somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি
এডওয়ার্ড মায়া

নাম তার তোরাব আলী ।
লেখালেখি যখন শুরু করলেন নাম দিলেন তূর্য আলী।
নামের মাঝেও যেন একটা কাব্যিক ভাব থাকে সেটাই ধরে রাখার চেষ্টা ছিল।
যেমন জরিনা থেকে জেরিন,জেরিস।
ব্লগ কমিউনিটি এবং ফেসবুকের শিল্প সাহিত্যের পেজ গুলোতে তূর্য আলীর ভাল চাহিদা ।সোস্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে লেখিলেখি করেন।লাইক/কমেন্টসের ভাল একটা পাঠক তৈরি হয়েছে। সুযোগটা তৈরি করে দিয়েছিল অভ্র।আভ্র প্রতি গোপনে ভীষণ একটা কৃতজ্ঞতাবোধ রয়েছে - বাংলা লেখার এরকম উন্মোক্ত সফটওয়্যার না হলে তূর্য আলীর মত অনেক লেখকের প্রতিভা বিকাশ ঘটানো কঠিন ছিল বৈকি।
সাধারন মানের একটা স্মার্ট ফোন দিয়ে ,অভ্র ইন্সটল করে ভাল বাংলা লেখা যায়।
তূর্য আলী ফেসবুকে গড়ে ত্রিশ/চল্লিশটা লাইক পায় ।দিন দিন তার লাইকের সংখ্যা বাড়ছে।আজকাল ফেসবুকে লাইকের সংখ্যা যাদের বেশি তাদেরকে বিভিন্ন সংগঠন দু/এক কথা বলার জন্য ডাকে ।সেখানে চা এবং কফির আয়োজন থাকে।
ফেসবুক চালিয়ে সংঘঠনের নেতা এবং লেখক।
আহা ! ভাবতেই দারুন আনন্দ।
কিন্তু তোরাব আলীর আজকাল মন খারাপ থাকে।
সহ ব্লগার,সহ ফেসবুকার সবার বই বের হচ্ছে।সবাই যার যার বইয়ের প্রচ্ছদ কভার ফটো দিচ্ছে।
লেখক লেখিকারা যেখানে নিজের লেখাকে পরিচ্ছন্ন প্রাধান্য দেবার কথা সেখানে তারা লেখক হিসেবে নিজেকে আত্নপ্রকাশ করার জোরপূর্বক চেষ্টা চালাচ্ছেন। লেখায় শিল্প-সাহিত্যের মান আছে কিনা সেখানে অনেকের নজর নেই।
ভাব এরকম-রবীন্দ্রনাথ,কাজী নজরুলের পর আমি একমাত্র লেখক!
চারপাশের এহেন লেখক/লেখিকা দেখে তোরাব আলীর খুব ইচ্ছে, তার একটা বই প্রকাশ হোক।
জাতীয় গ্রন্থমেলায় গাছের ছায়া তলে বসে তরুণ তরুণীদের অটোগ্রাফ দিবেন।সে ছবি পত্রপত্রিকায়,সোস্যাল নেটওয়ার্কে ভাইরাল হবে।
ওহ!
ভাবনাতেই মনে হয় পৃথিবীর সকল আনন্দ।
তারপর
ইচ্ছারা শুধু দীর্ঘশ্বাস দেয়।
তোরাব আলীর দীর্ঘশ্বাস বেশিদিন থাকেনি ।
কিছুদিন আগে এক প্রকাশকের সাথে আলাপ হয়েছিল ।সেই প্রকাশক লেখার পাণ্ডুলিপি নিয়ে তার অফিসে যেতে বলেছেন।
প্রকাশক আগে টুকটাক লিখতেন এখন নিজেই প্রকাশনা সংস্থা খোলেছেন ।বড়লোক বাবার টাকা পয়সা থাকলে যা হয় আর কি ।
নিজেই লেখক ,নিজেই প্রকাশক।
আবার দেখা গেছে কতক নব্য লেখক লেখিকা নিজেরাই প্রকাশক। বই প্রকাশের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে তারা অনেকটা মুক্ত।
তাদের প্রত্যেকের বই তাদের প্রকাশনী থেকে বের করছে।
নি:সন্দেহে ভাল উদ্দ্যেগ।সেখানে তারা সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করে থাকে।আলাপ,আলোচনা হয় ।

তূর্য আলী নিজের ব্লগ,সোস্যাল সাইট এবং নিজের হার্ড ড্রাইভ থেকে জীবনের সব লেখা টেখা নিয়ে একদিন প্রকাশকের কাছে হাজির হলেন।
প্রকাশকের অফিসে পৌছে রিসিপসোনিষ্টে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
-প্রকাশক সাহেবের সাথে দেখা করতে আসছি।তিনি আমাকে আসতে বলেছিলেন।
-স্যার আপনার নাম?
- তোরাব আলী সরি উনাকে বলুন তূর্য আলী,এই নামেই তিনি আমাকে চিনবেন।
সুন্দরী রিসিপসোনিষ্ট মুচকি হাসি দিয়ে বললেন
-আচ্ছা তূর্য সাহেব আপনি বসেন।স্যার মিটিংয়ে আছেন।মিটিং শেষ হলে আপনাকে ডেকে পাঠাব।
কিছুক্ষন বসে থাকার পর ডাক পড়ল ।
একটি চেয়ার টেনে তূর্য আলী প্রকাশকের সামনে বসলেন।
-কই দেখি আপনার পাণ্ডুলিপি গুলা প্রিন্ট করে এনেছেন ত?
-জী ভাই এনেছি ।
-শুনেন পান্ডুলিপি যাই হোক, ৫ ফর্মার বই: সাইজ : ৯×৬ ইঞ্চি (৮০ পৃষ্ঠা) ভিতরে ভাল বিদেশি কাগজ ,প্রচ্ছদ বাঁধাই টাধাই মিলিয়ে
খরচ পড়বে ১০০ কপি ২০ হাজার টাকা - প্রকাশের পুরো টাকাটা আপনাকে দিতে হবে!বই বিক্রি হোক বা না হোক ।
-প্রকাশক সাহেব ।টাকাটুকা যদি ম্যানেজ হত অনেক আগে লেখক হতে পারতাম ।
- তূর্য সাহেব আমরা হলাম টেষ্টার –বই প্রকাশের পর আপনি হয়ে যাবেন ষ্টার ।
আসলে মিয়া আপনি আমার পরিচিত তাই একটু খোলাখোলি ভাবে বললাম। আপনারা নতুন লেখক ।টেকা টুকা দিবেন ।সময় মত বই প্রকাশ হয়ে যাবে।অনেক প্রকাশক নতুন লেখকদের বই প্রকাশ করতে চায় না - আমরাই নতুনদের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি।
-জী ধন্যবাদ
তূর্য আলী প্রকাশকের কাছ থেকে বইয়ের পান্ডুলিপি গুলা নিয়ে বের হয়ে গেলেন।রাস্তায় পাশের টং দোকান থেকে একটা সিগারেট টানতে টানতে বাসার দিকে চলে আসলেন।

পরের দিন
তূর্য আ্লী গেলেন আরেকটা বড় প্রকাশনীর কাছে।
তাদের প্রকাশ করা বই বেস্ট সেলার হয় ।বড় প্রকাশনী সংস্থা।
নামি দামি প্রতিষ্ঠিত লেখকদের দ্বারা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় ।এই পাবলিশার্স থেকে বই প্রকাশ করে অনেক নব্য লেখক লেখিকা বড় আকারে নিজেদের আত্ন প্রকাশ করেছেন।
তারা এখন লেখক হিসেবে দেশের প্রথম সারির পত্রপত্রিকায় সামাজিক,সাষ্কৃতিক,অর্থনীতি,সেক্সনীতি নিয়ে বড় বড় আর্টিকেল লিখেন।
অফিসে অনেকক্ষণ বসার পর তূর্য আ্লী প্রকাশকের রুমে গেলেন এবং সাথে করা আনা পাণ্ডুলিপি গুলা এগিয়ে দিলেন।
-প্রকাশক পান্ডুলিপিগুলা একটু নেড়ে টেরে দেখলেন।কিছক্ষন নীরব থাকার পর -
দেখুন তূর্য আলী আপনি যতই ভাল লিখেন টাকা পয়সা ছাড়া বই প্রকাশ করা সম্ভব না।
দুঃখিত বলেই প্রকাশক পাণ্ডুলিপি গুলা ফেরত দিলেন।
এই যে কিছুক্ষন আগে একজন ভদ্র মহিলা এসেছেন - তিনি লেখিকা । সম্ভবত দেশের বাইরে থাকেন। গ্রন্থমেলায় ভদ্র মহিলা একটি বই প্রকাশ করতে চান।টাকা নিয়ে উনার কোন সমস্যা নেই।ভদ্র মহিলা চান-তার একটি বই প্রকাশ হোক ।
বই বিক্রি এবং প্রচারণা সব দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।
আগামীকাল বিখ্যাত লেখক পিনিকচন্দ্র মেট্রোপাধ্যায় এবং বেস্ট সেলার লেখক মান্যশীল হক উনার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে। শুধু তাই নয় দেশের বিখ্যাত অভিনেত্রী ছ্যাবলাজাবীন এবং একজন মন্ত্রী দিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের রিভিউ লেখা হবে।
প্রকাশক কে থামিয়ে তূর্য আলী বলেন
- মন্ত্রীর এত সময় কই রিভিউ লেখার?
-আরে মিয়া রিভিউটা লিখেছি আমি ! নাম হবে মন্ত্রীর।পাবলিক ডিমান্ড ভাই ।পাবলিক লুটে পুটে খাবে।বই হয়ে যাবে বেস্ট সেলার।
-ওহ বোঝেছি।
প্রকাশক সাহেব একটু কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে ...
-আপনারা ত মিয়া প্রকাশককে টাকা দিয়েই খালাস।আমাদের যে বই প্রকাশের জন্য কত শ্রম দিতে হয় তা জানেন।গত রাতে ত ঘুমানো হয়নি- দেশের বড় লেখক চুশীল মিয়া বই প্রকাশের স্বত্ব অন্য আরেকটি প্রকাশক ভাগিয়ে নিয়েছে।
আপনিও একদিন বড় লেখক হলে - আপানার কাছে প্রকাশকের লাইন লেগে যাবে।
-তূর্য আলী সাহেব আপনি ভাবেন ! ভাবেন।
এমন সুযোগ পাবেন না।বই প্রকাশ করতে গেলে টাকাটা বড় করতে দেখতে হয় না।
আরে মিয়া বই প্রকাশের পর ত আপনি লেখক হয়ে যাবেন।বিভিন্ন সাহিত্য সভায় আপনাকে ডাকা হবে।
-আচ্ছা প্রকাশক ভাই - মান্যশীল হক বেস্ট সেলার লেখক হয় কিভাবে ?উনি সাহিত্যের স জানেন না।উনার এত বই প্রকাশ হইছে এগুলা কিনল কে ??? নাকি নিজের বই নিজেই কিনে নিয়েছেন??
প্রকাশক আমার কথার জবাব না দিয়েই আরেকজন নব্য লেখিকা কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।যার গত বই মেলায় তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছিল ।
তূর্য আলী প্রকাশকের রুম থেকে বের হয়ে আসতেই ।প্রকাশক অফিসের স্টাফদের মুখে থেকে শুনতে পেলেন।
-বোঝলেন রহিম সাব আজকাল দেয়া-নেয়া ব্যাপারটা না থাকলে কাজ হাসিল হয় না।
তখনি প্রকাশকের রুম থেকে উচ্চ স্বরে নব্য লেখিকার হাসি ভেসে আসে।
তূর্য আলী প্রকাশকের অফিস থেকে বের হয় ।
ক্লান্ত শরীর আর কিছু ভাবতে পারে না।এক মুড়িওয়ালা পাশ দিয়ে যেতেই , ডাক দেন।
-অই মুড়িওয়ালা ১০ টাকার ঝালমুড়ি দেও ?
তূর্য,মুড়ির ঠোঙায় একটা ইংরেজী লেখা দেখতে পায়।
Be writer does not matter,Money does matter !


(লেখাটি কাউকে ছোট করা এবং আত্নসম্মানবোধে আঘাত করে এমন কাউকে ভেবে লেখা হয়নি।লেখাটি কোন ব্যাক্তির সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ি নয় - )
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×