খাতির থাকত তাহলে তো আমি তাদের পিনপয়েন্ট করতাম না। কয়েক দিন পর পত্রিকায় এসেছে এই মেয়র ও রফিউর রাব্বি বলেছেন, র‌্যাব এই ঘটনা ঘটায়নি। কাকে সেভ করার জন্য? সে যদি খারাপ ছেলে হয় তাহলে নূর হোসেনকে কেন দুইটা ইমপরট্যান্ট কমিটির সভাপতি করা হলো। নজরুলকে তো দেওয়া হয়নি।

এ সময় আইভীর বিরুদ্ধে টেন্ডার নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলেন শামীম ওসমান।

আইভী বলেন, ওপেন ফ্লোরে কমিটি করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে কে কোন কমিটিতে যেতে চায় সেভাবে দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে কমিটি করে দেব এমন বিধান নেই। একাধিক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলে ভোটাভুটি বা সমঝোতার মাধ্যমে হয়।

এ সময় তিনি শামীম ওসমানের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন কাগজপত্র বের করেন।

শামীম ওসমান বলেন, এসব কাগজপত্রের কোনো ভিত্তি নেই। তিনিও প্যাকেট খুলে বেশকিছু কাগজ টেনে বের করে বলেন, ‘এই যে... এই যে দুর্নীতির প্রমাণ’। দুজনই যার যার কাগজপত্র আলোচনার টেবিলে রাখেন।

খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, সেই রাতে আমার ভাই মারা গেছে। সেই সুযোগ নিয়ে সিটি মেয়র নগ্নভাবে, সব মানবতার ঊর্ধ্বে উঠে কন্টিনিউয়াসলি আমার ফ্যামিলিকে দায়ী করেছে। বাধ্য হয়ে ভাইকে দাফনের পর আমার কথা বলতে হয়েছে। তিনি বলেন, ও (আইভী) যে করাপশনের কথা দুদকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, করাপশন যদি দুদকেই নিয়ে যাব শুধু তাহলে সেভেন মার্ডার নিয়ে আপনি-আমি আলোচনা করছি কেন? এজন্য আইনও আছে, পুলিশ আছে।

টকশোতে তাদের এমন বাকবিতণ্ডার খবর এখন দেশজুড়ে মানুষের রসালো আলোচনার খোরাক হয়ে উঠেছে।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×