ছোট একটা গল্প দিয়ে পোস্ট শুরু করছি, ভার্সিটিতে বন্দে আলী মিয়া নামের কট্টরপন্থী এক নেতা ছিলেন। উনি কারও কথা শুনতেন না, কাউকে মানতেনও না। আর কিছু বলা হলে কথা শেষ হওয়া মাত্রই দুই হাত মুঠি করে চিৎকার দিয়ে উঠতেন, "মানি না, মানবো না.."। যখন ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দ্বন্দ মিটমাট করার জন্য দুই পক্ষকে বসানো হতো, তখনও তিনি ওই একই বুলি আওড়ে যেতেন। তো একবার এরকম একটা বৈঠকে তাকে বসিয়ে বলা হলো, "আচ্ছা বন্দে আলী মিয়া, তুমি তো দেখছি কিছুই মানো না, তোমার বাবার নাম যে আবদুল জব্বার, এটা মানো তো?" সে ঝোকের মাথায় বলে ফেললো, "মানি না মানবো না.."
ব্লগে আমরা অনেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের বিরোধিতা করি। এটা করার যথাযত কারণ-ও আছে, টিপাইমুখ-ফেলানী-সীমান্তহত্যা সহ কিছু কিছু ইস্যু আছে যেগুলোতে ভারতের বিরোধিতা করা আমাদের জাতীয় চেতনার অংশ। এসব ইস্যুতে বিরোধিতা না করলে আমাদের নিজেদের দেশের বিরোধিতা করা হয়, ভারতের দালালি করা হয়।
কিন্তু আমাদের এই ভারতবিরোধী চেতনাকে ব্যাবহার করে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেটাও দেখার বিষয়। কোনও মিথ্যা প্রচারনায় টিনের চশমা পড়ে আমরা যদি বন্দে আলী মিয়ার মতো মানি না স্লোগান আওড়াতে থাকি তাহলে সেটা আমাদের জাতীয়ভাবে অন্ধ করে দেয়।
এবার আসছি মূল প্রসঙ্গে, গতকাল সামুতে ঠিক এই ব্যাপারটি-ই ঘটতে দেখলাম। অনেকেই মূল অভিযোগটা তলিয়ে না দেখেই কমেন্ট করছেন। আমি এই পোস্টটার কথা বলছি,
মা ও মাতৃভূমির মান সম্মান রক্ষা ভ্যাগিস কমলা রঙ ব্যবহার করে নি !!! ব্লক খাওয়া পুষ্ট দিলাম নাকি কে জানে ?/!
সেখানে জাতীয় দলের একটা ছবি দেয়া হয়েছে,
ভারতের মতো নীল জার্সি পরা এই বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমকে দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছেন বাংলাদেশের জার্সি থেকে লাল সবুজ বিদায় নিয়েছে। আমি নিজেও এটা দেখে ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষুদ্ধ হয়েছিলাম, আমরা গ্যালারিতে বসে লাল আর সবুজের পতাকা উড়াবো, আর সাকিব-তামিমরা খেলবে নীল রঙের একটা অদ্ভুত জার্সি পড়ে?? এটা কি সম্ভব??
পরবর্তীতে আসল ঘটনা যেটা জানলাম সেটা হলো,
উপরে আমরা যে ছবিটা দেখেছি সেটা মূল জার্সি না, প্রাকটিসের জার্সি। কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে টিভিতে টাইগারদের ট্রেনিং এর উপর রিপোর্ট দেখলে খেয়াল করবেন ওরা অন্য একটা জার্সি পড়ে। এটা আগে ছিলো হলুদ, বিশ্বকাপের পর থেকে প্রাকটিসের জন্য যে জার্সিটা আছে সেটা নীল।
কিন্তু জাতীয় দলের মূল জার্সি এখনো লাল সবুজ-ই আছে, চিরকাল থাকবে।
আর যেকারণে বিতর্কটা উঠেছে তার আসল কাহিনী হলো, মূল জার্সি ইতোমধ্যে প্যাক করে ফেলা হয়েছে, ফটোসেশনটা তাই প্রাকটিস জার্সি পড়েই করা হয়েছে, কিন্তু তার মানে এই না যে এটাই বাংলাদেশ টিমের মূল জার্সি।
আসন্ন সফরে টাইগাররা যে জার্সিটা পড়ে মাঠে নামবে, সেটা হচ্ছে এইটা:
নীল জার্সির গুজবটা এখনো ফেসবুক আর ব্লগ সবখানেই ছড়িয়ে গেছে, তাই এটা নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান হবে এই আশায় পোস্টটা দিলাম।
আসন্ন সিরিজে টাইগারদের জন্য শুভকামনা রইলো..চলো বাংলাদেশ..